Wednesday, June 12, 2019

▌বিবাহ : কিছু পরামর্শ - [ করনীয় ও বর্জনীয় ]


❒ প্রারাম্ভিকা,
বর্তমানে যুবক যুবতীদের অবস্থা হল, তারা পাপাচার করেও পরিতৃপ্ত হচ্ছে না বরং পাপাচারের নিত্য-নতুন পদ্ধতি খুঁজে বেড়াচ্ছে। একদল যুবক যখন নতুন নতুন পাপের মাধ্যমে একদিনে একাধিক বার মহান আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে তুলছে, অন্যদিকে আরেকদল যুবক এই পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার জন্য নিয়মিত নফসের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে!
.
দ্বীনের পথে অটল থাকার পাশাপাশি হারাম রিলেশন থেকে বেঁচে থাকার জন্য বিবাহের কোন বিকল্প নেই! বিয়ের বিকল্প শুধুই বিয়ে।কিন্তু আমরা সবচেয়ে বেশি ভুল করি বিয়ে করার ক্ষেত্রে পাত্রী নির্বাচনে, যার খেসারত সারা জীবন দিতে হয়!অভিভাবকের হরেক রকমের চাহিদার জাঁতাকলে চাপা পড়ে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বিয়ে করে নিলেও পরবর্তীতে বনিবনা না হওয়ার কারণে অহরহ তালাক হচ্ছে!
তাই প্রথমে নিজেকে এবং পরে ভাইদেরকে বলবো - আপনি কেমন সন্তান আপনি দুনিয়াতে রেখে যেতে চান প্রথমে এটা ঠিক করুন। তাহলে সন্তানের মা নির্বাচন করা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ যেরকম মা দিবেন,  সেরকম সন্তান পাবেন! আপনি মাদারগাছ  রোপন করে খেজুর খাওয়ার আশা করা মানেই অরোণ্যরোদন! মনে রাখবেন একটি খামখেয়ালিপনা সারা জীবন,কবর, আখিরাতের কান্না!
.
❒ করনীয় ও বর্জনীয় :
.
🔸উচ্চশিক্ষা:
উচ্চশিক্ষিতা স্ত্রীদের অধিকাংশই স্বামীদের মুল্যায়ন করেনা! এত পড়ালেখা করার পরেও স্বামীর সংসারে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখাকে অনেকটা জেলখানার মত মনে করে! যার ফলে সংসার জীবনে পর্দাপন করলেও চাকুরীর নেশাটা কাটে না! এখন কথা হচ্ছে আপনি তো আর আপনার স্ত্রীর কামাই খাবেন না অথবা তার উপর নির্ভরশীল নন, তাই আপনার স্ত্রীর শিক্ষাগত ডিগ্রী আপনার কাজে আসবে না!
অনেকেই বলে থাকেন, বাচ্চাকে পড়ানোর জন্য শিক্ষিত মেয়ে দরকার! আমি তাদের জিজ্ঞেস করি,  বাচ্চাকে পড়াতে  হলে কি মাস্টার্স পাশ মা লাগবে? আপনার বুঝা উচিত হাইস্কুলেও মাস্টার্স পাশ টীচার অপ্রতুল!
মুল কথা হচ্ছে, স্ত্রীর ডিগ্রী আপনাকে সুখী করবে না! আপনার অভিভাবক হয়ত ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,ক্যাডার পুত্রবধূ পেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর ফেলতে পারেন কিন্তু বিশ্বাস করুন  ওতে প্রকৃত সুখ নেই  বরং হাজারটা উদাহরণ পাবেন এগুলোই (উচ্চশিক্ষা, ডিগ্রী, অত:পর চাকুরী) অশান্তির কারণ হয়েছে!
.
🔸বংশ :
বংশ ভাল হওয়া আবশ্যক! কিন্তু বংশ মানে এই নয় যে,তা খান-চৌধুরী  এজাতীয় কিছু হতেই হবে!
দাদা ব্রিটিশ আমলে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন কিনা, বাবা সিএসপি অফিসার ছিলেন কি না, চৌদ্দ গুষ্ঠি পাঠান কি না, আত্মীয়দের দুনিয়াবী যোগ্যতা কেমন  ইত্যাদি বংশ দেখার প্যারামিটার না! বংশ দেখার মিটার হল দ্বীন। আপনি পাত্রীর পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের দ্বীনদারিত্ব দেখুন, তাদের খান্দানে দ্বীনী মেজাজ আছে কিনা, ধরে নিতে পারেন মেয়ের মাঝেও দ্বীনের পাবন্দি আছে। দুই তিন পুরুষ আলিম বা আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে আলিম/দ্বীনের বুঝসম্পন্ন লোক আছে কিনা , এগুলো দেখার বিষয়! তবে এটা জাস্ট ধারণার জন্য!
.
🔸সৌন্দর্য :
রূপ একটা ভাইটাল বিষয়! যেহেতু আপনি বিভিন্ন আজেবাজে ফিল্মে আসক্ত নন অথবা নজরের খিয়ানত করেন নি তাই  স্ত্রী সুন্দরী হলে এটা আপনার জন্য প্লাস পয়েন্ট! কারণ, আপনার ঘরেই চাঁদ আছে, তাই বিয়ের পরে রাস্তায় মোমবাতি দেখার আগ্রহ কমে যাবে!  তবে এটা আপনাকে ক্ষণিকের তৃপ্তি দিতে পারলেও কিন্তু চোখের শীতলতা এর মাঝে নেই, যদি স্ত্রী বেদ্বীন হয়!  আল্লাহ না করুন, বউয়ের আগুনঝরা রূপ লাবণ্যই হয়ত আপনার বরবাদির কারণ হতে পারে। চিন্তা করূন তো, বিয়ে করলেন আপনি অথচ কিছুদিন পরে পালিয়ে গেল অন্য কারো সাথে কিংবা পরকীয়াতে লিপ্ত হল, সেটা আপনার জন্য কতটা লজ্জাজনক!
তাই আল্লাহভীরু নারী কালো হলেও সুশ্রী নারী থেকে হাজার গুণ উত্তম! তবে একসাথে যদি দুইটাই পেয়ে যান তাহলে তো আপনার 'চাঁন কপাল'!
.
🔸 যা অগ্রাধিকার দিবেন :
প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
“মানুষ সাধারণত নারীদের মাঝে চারটি গুণ দেখে বিবাহ করে, তার ধন-সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং দ্বীন। (কিন্তু এমন করবেনা), তোমরা বিয়ের জন্য দ্বীনদার নারীদেরকে অগ্রাধিকার দাও। তোমরা যদি দ্বীনদার নারীদেরকে অগ্রাধিকার না দাও, তাহলে অবশ্যই তোমাদের দুই হাত ধূলায় ধূসরিত হবে (অর্থাৎ, নিশ্চয়ই সেটা তোমাদের জন্য মন্দ ও অকল্যান ডেকে আনবে)।
--- [ সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাতঃ ৩০৮২, ৩০৯০, ‘বিবাহ’ অধ্যায় ]
.
বিয়ে যেহেতু বারবার করবেন না তাই নিবিড়ভাবে মেয়ের দ্বীনদ্বারিত্বকেই প্রাধান্য দিন! এক্ষেত্রে "ছাড়" দিলে ফিউচারে পস্তাবেন! "মাইয়া দেখতে জাক্কাস,  বিয়ের পর মানুষ করে ফেলবো" এজাতীয় চিন্তাভাবনা শয়তানের ধোঁকা মাত্র! পরে একই খাটে থাকতে থাকতে নিজেই "আফ্রিকান জংলী" হয়ে যাবেন!
.
"নামাযী মানেই দ্বীনদার" সবসময় এটা নাও হতে পারে!আমাদের সমাজে নারীদের নামায পড়ার চেয়েও পরিপূর্ণ পর্দা করা অনেক কঠিন! বোরকা পড়লেও অধিকাংশ নারী সেটাকে আন্তরিকভাবে আল্লাহর বিধান হিসেবে মেনে নিতে পারেনি! স্টাইলিশ বোরকার দৈনদশার কথা কি আর বলবো! দেখলে মনে হয় উনারা লাক্স সুন্দরী কম্পিটিশনে ফার্স্ট হওয়ার জন্য রাস্তায় নেমেছে!
.
🔸সর্বশেষ পরামর্শ  :
নিজে আধা দ্বীনদার হয়ে প্রাক্টিসিং মুসলিমাহ খুঁজতে যাইয়েন না অথবা প্রাক্টিসিং মুসলিম হয়েও আধা দ্বীনদার খুঁজিয়েন না! কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “তোমরা বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন কর এবং ‘কুফু’ (সমতা) দেখে বিবাহ কর।”
- [ ইবনু মাজাহ - ১৯৬৮ ]
দুনিয়াবী বিষয়গুলো যেমন মালসম্পদ, আভিজাত্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ডিগ্রী এগুলো যেন আপনার চাইতে বেশি না হয়। পরে সমস্যা হতে পরে।
"আপনার লেভেল থেকে ঠিক একটু কম বা কমসে কম সমতা যেন থাকে, বেশি যেন না হয় " এই নীতিটা  সবসময় মাথায় রাখবেন!
জেনারেল শিক্ষিতরা আলিমাহ কমপ্লিট মেয়ে বিয়ে না করাই সাবধানতা! এটা ইলমের কুফু! পক্ষান্তরে, জেনারেল লাইন থেকে উঠে আসা কোন মেয়ে দাওরা পাশ মুফতী বিয়ে না করাও সাবধানতা! সমস্যা হতে শুনেছি, হলেও কিছু করার নেই!
আমার এই কথাগুলো মানতে কষ্ট হতে পারে, কিন্তু এটাই বর্তমান বাস্তবতা, ভোক্তভোগীরা ভাল বলতে পারবেন! তবে ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু নয়! বহু ব্যতিক্রম আছে। এটা জাস্ট প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে আপাত সতর্কতার একটা ফর্মুলা বললাম আর কি!
আপনি গ্রহণও করতে পারেন আবার বর্জনও করতে পারেন! জায্বাকুমুল্লাহু।
.
❒ সংকলন :
আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী,
আখতার বিন আমীর!
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

Tuesday, June 11, 2019

অনুপ্রেরণায় উম্মুল মু’মিনীন ‘খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা এবং একটি বেয়াদবীমুলক বক্তব্যেের অপনোদন।

.

❒ এক,

পৃথিবীর বুকে কিছু মহিয়সী রমণীদের আবির্ভাব হয়েছে যাদের তুলনা কেবল তারাই। অসাধারণ তাদের জীবন, অনন্য তাদের আদর্শ, অতুলনীয় তাদের চরিত্র, ফাজায়েল ও মানাকিব তাদের আকাশচুম্বী! তাদের প্রশংসা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ও তার রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । তারা নিরংকুশ ভালবাসা, কঠোর পরিশ্রম ও দাসত্বের মাধ্যমে জয় করেছেন স্বীয় রবকে। তারা নিজের জীবনকে ইসলামের জন্য ব্যয় করে গেছেন। সর্বদা আল্লাহর ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থেকেছেন। সবর-শোকরের সাথে জীবন কাটিয়ে গেছেন। কুরআনুল কারীমকে সাথী বানিয়েছেন। হাদীস চর্চাকে জীবনের অনুষঙ্গ বানিয়েছেন!  সব কিছুই করেছেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে!
.

আজকে আমরা তেমনি একজন মহিয়সী নারীকে নিয়ে আলোচনা করব যার নাম উম্মুল মুমিনীন (মুমিনগণের মা) খাদীজাতুল কুবরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা! যিনি জান-মাল দিয়ে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর পাশে থেকে ইসলামের ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছেন। ইসলামের সূচনালগ্নে অর্থ সম্পদ দিয়ে যিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে
সহায়তা করেছেন! তিনিই ছিলেন সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী নারী।  রাসুল ﷺ যখন ইসলাম প্রচারের কারণে মক্কার মুশরিকদের থেকে নির্যাতিত অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়েছিলেন তখন তিনিই একমাত্র তার পাশে ছিলেন। তিনিই তাকে সাহস উৎসাহ প্রদান করেছিলেন।
.
রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন প্রচণ্ড দু:খ, কষ্ট ও দুর্দশার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছিলেন তখন তিনিই তার পাশে ছিলেন। প্রচন্ড দুর্ভিক্ষের সময় যখন জীবনধারণের জন্য গাছের পাতা ছাড়া আর অন্য কিছু ছিল না তখনও তিনি স্বামীর সাথে হাসি মুখে সকল কষ্ট সহ্য করে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ চারজন জান্নাতি রমণীর একজন।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন -

عن ابن عباس رضى الله عنه قال خط رسول الله صلى الله عليه وسلّم فى الارض اربعة خطوط قال اتدرون ما هذا؟ فقالوا الله ورسوله اعلم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افضل نساء اهل الجنة خديجة بنت خويلد و فاطمة بن محمّد واسية بنت مزاحم امراة فرعون ومريم ابنه عمران رضى الله عنهن رواه احمد ابن حبّان و قال الحاكم وقال الحاكم هذا خديث صحيح الاسناد

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন যমীনের উপর চারটি রেখা অংকন করলেন এবং বললেন, এটা কি তোমরা জানো? সাহাবায়ে কেরাম জবাব দিলেন, আল্লাহ্ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন, জান্নাতি রমণীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন খাদীজাহ বিনতে খুয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ, আছিয়া বিনতে মাযাহেম  (ফেরাউনের স্ত্রী) এবং মরিয়াম বিনতে ইমরান (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুন্না)।
--- [আহমদ, ইবনে হিব্বান ]
.

পবিত্র কুরআন নাযিলের সময় রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যখন হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানে মগ্ন ছিলেন, তখনকার সময়ে প্রতিদিন খাবার তৈরী করে পর্বতের চূড়ায় পৌঁছে দিতেন এই মহিয়সী নারী। জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম অনেক সময় উনাকে অভিবাধন জানাতেন।

আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদিন জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম রাসূলুল্লাহ  (ﷺ)-এর
দরবারে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! খাদীজাহ আপনার জন্য তরকারী, খাবার এবং পানীয় ভর্তি একটি পাত্র নিয়ে আসছে। যখনই আপনার নিকট এসে পৌঁছবে তখনই তার রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার এবং আমার পক্ষ হতে সালাম পেশ করবেন এবং সুসংবাদ দিবেন যে, তার জন্যে রয়েছে জান্নাতে মনিমুক্তা খচিত মহল, যাতে থাকবেনা কোন শোরগোল, আর না থাকবে কোন দুঃখ-কষ্ট।
--- [বুখারী- ৩০৬০, মুসলিম- ২৪৩২]

ভাবা যায়!? স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা উনাকে সালাম পাঠিয়েছেন!
.

❒ দুই,

আম্মাজান আই'শা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুা) ছিলেন রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) এর একমাত্র কুমারী স্ত্রী! রূপ, গুন, মেধা, প্রজ্ঞায় ছিলেন পরিপূর্ণ। একদা আমর ইবনে আস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ  (ﷺ)- কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার কাছে সবার চেয়ে প্রিয় কে?'
রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) বললেন : আ'ইশা।
আমর বললেন : পুরুষদের মধ্যে?
রাসুলুল্লাহ  (ﷺ) বললেন : আই'শার পিতা! 
--- [ বুখারী : ৩৬৬২]

খেয়াল করূন রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)- কে প্রশ্ন করা হল পুরুষদের মধ্যে আপনি কাকে বেশি ভালোবাসেন? উত্তরে তিনি বললেন, আইশার পিতাকে। অথচ তিনি চাইলেই বলতে পারতেন আমার সাথী আবু বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) -কে। কিন্তু তিনি বললেন আইশার পিতাকে। এখানেও আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) প্রতি উনার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
.

এবার আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র গল্প শুনুন! যিনি মারা যাওয়ার পরও আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) উনাকে ঈর্ষা করতেন।

.
উম্মুল মু’মিনীন ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, ‘‘আমি নাবী (ﷺ)-এর কোনো স্ত্রীর প্রতি এতো ঈর্ষা করিনি যতটা খাদীজাহ’র প্রতি করেছি (অথচ) তিনি (রাসূল ﷺ) আমাকে বিবাহ করার আগেই ইন্তিকাল করেছেন।  কেননা, আমি তাঁকে (রাসূল ﷺ) বারবার তাঁর কথা বলতে শুনেছি, এবং তাঁকে (খাদীজাহ) এই খুশির সংবাদ দেয়ার জন্য আল্লাহ তাঁকে (রাসূল ﷺ) বলেছেন যে, তাঁর জন্য একটি ক্বাসাবের প্রাসাদ থাকবে। এবং যখনই তিনি (রাসূল ﷺ) একটি বকরি যবেহ করতেন, এর একটি অংশ তিনি তাঁর (খাদীজাহ) বান্ধবীদের নিকট পাঠিয়ে দিতেন।’’
--- [ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬১৭৭ ]
.

একদা আইশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বসে আছেন রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- এর সাথে। এমন সময় কেউ একজন দরজায় কড়াঘাত অতপর  ভিতরে প্রবেশের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করল। আওয়াজ শুনেই রাসুলুল্লাহ  (ﷺ) চমকে উঠলেন!  এটা কার কন্ঠস্বর? মুহুর্তেই খাদীজার কথা মনে পড়ে গেল! আগন্তুক ঘরে প্রবেশ করলেন। রাসুলুল্লাহ  (ﷺ) তাঁকে দেখে বললেন, হায় আল্লাহ! এ তো হা'লা!'

উল্লেখ্য যে, হা'লা ছিলেন খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র বোন এবং উভয়ের কন্ঠস্বর একই রকম ছিল!

এই দৃশ্য দেখে আইশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র খুব ইর্ষা হলো। রাসুলুল্লাহ  (ﷺ) মৃত স্ত্রীকে এতটা ভালোবাসেন! স্ত্রীর জীবন ফুরিয়ে গেছে, কিন্তু স্ত্রীর জন্য স্বামীর ভালোবাসা ফুরায়নি। মৃত্যুর পরও তিনি তাকে ভুলতে পারছেন না!
--- [ বুখারী : ৩৮১০, মুসলিম : ২৪৩৭]
.

ইমাম আহ্‌মাদ ও তিরমিযী (রাহিমাহুমুল্লাহ) থেকে সংকলিত একটি হাদীসে রয়েছে ,
আম্মাজান আ'ইশা ( রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,
এমন অনেক দিন হয়েছে যে, খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) প্রশংসা না করে রাসুলুল্লাহ  (ﷺ) ঘর থেকে বের হন নি! একদিন এভাবে তিনি খাদীজার প্রশংসা করছিলেন! আমি আর সহ্য করতে না পেরে বলে উঠলাম, তিনি কী এমন ছিলেন? তাঁর চেয়েও উত্তম নারী দিয়ে কি আল্লাহ্‌ তাআলা আপনার স্ত্রীর স্থান পূরণ করে দেননি?

একথা শোনামাত্র রাসুলুল্লাহ (ﷺ) রাগত স্বরে বলেন,
'না, আল্লাহ্‌র শপথ, তিনি খাদীজার চাইতে উত্তম আর কাউকেই আমার জীবনে আনেননি। যখন সবাই আমাকে অস্বীকার করেছে, তখন সে আমার ওপর আস্থা রেখেছে। যখন সবাই আমাকে মিথ্যুক ডেকেছে, তখন সে আমাকে বিশ্বাস করেছে। যখন সবাই আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তখন সে, তাঁর সবকিছু দিয়ে আমাকে স্বস্তি দিয়েছে। আল্লাহ্‌ তা'আলা তাঁর মাধ্যমে আমার ওপর রহ্‌মত দিয়েছেন, আমাকে তাঁর থেকে সন্তান দান করেছেন।'

গৃহীত :
--- [আল্লামাহ সফিউর রাহমান মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ)  বি'রচিত সীরাহ্‌গ্রন্থ আর্‌-রাহীকুল মাখতুম থেকে]
.

আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)-এর দরবারে কোন হাদিয়া আসলে তিনি বলতেন, তোমরা এই হাদিয়া উমুক মহিলার ঘরে নিয়ে যাও কারণ তিনি আমার খাদীজার বান্ধবী। আবার কখনো বলতেন, তোমরা এই হাদিয়া উমুকের ঘরে নিয়ে যাও, কারণ তিনি আমার খাদীজাকে ভালবাসেন।

আবদুল্লাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আম্মাজান আইশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
"যখন রাসুলুল্লাহ  (ﷺ) আম্মাজান খাদীজাতুল কুবরার প্রশংসামূলক আলোচনা শুরু করতেন, তখন বিরতিহীনভাবে করতেন, তিনি ক্লান্ত হতেন না।
--- [তাবরানী , হাদীস নং : ২১]
.

সুপ্রিয় পাঠক, রাসুলুল্লাহ  (ﷺ) আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে, কি পরিমাণ ভালোবাসতেন তা নিশ্চয়ই  আমরা সকলেই জানি। এবার ভেবে দেখুন তো, আম্মাজান খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে কতটা ভালোবাসতেন যার কারণে আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) পর্যন্ত ঈর্ষা করতেন।
.

❒ তিন,

এই পর্যায়ে আমরা একটি বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের পর্যালোচনা করবো। [ ওয়া বিল্লাহীত তাওফীক্ব ]।

সুরেলা কণ্ঠের জামাতী বক্তা মিজানুর রাহমান আল আযহারী (হাদাহুল্লাহ) নামক এক ব্যক্তির একটি আপত্তিকর ভিডিয়ো প্রকাশ পেয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়! ঐ ভিডিয়োতে তিনি আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র সম্পর্কে কয়েকটি বেফাঁস মন্তব্য করেন! উক্ত ভিডিয়ো'তে আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা' ও রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)-এর বৈবাহিক অবস্থার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন -

ক. খাদীজাহ তালাক খাইছে!
খ. খাদীজাহ পৌঢ়া ছিলেন!
গ. খাদীজাহ  ইনট্যাক্ট ছিলেন না!
ঘ. খাদীজাহ ৪০ বছরের বুড়ি ছিলেন!
আল ইয়াযু বিল্লাহ!
[ কমেন্টবক্সে লিংক ]
.

❒ পর্যালোচনা :

🔸প্রথমত, 

আমাদের সমাজে "উমুক মেয়ে তালাক খাইছে" বলা হয় তাচ্ছিল্যঅর্থে! সাধারণত গ্রাম্য মহিলারা একজন আরেকজনকে খোটা দিয়ে এসব কথা বলে থাকে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য করা হয়, তালাকপ্রাপ্তা মহিলার মধ্যে হয় স্বভাবগত, আর না হয় অভ্যাসগত কোনো খারাবী ছিল যার কারণে স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দিয়েছে!

সুপ্রিয় পাঠক, আমি যদি আপনার মায়ের ব্যাপারে এমন মন্তব্য করি যে," আপনার বাপের সাথে বিয়ের পূর্বে আপনার মা দু'দুইবার তালাক খাইছে অথবা আপনার মা ইনট্যাক্ট নন"
আল্লাহর কসম করে বলুনতো - আপনার অনুভূতি তখন কেমন হবে!? যদি এমন কুরুচিপূর্ণ শব্দচয়ন আপনার মায়ের ক্ষেত্রে যুতসই না হয় তাহলে ইসলামের প্রাথমিক যুগের নিবেদিত প্রাণ , শ্রেষ্ঠ জান্নাতি নারী,  রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)- এর প্রিয়তমা স্ত্রী, মুমিনগণের মায়ের ক্ষেত্রে কি করে তা শোভনীয় হতে পারে?
.

এবার মুল কথায় আসি, আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন মক্কার শ্রেষ্ঠ ধনী ও সম্ভ্রান্ত মহিলা এবং সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারিণী হিসাবে সেযুগের কাফির,মুশরিকদের কর্তৃক ‘ত্বাহেরা’ (পবিত্রা) নামে খ্যাত। আল্লাহর রাসুল (ﷺ)-এর সাথে বিবাহের পূর্বে উনার  দু’দুজন স্বামী মৃত্যুবরণ করেন এবং তাদের সাথে মাত্র কয়েক বছরের সংসার জীবন অতিবাহিত করেন! স্বামীদ্বয়ের মৃত্যুর পরে তিনি তাদের প্রভূত সম্পদের মালিক হন। তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী হলে নিশ্চয়ই তিনি স্বামীর সম্পদ পেতেন না। সুতরাং বক্তার উক্ত দাবী মিথ্যা, বানোয়াট এবং মনগড়া।


তাছাড়া প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ইবনু হিশাম ও আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া-তে আম্মাজান খাদীজাহ ও রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিবাহের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে -

"রাসুলুল্লাহ ﷺ মিষ্টভাষিতা, সত্যবাদিতা, আমানতদারী এবং উন্নত চিন্তা-চেতনার কথা শুনে আম্মাজান  খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়েন। ইতিপূর্বে পরপর দু’জন স্বামী মৃত্যুবরণ করায় মক্কার সেরা নেতৃবৃন্দ তাঁর নিকটে বিয়ের পয়গাম পাঠান। কিন্তু তিনি কোনটাই গ্রহণ করেননি। অত:পর তিনি নিজেই বান্ধবী নাফীসার মাধ্যমে নিজের বিয়ের পয়গাম পাঠালেন যুবক মুহাম্মাদ ﷺ-এর কাছে। তখন উভয় পক্ষের মুরব্বীদের সম্মতিক্রমে শাম থেকে ফিরে আসার মাত্র দু’মাসের মাথায় সমাজনেতাদের উপস্থিতিতে ধুমধামের সাথে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। রাসুলুল্লাহ ﷺ স্বীয় বিবাহের মোহরানা স্বরূপ ২০টি উট প্রদান করেন। উল্লেখ্য যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ ছিলেন খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার তৃতীয় স্বামী। অন্যদিকে খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রথমা স্ত্রী"।
[ ইবনু হিশাম ১/১৮৭-৮৯; আল-বিদায়াহ ২/২৯৩-৯৪ ]
.

অতএব, আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা "তালাক খাইছে" এমন তাচ্ছিল্যমুলক শব্দচয়ন করা
নবী পরিবারের শানে চরম বে'আদবী ও অসম্মানজনক।
.

🔸দ্বিতীয়ত,

বক্তা সাহেব তার উক্ত বক্তব্যে আরও দাবী করেছেন "আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ৪০ বছরের বুড়ি ছিলেন"!

জবাব :

রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)-এর সময় আরবে মানুষের বয়স সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো বিভ্রান্তিকর এবং অনির্দিষ্ট ছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সাধারণ ধারণা হচ্ছে, খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)-এর বিয়ের সময় রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)- এর বয়স ছিল ২৫ অন্যদিকে খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর বয়স ছিল ৪০। ইবনে হিশাম রচিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সিরাত গ্রন্থে এরকম উল্লেখ থাকলেও সে সময়
রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)-এর বয়স সম্পর্কে আরো দু’টি ভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে বিয়ের সময়
রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)-এর বয়স ছিল ৩০, অন্যটিতে বলা হয়েছে ২৯। সে সময় খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) বয়স কত ছিল সে সম্পর্কেও বর্ণনার বিভিন্নতা আছে - কোথাও বলা হয়েছে সে সময় তার বয়স ছিল ৩৫ কোথাও বলা হয়েছে ২৫। কোথাও বলা হয়েছে ২৭!
এদত্বস্বত্তেও আমাদের বক্তা ও লিখকগন শুধুমাত্র ৪০ বছরের বর্ণনাটি উল্লেখ করে আম্মাজান খাদিজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে "বুড়ি" প্রমাণে মরিয়া হয়ে যান! আল ইয়াযু বিল্লাহ।
.

🔸প্রথম দলিলের খন্ডন :

ইবনে হিশাম রচিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সিরাত গ্রন্থে আম্মাজান খাদীজাহ' রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র বিবাহকালের বয়স উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে -
"বিয়ের সময় আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র বয়স ছিল ৪০ এবং রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ছিল ২৫।
--- [ ইবনু হিশাম ১/১৮৭ ]
.

ইবনু হিশামে উল্লিখিত আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার বয়স যে ৪০ ছিল, তা অনেকেই মানতে রাজী হননি। কেবল এতটুকুই স্বীকার করেছেন যে, খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র বয়স রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)- চেয়ে কিছুটা বেশী ছিল।
--- [ নবীজীবনী পৃঃ ৬৬; দ্রঃ মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মোস্তফা চরিত ২৯০-৯১ পৃঃ ]
.

🔸দ্বিতীয় দলিলের খন্ডন :

রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)- এবং আম্মাজান খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) বিবাহের সময় বয়সের ব্যাপারে অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)-এর বয়স ২৫ এবং খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এর বয়স ৪০ সম্বলিত 'তারীখে তাবারী' গ্রন্থে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা জাল, অগ্রহণযোগ্য!'

ইমাম ইবনে জারীর আত তাবারী [ রাহিমাহুল্লাহ ] তার 'তারীখ' গ্রন্থে 'ذكر تزويج النبي ص خديجة رضي الله عنها'
অধ্যায়ে এই বর্ণনাটি এনেছেন।

বর্ণনা:
قال هشام بن محمد: نكح رسول الله ص خديجة، وهو ابن خمس وعشرين سنة، وخديجة يومئذ ابنة أربعين سنة.

[ তারীখে তাবারী :  ২/২৮০ ]
.

🔸তাহক্বীক্বঃ

উক্ত বর্ণনা দুইজন রাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। একজন হলেন মুহাম্মদ বিন উমার আল-ওয়াক্বেদী, যিনি জামহূর মুহাদ্দেসীনের নিকট যঈফ এবং মাতরূক রাবী।
-
ক) হাফেয যাহাবী (রাহঃ) বলেনঃ তার যঈফ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা' রয়েছে। 
খ) সে ছিল রাফেযী শিয়া।
গ) ইমাম শাফেঈ (রাহঃ) বলেনঃ ওয়াক্বেদীর সবগুলো কিতাব মিথ্যা।
ঘ) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাহঃ) তার জাল রিওয়ায়েত সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
-
আরেকজন রাবী হচ্ছেন 'هشام بن محمد' যার পুরো নাম হচ্ছে '(هشام بن محمد بن السائب الكلبي') হিশাম বিন মুহাম্মদ বিন ছাইব আল কালবী। ইনিও জামহূর মুহাদ্দেসীনের নিকট যঈফ, মাতরূক এবং শিয়া, রাফেযী।

জারাহ ওয়াত ত্বাদীলের ইমাম শামসুদ্দীন আয যাহাবী [ রাহিমাহুল্লাহ ] এই রাবীর ব্যাপারে বলেন :

 هشام بن محمد بن السائب الكلبي، أبو المنذر الاخباري النسابة العلامة.
روى عن أبيه أبي النضر الكلبي المفسر، وعن مجاهد، وحدث عنه جماعة.
قال أحمد بن حنبل: إنما كان صاحب سمر ونسب، ما ظننت أن أحدا يحدث عنه.
وقال الدارقطني وغيره: متروك.
وقال ابن عساكر: رافضي، ليس بثقة.

--- [ মিযানুল ই'তিদাল,রাবী নং ৯২৩৭ দ্র: ]
সুতরাং বর্ণনাটি জাল।
.

জ্ঞাতব্য যে, হাদীস, মাগাযী এবং তারীখের কিতাবগুলোতে যেসব রিওয়ায়াত সংকলন করা হয়েছে, সেখানে সানাদ সহ সংকলন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল কারো ব্যাপারে যতগুলো বর্ণনা পাওয়া যায় সেগুলো উল্লেখ করা। আর তারা অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো্র সানাদ তাহক্বীক্ব করে দিয়ে যান নি। কাজেই যে ব্যক্তি সেগুলো থেকে দলীল নিতে চায়, তার দায়িত্ব হল সেগুলো সহীহ সাবিত করে গ্রহণ করা।
-

❒ উপসংহার:

পরিশেষে আবারও বলছি, ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম চরিত্রের অধিকারিনী  উম্মুল মু’মিনীন [ মুমিনগণের মা ] তথা নবী পত্নীদের ব্যাপারে কটু কথা বলা, তাচ্ছিল্য করা, উপহাস করা, তাদের নামে মিথ্যাচার করা, তাদের সম্মানহানি করা,তাদের শানে অসম্মানজনক শব্দচয়ন করা, তাদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় এমন মন্তব্য করা নিশ্চয়ই বদ-বখতির কারণ৷ এটা এমন এক দরজা যেখানে বে'আদবী করার কারণে আল্লাহপ্রদত্ত কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবেই তা সুনিশ্চিত। ঐ শুনুন,প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ﷺ এর হুশিয়ারি -“নিশ্চয়ই মানুষ এমন কথাও বলে, যাতে সে কোন ক্ষতি আছে বলে মনে করেনা; অথচ এর জন্যই সে ৭০ বছরের পথ জাহান্নামে অধঃপতিত হয়।”
--- [তিরমিযী, হা/২৩১৪]
.
অতএব বক্তা সাহেবকে বলব - "জবানে লাগাম দিন"।
.

হে আল্লাহ, আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে সালাফী মানহাজ অনুসরণ করার তাওফীক্ব দিন এবং অসাধু বক্তাদের বক্তব্যের ফিতনাহ থেকে আমাদের হিফাযত করুন। আমীন, ইয়া রব্বাল ‘আলামীন।
.

আপনাদের দ্বীনীভাই,
আখতার বিন আমীর।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

Monday, February 18, 2019

সালাফী আলিমগন কি পর্নোগ্রাফি থেকে যুবসমাজকে সর্তক করেন নি? [ একটি মিথ্যা অভিযোগ এবং তার জবাব ]

আসসালা-মু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা-র জন্য,
যিনি বলেছেন “যে ব্যক্তি আমার কোন অলীর (খাঁটি বান্দা) সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করব।”
[সহীহ বুখারী, হা/৬৫০২]

তিনি আরও বলেছেন “ধ্বংস প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের জন্য।”
[সূরাহ জাছিয়াহ: ৭]

এবং অসংখ্য সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি, যিনি বলেছেন,
,مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِىَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِىَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ يَصْرِفَ بِهِ وُجُوهَ النَّاسِ إِلَيْهِ أَدْخَلَهُ اللهُ النَّارَ
যে ব্যক্তি ইলম শিখে এজন্য যে, তার দ্বারা সে আলেমদের সাথে বিতর্ক করবে ও মূর্খদের সঙ্গে ঝগড়া করবে কিংবা মানুষকে তার দিকে আকৃষ্ট করাবে,
তাহলে আল্লাহতালা তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
📚[তিরমিযী হা/২৬৫৪, সনদ হাসান; মিশকাত হা/২২৫]

তিনি আরও বলেছেন “ আবেদের ওপর আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব সকল তারকার ওপর চাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের মতো। নিশ্চয় আলেমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ দিনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী বানান না। তাঁরা কেবল ইলমের ওয়ারিশ বানান। অতএব যে তা গ্রহণ করে সে পূর্ণ অংশই পায়।”
📚[সুনানে তিরমিযী : ২৬৮২]

❒ প্রারম্ভিকা,

এ যুগের মুসলমানরা একের পর এক মহাবিপদে পতিত হচ্ছে! তাদেরকে চতুর্দিক দিয়ে ফিতনা ফাসাদে ঘিরে রেখেছে এবং অনেক মুসলমানই সে ফিতনার সহজ শিকার হয়ে যাচ্ছে। তাদের গুনাহ ও অসৎকাজগুলো প্রকাশ পাচ্ছে এবং তারা মানুষকে নির্ভয়ে নির্লজ্জভাবে গুনাহের দিকে আহ্বান করছে। তেমনি একটি গুপ্ত পাপ "পর্নোগ্রাফি" নামে এক বিষাক্ত নেশা আজ আমাদের পুরো সমাজকে ছেয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশের মত এক মুসলিম অধ্যুষিত দেশে আজ শিশু, যুবক, বৃদ্ধ নির্বিশেষে এই বিষাক্ত নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে।
যার ফলে সমাজের মধ্যে ধর্ষনের মতো জঘন্য কাজগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বর্তমানে পর্ণগ্রাফির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে কম্পিউটার ,মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে! বলা যেতে পারে, এটা শয়তানের একটা মারাত্নক ও অব্যার্থ অস্ত্র । শয়তান এই অস্ত্র দ্বারা মানুষের মনে খুব সূক্ষভাবে আস্তে আস্তে স্রষ্টা বিষয়ে সন্দেহ তৈরী করে এবং মানুষের ঈমান ছিনিয়ে নেয় ।
.

আমাদের মন নামক পাত্র প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো কিছুতে ভরাট থাকবেই। ঘুম ছাড়া এই পাত্রকে খালি রাখা যায় না। তবে পাত্রে থাকা বস্তুকে পরিবর্তন করে দেয়ার শক্তি আমাদের দেয়া হয়েছে। খারাপ চিন্তা মনে জাগ্রত হওয়াটা দোষ নয়, দোষ তো তখন হবে যখন তাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়।  আপনি যদি মনে উদয় হওয়া কুচিন্তাকে তাৎক্ষণিক প্রতিহত না করেন, সে আপনাকে কাজ করিয়ে ছাড়বে। আজ হোক কাল হোক, আপনার একটি কুচিন্তার খারাপ প্রভাব আপনার কাজে প্রকাশ পাবেই। শুধু পর্ন নয়, যে কোনো নেশার বিষয়টাই এমন।

যাইহোক, পর্নোগ্রাফি কিংবা মাস্টারবেশনের মত ভয়াবহ গুপ্ত পাপগুলি খুব বেশি আকারে হওয়ার কারণ হলো আল্লাহর দীনকে অবজ্ঞা, তাঁর নির্ধারিত সীমারেখা ও শরি‘আতের প্রতি অসম্মান এবং আল্লাহর শরি‘আত বাস্তবায়নে বহু মুসলমানের অবহেলা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ থেকে বিরত থাকা, সর্বপরি অন্তরে আল্লাহর ভয় হ্রাস পাওয়া!

আল্লাহর দরবারে খাস তাওবা, তাঁর আদেশ-নিষেধকে সম্মান প্রদর্শনসহ অজ্ঞলোকদেরকে এসব ফিতনা ও মসিবত থেকে ফিরিয়ে আনা ও সঠিক অবকাঠামোতে নিয়ে আসা এবং এসব পাপাচার রোধে করনীয় সম্পর্কে সালাফী উলামাগণ সুবিন্যাস্ত দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন যা আজ অব্দি চলমান রয়েছে!

❒ এবার মুল প্রসংগে আসা যাক,

গত কয়েকদিন আগে " পর্নোগ্রাফিঃ মানবতার জন্য হুমকি "নামক একটি পেজে যুবকদের পর্নাসক্তির উপর  একটি আর্টিকেল পড়লাম, যেখানে এ্যাডমিন সাহেব
জাহলাতের কারনে বা ফিরাসাতের অভাবে  বেশ কিছু খেয়ানত এবং তোহমত (অপবাদ) দিয়েছেন সত্যবাদী উলামায়ে ক্বেরামের উপর! যথাঃ

১. সহীহ আক্বীদাহ’ নিয়ে কটাক্ষ!
২. আলেমগন বাস্তবতা বিবর্জিত জনবিচ্ছিন্ন!
৩. যুবকরা ফিত্নায় ডুবে আছে কিন্তু উলামাগন বেখবর!
৪. আলেমগন জিম্মাদারী আদায় করছেন না!
৫. বিদাতিদের সাথে একই পাল্লায় সালাফী উলামাদের ওজন করা!
[কমেন্ট বক্সে স্কিন শট দ্রঃ]

■ জবাবঃ

আমাদের আলেমগণ আক্বীদাহ ও তাওহীদের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ ক্বুরআন ও সুন্নাহয় যে এর উপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সবার আগে কিসের দা‘ওয়াত দিতে হবে? ইসলাম কী বলছে দেখেছেন? দেখুন ভালো করে -

✍ যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয ইবনু জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-কে ইয়েমেন পাঠালেন, তখন তিনি তাঁকে বললেন,
«إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَى أَنْ يُوَحِّدُوا اللهَ تَعَالَى فَإِذَا عَرَفُوا ذ‘لِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ فَإِذَا صَلَّوْا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةً فِي أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ غَنِيِّهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فَقِيرِهِمْ فَإِذَا أَقَرُّوا بِذَلِكَ فَخُذْ مِنْهُمْ وَتَوَقَّ كَرَائِمَ أَمْوَالِ النَّاسِ».
“তুমি আহলে কিতাবদের একটি কাওমের কাছে যাচ্ছ। অতএব, তাদের প্রতি তোমার প্রথম আহবান হবে- তারা যেন আল্লাহর একত্ববাদকে (তাওহীদকে) মেনে নেয়। তারা তা জেনে নিলে তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ্ দিনে রাতে তাদের প্রতি পাঁচ বার সালাত ফরজ করে দিয়েছেন। যখন তারা সালাত আদায় করবে, তখন তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের ধন-সম্পদে আল্লাহ্ তাদের প্রতি যাকাত ফরজ করেছেন। তা তাদেরই ধনশালীদের থেকে গ্রহণ করা হবে। আবার তাদের ফকীরদেরকে তা দেয়া হবে। যখন তারা স্বীকার করে নেবে, তখন তাদের থেকে গ্রহণ কর। তবে লোকজনের ধন-সম্পদের উত্তম অংশ গ্রহণ করা থেকে বেঁচে থাক।”
📚[সহীহ বুখারী, হা/৭৩৭২]

নাবী (ﷺ) সবার আগে কিসের দাওয়াত দিতে বললেন? নামাযের? রোযার? যাকাতের? পর্নোগ্রাফি নিধনের? নাকি আক্বীদাহ ও তাওহীদের?
নিশ্চয়ই আক্বীদাহ ও তাওহীদের।
আমাদের আলেমগণ এজন্যই আক্বীদাহর গুরুত্ব দেন সবচেয়ে বেশি।  যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) এ ব্যাপারে একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। গ্রন্থটির নাম— আত-তাওহীদ আওয়্যালান ইয়া দু‘আতাল ইসলাম (হে ইসলামের দা‘ঈগণ, আগে তাওহীদ থেকে শুরু করো)। বইটি বাংলাতেও অনূদিত হয়েছে। আগ্রহী পাঠকরা পড়ে দেখতে পারেন।
আচ্ছা, আপনি এটা জানেন তো যে, সালাফদের মানহাজ অনুসরণ করার বিধান কী? আসুন, দেখি আল্লাহর কিতাব কী বলছে।

✍ মহান আল্লাহ বলেছেন,
«وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ».
“যে আমার অভিমুখী হয়, তুমি তার পথ অনুসরণ করবে।” [লুক্বমান: ১৫]

✍ ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
«كل الصحابة منيب إلى الله تعالى؛ فيجب اتباع سبيله، وأقواله و أفعاله واعتقاداته».
“প্রত্যেক সাহাবীই আল্লাহর অভিমুখী হয়েছেন। সুতরাং তাঁর (সাহাবীর) পথ, কথাবার্তা, কাজকর্ম এবং আক্বীদাহ-বিশ্বাস অনুসরণ করা ওয়াজিব।”
📚[ই‘লামুল মুওয়াক্বক্বি‘ঈন, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৩০]
.
আসুন দেখি, দারস ও তাদরীসে সাহাবীদের মানহাজ কী ছিল।

✍ জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
َ«كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ـ صلى الله عليه وسلم ـ وَنَحْنُ فِتْيَانٌ حَزَاوِرَةٌ فَتَعَلَّمْنَا الإِيمَانَ قَبْلَ أَنْ نَتَعَلَّمَ الْقُرْآنَ ثُمَّ تَعَلَّمْنَا الْقُرْآنَ فَازْدَدْنَا بِهِ إِيمَانًا».
“আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম। আমরা ছিলাম শক্তিশালী এবং সক্ষম যুবক। আমরা কুরআন শেখার পূর্বে ঈমান শিখেছি, অতঃপর কুরআন শিখেছি এবং তার দ্বারা আমাদের ঈমান বেড়ে যায়।”
📚[ইবনু মাজাহ, হা/৬১; সনদ: সহীহ]

সাহাবীগণ সবার আগে কী শিখেছেন? আক্বীদাহ শিখেছেন। এইজন্যই আমাদের আলেমগণ আক্বীদাহর প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন।
আমাদের আলেমগণ জানেন, মহান আল্লাহ বলেছেন,
«وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا».
“যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের (সালাফদের) পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব; কতই না মন্দ সে আবাস!” [সূরা নিসা: ১১৫]

সালাফদের মানহাজের বিরোধিতাকারী আমাদের আলেমদের কাছে বিদআতী হিসেবে পরিগণিত।

✍ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
«ومذهب أهل السنة والجماعة مذهب قديم معروف قبل أن يخلق الله أبا حنيفة ومالكا والشافعي وأحمد؛ فإنه مذهب الصحابة الذين تلقوه عن نبيهم، ومن خالف ذالك كان مبتدعا عند أهل السنة».
“আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব একটি সুপরিচিত প্রাচীনতম মাযহাব। আল্লাহ্ তা‘আলা আবূ হানীফাহ, মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদকে সৃষ্টি করার পূর্ব থেকেই এই মাযহাবের অস্তিত্ব ছিল। নিশ্চয়ই এটা স্বহাবীদের মাযহাব, যারা এই মাযহাব স্বয়ং তাঁদের নাবীর কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন। যে ব্যক্তি এই মাযহাবের বিরোধিতা করবে, সে আহলুস সুন্নাহর নিকট বিদ‘আতী হিসেবে পরিগণিত হবে।”
📚[ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ), মিনহাজুস সুন্নাহ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৬০১]

যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থই বুঝেনি, যে কিনা অন্যান্য ধর্মকেও সঠিক মনে করে, যে কিনা ইসলাম ভঙ্গকারী কাজে লিপ্ত; তার আবার নামায কী, রোযা কী, আর পর্নোগ্রাফি নিধনই বা কী!! সে পর্নোগ্রাফি না দেখে, মাস্টারবেট না করে, নিয়মিত নামায-রোযা করে নিপাট ভদ্রলোক হওয়ার পরেও তো আক্বীদাহভ্রষ্ট হওয়ার কারণে তার সমস্ত আমল নিস্ফল হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন।

আফসোস হয়, কিছু লোক পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে যেয়ে চরমপন্থায় লিপ্ত হয়েছে। আলেমদের বিরুদ্ধে তাদের নোংরা জিভ লম্বা করেছে। ‘সহীহ আক্বীদাহ’ নিয়ে কটাক্ষ করেছে। পর্নোগ্রাফি আর মাস্টারবেশনের বিরুদ্ধে দাওয়াতী কাজ করাকে আক্বীদাহ ও তাওহীদের দাওয়াতের চেয়ে উঁচুতে স্থান দিয়েছে! আমরা পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে নিষেধ করছি না, কিন্তু ‘সহীহ আক্বীদাহ’ নিয়ে কটাক্ষ কেন, আমাদের আলেমদেরকে নিয়ে কটাক্ষ কেন?!
আক্বীদাহর গুরুত্ব বোধহয় এখনও উপলব্ধি করতে পারেননি। একটা দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করছি। মনোযোগ দিয়ে হাদীসটা পড়বেন—

✍ ইবনুুদ দাইলামী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মনে এই তাকদীর সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ দানা বাঁধে। তাই আমি এই ভেবে শংকিত হই যে, তা আমার দ্বীন ও অন্যান্য কার্যক্রম নষ্ট করে দেয় কিনা। তাই আমি উবাই ইবনু কাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আবূল মুনযির! আমার মনে এই তাকদীর সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ দানা বেঁধেছে, তাই আমি এই ভেবে শংকিত হই যে, তা আমার দ্বীন ও অন্যান্য কার্যক্রমকে নষ্ট করে দেয় কিনা। অতএব এ সম্পর্কে আমাকে কিছু বলুন। আশা করি আল্লাহ তার দ্বারা আমার উপকার করবেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা ঊর্ধ্বলোকের ও ইহলোকের সকলকে শাস্তি দিতে চাইলে তিনি অবশ্যই তাদের শাস্তি দিতে পারেন। তথাপি তিনি তাদের প্রতি জুলুমকারী নন। আর তিনি তাদেরকে দয়া করতে চাইলে তাঁর দয়া তাদের জন্য তাদের কাজকর্মের চেয়ে কল্যাণময়।
যদি তোমাদের নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ বা উহূদ পাহাড়ের মত সোনা থাকতো এবং তুমি তা আল্লাহ্‌র রাস্তায় খরচ করতে থাকো, তবে তোমার সেই দান কবূল করা হবে না, যাবৎ না তুমি তাকদীরের উপর ঈমান আনো। অতএব তুমি জেনে রেখো! যা কিছু তোমার উপর আপতিত হয়েছে, তা তোমার উপর আপতিত হতে কখনো ভুল হতো না এবং যা তোমার উপর আপতিত হওয়ার ছিল না তা ভুলেও কখনো তোমার উপর আপতিত হবে না।

তুমি যদি এর বিপরীত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাও, তাহলে তুমি জাহান্নামে যাবে। আমি মনে করি, তুমি আমার ভাই আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তোমার কোন ক্ষতি হবে না। (ইবনুুদ দাইলামী বলেন), অতঃপর আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ -এর নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও উবাই (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর অনুরূপ বললেন। তিনি আরো বললেন, তুমি হুযাইফাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তোমার ক্ষতি নেই। অতঃপর আমি হুযাইফাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও তাদের দুজনের অনুরূপ বলেন। তিনি আরও বলেন, তুমি যায়দ ইবনু সাবিত (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট গিয়ে তাকেও জিজ্ঞেস করো।

 অতএব আমি যায়দ ইবনু সাবিত (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ তাআলা ঊর্ধ্বলোক ও ইহলোকের সকল অধিবাসীকে শাস্তি দিতে চাইলে অবশ্যই তাদের শাস্তি দিতে পারবেন এবং তিনি তাদের প্রতি জুলুমকারী নন। আর তিনি তাদের প্রতি দয়া করতে চাইলে তাঁর দয়া তাদের সমস্ত সৎ কাজের চাইতেও তাদের জন্য অধিক কল্যাণকর। তোমার নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ সোনা থাকলেও এবং তুমি তা আল্লাহ্‌র পথে ব্যয় করলেও তিনি তা কবূল করবেন না, যাবৎ না তুমি সম্পূর্ণরূপে তাকদীরের উপর ঈমান আনো। অতএব তুমি জেনে রাখো! তোমার উপর যা কিছু আপতিত হওয়ার আছে তা তোমার উপর আপতিত হয়েছে, তা কখনো ভুলেও এড়িয়ে যেত না এবং যা তোমার উপর আপতিত হওয়ার ছিল না, তা তোমার উপর ভুলেও কখনো আপতিত হত না। তুমি যদি এর বিপরীত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাও তাহলে তুমি জাহান্নামে যাবে।”
📚[ইবনু মাজাহ, হা/৭১; সনদ: সহীহ]

একজন তাবেঈ কিভাবে তাঁর আক্বীদাহ বিশুদ্ধ করার জন্য সাহাবীদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন। তিনি আক্বীদাহর একটি মাসআলাহ পূর্ণরূপে হৃদয়ঙ্গম করার জন্য চার চারজন সাহাবীর কাছে গিয়েছেন। একেই বলে আক্বীদাহ শিক্ষার গুরুত্ব। আর গুরুত্ব হবে নাই বা কেন? নাবীজী (ﷺ) কী বলেছেন, দেখেছেন? অন্তর কেঁপে উঠার মত কথা! তিনি বলেছেন, “তোমার নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ সোনা থাকলেও এবং তুমি তা আল্লাহর পথে ব্যয় করলেও তিনি তা কবুল করবেন না, যতক্ষণ না তুমি সম্পূর্ণরূপে তাকদীরের উপর ঈমান আনো।” [প্রাগুক্ত]

✍ আর তাইতো বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ সামাহাতুল ওয়ালিদ ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
«معلومٌ بالأدلة الشرعية من الكتاب والسنة أن الأعمال والأقوال إنما تصح وتقبل إذا صدرت عن عقيدة صحيحة فإن كانت العقيدة غير صحيحة بطل ما يتفرع عنها من أعمال وأقوال».
“কিতাব ও সুন্নাহর শার‘ঈ দলিলসমূহের মাধ্যমে এটা সুবিদিত যে, যাবতীয় আমল এবং কথা কেবল তখনই বিশুদ্ধ ও গ্রহনীয় হয়, যখন তা সহীহ (বিশুদ্ধ) আক্বীদাহ থেকে উদ্ভূত হয়। কিন্তু আক্বীদাহ যদি অশুদ্ধ হয়, তাহলে যাবতীয় আমল ও কথা বাত্বিল হয়ে যায়।”
📚[মাজমূউ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যাআহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৩]

যে আলেমগণ কষ্ট করে বছরের পর বছর উস্তাযের দারসে বসে ‘ইলম অর্জন করেছেন, তারপর উস্তায সার্টিফাই করার পর দাওয়াতের ময়দানে এসেছেন, লোকদেরকে আল্লাহর তাওহীদের দিকে ডেকেছেন, আক্বীদাহর দাওয়াত দিয়েছেন, কষ্ট করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দা‘ঈ তৈরি করেছেন, সেই আলেমদের প্রতি কেন এই আক্রমণ? সহীহ আক্বীদাহর দাওয়াত দেওয়ার কারণে তাদেরকে ‘সহীহ আক্বীদাহ, সহীহ আক্বীদাহ’ বলে উপহাস করার হেতু কী?! যারা আমাদের আলেমদের প্রতি বিষ উদগীরণ করেছে, আক্বীদাহর দাওয়াতের ক্ষেত্রে তাদের কী অবদান রয়েছে? অবদান তো নেই-ই, বরং তাদের দাওয়াতে যুবকরা জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত হয়েছে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এরাই জাহান্নামের কুকুর হওয়ার দিকে আহ্বান করেছে। কারণ তারা যে খারিজী!
আমাদের আলেমগণের প্রতি এরা মিথ্যাচার করেছে। বলতে চেয়েছে আমাদের আলেমগণ পর্নোগ্রাফি, আর মাস্টারবেশনের বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি। জনগণকে সতর্ক করেননি এসব থেকে। ওরা হয় জাহেল কূপমণ্ডূক, আর নাহয় শতাব্দীর সেরা মিথ্যুক! আসুন, দেখি, আমাদের আলেমগণ কী অবদান রেখেছেন পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশন থেকে সতর্ক করার ব্যাপারে।
.

❒ পর্নোগ্রাফি থেকে আলেমদের সতর্কীকরণ:

পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশন থেকে আমাদের আলেমগণ যথেষ্ট সতর্ক করেছেন। তাঁদের কিতাব এবং লেকচার ক্লিপস এর জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ।
পর্নোগ্রাফি তো দূরের কথা আমাদের আলেমগণ টিভির সাধারণ প্রোগ্রাম থেকেও সতর্ক করেছেন। টিভি সিরিয়াল, নাটক ও মুভি দেখা থেকে সতর্ক করেছেন। এমনকি ইমাম আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) বলতেন, “টিভি হল শাইত্বানুন রজীম তথা অভিশপ্ত শয়তান।”

ইয়েমেনের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আশ-শাইখ আল-আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব আল-ওয়াসাবী (রহিমাহুল্লাহ) ১৪৩০ হিজরীতেই “মাফাসিদুত তিলফাযি ওয়াদ দিশ (টিভি ও ডিশের ভয়াবহতা)” শিরোনামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি এই গ্রন্থে টিভির ২০১ টি অপকারিতা এবং ডিশের ৫৬ টি অপকারিতা উল্লেখ করেছেন। এমনকি সে সময় ইয়েমেনে সম্প্রচারিত জনপ্রিয় মুভি, কার্টুন ও অনুষ্ঠানের নাম ধরে ধরে সমালোচনা করেছেন। ডিশের অপকারিতা উল্লেখ করতে গিয়ে পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশনের কথা সরাসরি উল্লেখ করে জনগণকে সতর্ক করেছেন।

✍ ফাদ্বীলাতুশ শাইখ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ) পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করতে গিয়ে বলেছেন—
“তোমার প্রতি আমার নসিহত হল, তুমি ওই অসিলা বা মাধ্যমকে ধ্বংস কর, যা তোমাকে (অশ্লীল) স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো দর্শনের দিকে ঠেলে দেয়। যে চ্যানেলগুলো তোমাকে আল্লাহর স্মরণ এবং সালাত থেকে বিচ্যুত করে দেয়। তুমি আল্লাহর জন্য এই মাধ্যমকে ধ্বংস কর। আল্লাহর কসম, তুমি তোমার অন্তরে ঈমানের এমন স্বাদ এবং মিষ্টতা পাবে, যা সবকিছুর চেয়ে কাংঙ্ক্ষিত ও ইপ্সিত। যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কিছু পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে বিনিময়ে তার চেয়ে উত্তম বস্তু দান করেন। তুমি রাতে এই পদ্ধতি পরখ করে দেখ, আর আমার কাছে এক সপ্তাহ পরে এসো এবং দেখো তোমার অন্তরের কী পরিবর্তন ঘটেছে। শীঘ্রই তোমার পরিবর্তন ঘটবে, যদি তুমি মহান আল্লাহর জন্য কাজটি করো।”
► [দ্র: http://binothaimeen.net/content/1535]

✍ ফাদ্বীলাতুশ শাইখ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করেছেন। তিনি বলেছেন, “কেন সে নোংরা ফিল্মের অনিষ্ট এবং এর পাপ সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও তা দেখবে? হ্যাঁ, তাওবাহর দরজা উন্মুক্ত। আমরা তাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করছি না। সে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে এবং এসব নোংরা ফিল্ম বর্জন করবে। সে এসব দেখবে না, বরং এ থেকে সতর্ক করবে।”
► [দ্র: https://m.youtube.com/watch?v=Q8KVUqpBXiU]
.

✍ মদিনা ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি মেম্বার আশ-শাইখ আল-আল্লামাহ আব্দুর রাযযাক্ব বিন আব্দুল মুহসিন আল-বদর (হাফিযাহুল্লাহ) কে একজন পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ছাত্র প্রশ্ন করে বলে, শাইখ যেন তাকে নসিহত করেন। শাইখ সেই ছাত্রের জন্য দু‘আ করেন এবং তাকে নসিহত করতে গিয়ে বলেন, “হে আমার ভাই, আমি তোমাকে একটিই নসিহত করছি। তুমি সর্বদা নসিহতটি স্মরণ করবে। কেননা এতে তোমার মুক্তি রয়েছে। তুমি সর্বদা স্মরণ করবে যে, বিশ্বজগতের মহান প্রতিপালক তোমাকে দেখছেন। আর তিনি তোমার ব্যাপারে সম্যক অবগত। তুমি যখন কোনদিন নির্জনে থাক, তখন তুমি একথা বলো না যে, আমি নির্জনে রয়েছি। বরং বল, আমার উপর একজন প্রহরী রয়েছে। তুমি যখন নির্জনে ইন্টারনেট নিয়ে বসো এবং সেসব ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশ করতে শুরু করো, আর মনে করো যে কোন মানুষ তোমাকে দেখতে পাচ্ছে না, তখন তুমি মনে রেখ যে, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, “সে কি জানেনা যে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ দেখছেন?” [সূরা ‘আলাক্ব: ১৪] এই আয়াতে তোমার জন্য ধমক রয়েছে। তুমি এই আয়াত দিয়ে তোমার চিকিৎসা করো। তুমি ক্বুরআন দিয়ে নিজেকে তিরস্কার করো, ধমক দাও। আর এতে কোন নিষিদ্ধতা নেই যে, তুমি এই আয়াত তোমার রুমে তোমার দৃষ্টির সামনে রাখবে। যাতে করে আয়াতটি তোমাকে ধমক দেয় এবং এই বিষয় থেকে প্রতিহত করে।...”
► [দ্র: https://m.youtube.com/watch?v=MSSNBflrYmo]
.

✍ মদিনা ইউনিভার্সিটির ফিক্বহ ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর আশ-শাইখ আল-আল্লামাহ ড. সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করতে গিয়ে বলেছেন—
“আমার জন্য এবং আমার ভাইদের জন্য নসিহত হল, এটা জানা যে, দৃষ্টি আল্লাহর একটি নি‘আমত। আমাদের উপর আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নি‘আমতগুলোর একটি। প্রতিটি সেকেন্ডে এই নি‘আমত বারবার আসে। সুতরাং আমাদের উচিত এই নি‘আমতকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যবহার করা এবং আল্লাহর নাফরমানিতে ব্যবহার না করা। আর আমাদের এটা জানা উচিত যে, যে ব্যক্তি তার পাপকাজে আল্লাহর নি‘আমতকে ব্যবহার করে, আশংকা হয় যে, সে হয়ত নি‘আমতটি হারিয়ে ফেলবে।
দ্বিতীয় বিষয় হল: এই বিষয় স্মরণ করা যে, আমরা মহান আল্লাহর সামনে এই দৃষ্টির ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হব। যখন তুমি তোমার রুমে একাকী বসে দেখতে থাক, তখন তুমি স্মরণ কর যে, অচিরেই তোমাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। আর অচিরেই তিনি তোমাকে এই দৃষ্টি এবং তোমার দেখা এই দর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। “তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তার রব অতি সত্বর কথা বলবেন। তার ও আল্লাহর মাঝখানে কোন তর্জমাকারী থাকবে না। এরপর সে তাকাবে ডান দিকে, তখন তার আগের ‘আমাল ব্যতীত সে আর কিছু দেখবে না। আবার তাকাবে বাম দিকে, তখনো আগের ‘আমাল ব্যতীত আর কিছু সে দেখবে না। আর সামনে তাকাবে তখন সে জাহান্নাম ব্যতীত আর কিছুই দেখতে পাবে না। কাজেই জাহান্নামকে ভয় কর...।”
📚[সহীহ বুখারী, হা/৭৫১২; সহীহ মুসলিম, হা/১০১৬] সুতরাং সে এটা স্মরণ করবে।

তৃতীয় বিষয় হল: এটা স্মরণ করা যে, তার সাথে আল্লাহ রয়েছেন। আল্লাহ তাকে দেখছেন, শুনছেন এবং তিনি তার সম্পর্কে জানেন। আল্লাহ তাঁর শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং জ্ঞান সহকারে তার সাথে আছেন। সুতরাং তুমি যখন একাকী থাক এবং এসব ফিল্ম ও নোংরা জিনিস দর্শন করো, তখন তুমি স্মরণ করো যে, আল্লাহ তোমাকে এখন দেখছেন এবং আল্লাহ তোমার অবস্থা সম্পর্কে জানেন। তুমি বলো না যে, তুমি নির্জনে রয়েছ। বরং একথা স্মরণ করো যে, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।... (এভাবে দীর্ঘ নসিহত করেছেন শাইখ)”
► [দ্র: www.ajurry.com/vb/showthread.php?t=36833]
.

❒ মাস্টারবেশন থেকে আলেমদের সতর্কীকরণ:

এবার আসি মাস্টারবেশন তথা হস্তমৈথুনের আলোচনায়। এ ব্যাপারে আমাদের আলেমদের অসংখ্য ফাতওয়া রয়েছে। এমনকি ইয়েমেনের মুহাদ্দিছ ও ফাক্বীহ ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) ১৪১১ হিজরীতেই মাস্টারবেশনের উপর স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থটি ইমাম শাওকানীর লেখা “বুলূগুল মিনা ফী হুকমিল ইসতিমনা” গ্রন্থের সাথে একই মলাটে “তুহফাতুশ শাব্বির রব্বানী ফির রদ্দি আলাল ইমাম মুহাম্মাদ বিন আলী আশ-শাওকানী” শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। এই গ্রন্থের ৪৫ পৃষ্ঠা থেকে ৫৮ পৃষ্ঠা অবধি শাইখ মুক্ববিল শরিয়তের দলিল দিয়ে মাস্টারবেশনকে হারাম প্রমাণ করেছেন। এরপর ৫৯ পৃষ্ঠা থেকে ৭৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মাস্টারবেশনের অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আর ৭৫ পৃষ্ঠা থেকে ৮৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মাস্টারবেশন থেকে বাঁচার উপায় বর্ণনা করেছেন।
আমাদের আলেমগণ সতর্ক করেননি? এসব উঠতি যুবকরা পর্নোগ্রাফি আর মাস্টারবেশন সম্পর্কে কিছু আর্টিকেল লিখে এমন ভাব ধরেছে, যেন মস্তবড় দাওয়াতী কাজ করে ফেলেছে! আর এই অহংকারে সালাফী আলেমদের শানে নোংরা মন্তব্য করা থেকেও পিছপা হচ্ছে না। আর ‘সহীহ আক্বীদাহ’ বলে টিটকারি করছে। ওহে স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মূর্খ সম্প্রদায়, তোদের জন্মের আগে আমাদের আলেমগণ এসব বিষয়ে সতর্ক করে গেছেন!

✍ ইমাম ইবনু বায (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন -
“হস্তমৈথুনকে ‘আদাতে সির্রিয়্যাহ’ তথা ‘গুপ্তঅভ্যাস’ বলা হয়। এই কাজ নাজায়েয। বরং এথেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। যেহেতু এতে ভয়াবহ ক্ষতি রয়েছে, যা চিকিৎসকগণ উল্লেখ করেছেন।
হস্তমৈথুনে অনেক ক্ষতি রয়েছে এবং মহান আল্লাহর এই বাণীর বিরোধিতাও রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “(মু’মিনদের বৈশিষ্ট্য হল) যারা তাদের নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী। তবে তাদের স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীরা ছাড়া, নিশ্চয়ই এতে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।” [সূরা মুমিনূন: ৫-৭]
হস্তমৈথুন এদের (স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী) ছাড়া অন্য বিষয়। স্ত্রী ছাড়া অন্য বিষয়। স্ত্রীর মাধ্যমে পরিতৃপ্ত হওয়া হল সহবাস। এটা ছাড়া যা কিছু আছে তাই নাজায়েয। আর তা হল- ব্যভিচার, সমকামিতা, হস্তমৈথুন প্রভৃতি। এগুলো অন্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। হস্তমৈথুন করা নাজায়েয। আর এতে যে অসংখ্য অনিষ্টকর বিষয় রয়েছে, মু’মিনের উচিত তা থেকে সতর্ক থাকা।”
► [দ্র: https://tinyurl.com/yawta7pg (শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের আর্টিকেল লিংক)]
.

✍ শাইখ আব্দুল আযীয আর-রাজিহী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন হস্তমৈথুন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে এর কারণে আসা শারীরিক ক্ষতির কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন—
“শারীরিক ক্ষতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত হল:—
১. হস্তমৈথুন দৃষ্টিশক্তি দুর্বল করে।
২. প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৩. আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বজভঙ্গ তৈরি করে।
৪. বিশেষ অঙ্গগুলোর বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়, যেমন: মূত্রনালি, অণ্ডকোষ প্রভৃতি।
৫. অণ্ডকোষে প্রদাহ সৃষ্টি করে, ফলে ব্যক্তির দ্রুতপতন হয়ে যায়।
৬. মেরুদণ্ডের হাড়ে ব্যথা হয়, যেখান থেকে স্পার্ম নির্গত হয়।
৭. কিছু অঙ্গে কাঁপুনি শুরু হয়, যেমন: দুই পা।
এছাড়াও এর ফলে বোধশক্তি লোপ পায়। যা ব্যক্তিকে নির্বুদ্ধিতা ও মানসিক বিকৃতির দিকে ঠেলে দেয়।...”
► [দ্র: www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=89345]
.

✍ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) মাস্টারবেশনে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করে বলেছেন—
“গুপ্তঅভ্যাস তথা হস্তমৈথুন হারাম। অধিকাংশ আলেমগণের মতে এটা কোন অবস্থাতেই বৈধ নয়। সুতরাং তোমার উপর আবশ্যক, আল্লাহর কাছে তাওবাহ করা, এই কাজের দিকে আর ফিরে না যাওয়া এবং ওইসব বিষয় থেকে দূরে থাকা, যা তোমার যৌন উত্তেজনা উসকে দেয়। যেমনটি তুমি উল্লেখ করেছ যে, তুমি টিভি দেখ, ভিডিও দেখ, এবং উত্তেজক দৃশ্য দর্শন করো। তোমার উপর আবশ্যক হল এসব দৃশ্য থেকে দূরে থাকা এবং এসব উত্তেজক দৃশ্যের উপর ভিডিও বা টিভি অন না করা। কেননা এটা অনিষ্টের উপকরণ। মুসলিম নিজে থেকে অনিষ্টের দরজা বন্ধ করে দিবে এবং কল্যাণের দরজা উন্মুক্ত করবে। তোমার কাছে যে বিষয়েই কোন অনিষ্ট ও ফিতনাহ আসুক না কেন, তুমি তা থেকে দূরে থাকবে। আর ফিতনাহ ও অকল্যাণের সবচেয়ে বড় মাধ্যমগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল এ সমস্ত ফিল্ম এবং সিরিয়াল, যেসব সিরিয়ালে সম্মোহনকারী নারীদের আবির্ভাব ঘটে এবং বিভিন্ন উত্তেজক বিষয়ের আবির্ভাব ঘটে। সুতরাং তোমার উপর আবশ্যক হল এসব থেকে দূরে থাকা এবং এগুলোর রাস্তা বন্ধ করা।”
► [দ্র: https://tinyurl.com/yclcqx7j (ইসলামওয়ে ডট নেটের আর্টিকেল লিংক)]
.

✍ ইমাম ইবনু বায (রহিমাহুল্লাহ) একজন মাস্টারবেশনে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করতে গিয়ে সুন্দর কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে আমার ভাই, তুমি যদি বিবাহে সক্ষম হও, তাহলে সত্বর বিবাহ কর। তুমি দ্রুত বিবাহের দিকে ধাবিত হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর। এ ব্যাপারে কিছু ধার-দেনা করে হলেও তুমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং দ্রুত বিবাহ কর। তুমি তোমার সুস্থতাকে গনিমত হিসেবে গ্রহণ কর। বিপদ থেকে দূরে থাকাকে গনিমত হিসেবে গ্রহণ কর। তুমি যদি বিবাহ করতে অসমর্থ হও, তাহলে তুমি এই উত্তেজনা প্রশমনকারী উপকরণের দ্বারস্থ হও। সেটা রোযার মাধ্যমে হতে পারে। কেননা রোযা শয়তানের ক্ষেত্রকে সংকুচিত করে। অথবা তা অষুধের মাধ্যমে হতে পারে, যেসব অষুধ এই বিষয়কে প্রশমন করে। তুমি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাও।...”
► [দ্র: https://binbaz.org.sa/old/29429]

এগুলো অতি সামান্য নমুনা দেওয়া হল। এসব ছাড়াও এ ব্যাপারে আমাদের আলেমগণের আরও অনেক লেখনী ও লেকচার ক্লিপস আছে।

❒ বাংলাভাষী দা'ঈগণঃ

⦁ বাংলাভাষী দা‘ঈগণের মধ্যে উস্তায আব্দুল হামীদ ফাইযী  তাঁর “যু্ব-সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান” গ্রন্থের (১ম সংস্করণ: ২০১০ খ্রি.) ২৪৫-২৫০ পৃষ্ঠায় মাস্টারবেশনের অপকারিতা এবং এথেকে বাঁচার জন্য ১৭ টি উপদেশ বর্ণনা করেছেন।

⦁ এতদ্ব্যতীত আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব তাঁর “কে বড় ক্ষতিগ্রস্ত” গ্রন্থের (২য় প্রকাশ: ২০০৪ খ্রি.) ৫৮-৬০ পৃষ্ঠায় মাস্টারবেশনের বিধান এবং এর অপকারিতা বর্ণনা করেছেন।

এছাড়া আমাদের বাংলাভাষী এক ঝাক দা'ঈ র লেকচার রয়েছে পর্ণোগ্রাফি ও মাস্টারবেশনের ক্ষতি এবং তার থেকে বাঁচার উপায় সম্বলিত!

⦁ উস্তায আব্দুল্লাহ হামিদ ফাইজি হাফিয্বাহুল্লাহ
► লিংকঃ https://youtu.be/hp-cpsG49ak

⦁ উস্তায শহিদুল্লাহ খান মাদানী হাফিয্বাহুল্লাহ -
► লিংকঃ https://youtu.be/yodzYHUgpNU

⦁ উস্তায মতিউর রাহমান মাদানী হাফিয্বাহুল্লাহ -
► লিংকঃ https://youtu.be/Fr7UA2Mx__w
► লিংকঃ https://youtu.be/Ktnermp9BE0
► লিংকঃ https://youtu.be/YV0IqiKF1এয়া

⦁ উস্তায নাসিল শাহরুখ হাফিয্বাহুল্লাহ -
► https://youtu.be/iEMVBnmm7তস

⦁ ড.আবু বক্কর মুহাম্মাদ যাকারিয়া হাফিয্বাহুল্লাহ -
► লিংকঃ https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2274872959467949&id=1787338651554718

নিশ্চয়ই আল্লাহই পারেন পথভ্রষ্টদের পথ দেখাতে। এই দীর্ঘ আলোচনায় কারো যদি কোনো উপকার হয়ে থাকে, নিশ্চয়ই তার সকল প্রশংসা আল্লাহর!  আর যদি এই আলোচনায় কোনো ভ্রান্তি থাকে তা নিশ্চয়ই আমাদের সীমাবদ্ধতা!

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা- আমাদের সবাইকে উপরিউক্ত গুপ্ত পাপ থেকে হিফাযত করূন, আমাদের অন্তরসমুহকে ফিতনাকে ফিতনা হিসেবে গন্য করার তাক্বওয়াটুকু দান করূন, ,আমাদের অন্তরসমুহ শয়তানের জিম্মায় ছেড়ে না দিয়ে বরং দ্বীনের সাথে আমাদের অন্তরকে বেঁধে রাখার শক্তি ও ঈমান দান করুন, সর্বপরি, আহলুস সুল্লাহ-র উলামায়ে ক্বেরামের ইত্তেবাহ এবং তাদের উপর বাতিলপন্থীদের আরোপিত ভিবিন্ন মিথ্যা অভিযোগ খন্ডনের  তাওফ্বীক দান করূন।
[আ - মীন ]

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

❒ আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী
     আখতার বিন আমীর।

■ সহযোগিতায়ঃ [এক দ্বীনী ভাই]

Thursday, October 25, 2018

হিন্দ কি হামযাহকে হত্যার জন্য ওয়াহশীকে নিয়োগ দিয়েছিলেন এবং তার কলিজা চিবিয়ে



আমাদের মাঝে বহুল প্রচলিত ঘটনা হচ্ছে, হিন্দ (রা.) হামযাহ (রা.)-কে হত্যার জন্য ওয়াহশী (রা.)-কে নিয়োগ দেন। ওয়াহশী হামযাহকে হত্যা করলে হিন্দ হামযাহ (রা.) এর বুক ভেড়ে কলিজা বের করে তা চিবিয়ে খান বা খাওয়ার চেষ্টা করেন।

ওয়াহশীকে হিন্দ নিয়োগ দেন - এরুপ বর্ণনা পাওয়া যায় না। বরং সহীহ বুখারীতে এসেছে, ওহশীকে নিয়োগ দেন জুবায়ের বিন মুতঈম। এই ভুল তথ্য ছড়িয়ে যাওয়ার পিছনের শক্তি হচ্ছে রাফেজী বা শি'আ। কারণ মু'আবিয়া (রা.) তাদের জাত শত্রু। আর মু'আবিয়া (রা.) এর মা হলেন হিন্দ (রা.)।  মু'আবিয়া ও তাঁর পরিবারকে কলুষিত করার হীনপ্রচেষ্টা সরূপ তারা এমন নির্জলা মিথ্যা ঘটনা সমাজে ছড়িয়ে দিয়েছে।

কলিজা চিবানোর ঘটনা বেশ কিছু সানাদে আসলেও সব সানাদই যঈফ এবং মাতনে নাকারাত রয়েছে। ফলে সবকটি সানাদ মিলেও তা হাসানের পর্যায়ে উন্নীত হবে না। যদিচ আল্লামা শুয়াইব আরনাঊত রাহিমাহুল্লাহ হাসান বলেছেন। তাঁর তাহক্বীক্ব এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।

জুবায়ের বিন মুতঈম ওহশীকে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা বুখারীতে এভাবে এসেছে:

জা‘ফার ইবনু ‘আমর ইবনু ‘উমাইয়াহ যামরী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু আদী ইবনু খিয়ার (রহ.)-এর সঙ্গে ভ্রমণে বের হলাম। আমরা যখন হিম্স-এ পৌঁছলাম তখন ‘উবাইদুল্লাহ (রহ.) আমাকে বললেন, ওয়াহ্শীর কাছে হামযাহ (রা.)-এর শাহাদাত অর্জনের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে চাও কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। ওয়াহ্শী তখন হিম্সে বসবাস করছিলেন। আমরা তার সম্পর্কে (লোকেদেরকে) জিজ্ঞেস করলাম। আমাদেরকে বলা হল, ঐ তো তিনি তার প্রাসাদের ছায়ায় (বসে আছেন) যেন পশমহীন মশক। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা গিয়ে তার থেকে সামান্য কিছু দূরে থাকলাম এবং তাকে সালাম করলাম। তিনি আমাদের সালামের জবাব দিলেন। জা‘ফার (রহ.) বর্ণনা করেন, তখন ‘উবাইদুল্লাহ (রহ.) এমনভাবে পাগড়ি পরিহিত ছিলেন সে, ওয়াহ্শী তার দু’ চোখ এবং দু’ পা ব্যতীত আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। এ অবস্থায় ‘উবাইদুল্লাহ (রহ.) ওয়াহ্শীকে বললেন, হে ওয়াহ্শী! আপনি আমাকে চিনেন কি? বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তখন তাঁর দিকে তাকালেন, অতঃপর বললেন, না, আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে চিনি না। তবে এটুকু জানি যে, আদী ইবনু খিয়ার উম্মু কিতাল বিনতু আবুল ঈস নাম্নী এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। মক্কা্য় তার একটি সন্তান জন্মিলে আমি তার ধাত্রী খোঁজ করছিলাম, তখন ঐ বাচ্চাকে নিয়ে তার মায়ের সঙ্গে গিয়ে ধাত্রীমাতার কাছে তাকে সোপর্দ করলাম। সে বাচ্চার পা দু’টির মতো আপনার পা দু’টি দেখতে পাচ্ছি।

বর্ণনাকারী বলেন, তখন ‘উবাইদুল্লাহ (রহ.) তার মুখের আবরণ সরিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হামযাহ (রা.)-এর শাহাদাত সম্পর্কে আমাদেরকে বলবেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বাদর যুদ্ধে হামযাহ (রা.) তুআইমা ইবনু ‘আদী ইবনু খিয়ারকে হত্যা করেছিলেন। তাই আমার মনিব জুবায়র ইবনু মুতঈম আমাকে বললেন, তুমি যদি আমার চাচার বদলা হিসেবে হামযাকে হত্যা করতে পার তাহলে তুমি মুক্ত। রাবী বলেন, যে বছর উহূদ পর্বত সংলগ্ন আইনাইন পর্বতের উপত্যকায় যুদ্ধ হয়েছিল সে যুদ্ধে আমি সবার সঙ্গে বেরিয়ে যাই। এরপর লড়াইয়ের জন্য সকলে সারিবদ্ধ হলে সিবা নামক এক ব্যক্তি ময়দানে এসে বলল, দ্বনদ্ব যুদ্ধের জন্য কেউ প্রস্তুত আছ কি?

ওয়াহ্শী বলেন, তখন হামযাহ ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রা.) তার সামনে গিয়ে বললেন, ওহে মেয়েদের খতনাকারিণী উম্মু আনমারের পোলা সিবা! তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে দুশমনী করছ? বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তার উপর প্রচন্ড আঘাত করলেন, যার ফলে সে বিগত দিনের মতো গত হয়ে গেল। ওয়াহ্শী বলেন, আমি হামযাহ (রা.)-কে কতল করার উদ্দেশে একটি পাথরের নিচে আত্মগোপন করে ওত পেতে বসেছিলাম। যখন তিনি আমার নিকটবর্তী হলেন আমি আমার বর্শা এমন জোরে নিক্ষেপ করলাম যে, তার মূত্রথলি ভেদ করে নিতম্বের মাঝখান দিয়ে তা বেরিয়ে গেল। ওয়াহ্শী বলেন, এটাই হল তাঁর শাহাদাতের মূল ঘটনা। এরপর সবাই ফিরে এলে আমিও তাদের সঙ্গে ফিরে এসে মক্কা্য় অবস্থান করতে লাগলাম। এরপর মক্কা্য় ইসলাম প্রসারিত হলে আমি তায়েফ চলে গেলাম। কিছুদিনের মধ্যে তায়েফবাসীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দূত প্রেরণের ব্যবস্থা করলে আমাকে বলা হল যে, তিনি দূতদের প্রতি উত্তেজিত হন না। তাই আমি তাদের সঙ্গে রওয়ানা হলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে গিয়ে হাযির হলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন, তুমিই কি ওয়াহ্শী? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমিই কি হামযাকে কতল করেছিলে? আমি বললাম, আপনার কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছে ব্যাপার তাই। তিনি বললেন, আমার সামনে থেকে তোমার চেহারা কি সরিয়ে রাখতে পার? ওয়াহ্শী বলেন, তখন আমি চলে আসলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর মুসাইলামাতুল কায্যাব[1] আবির্ভূত হলে আমি বললাম, আমি অবশ্যই মুসাইলামার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হব এবং তাকে হত্যা করে হামযাহ (রা.)-কে হত্যা করার ক্ষতিপূরণ করব। ওয়াহ্শী বলেন, এক সময় আমি দেখলাম যে, হালকা কালো বর্ণের উটের মত উষ্কখুষ্ক চুলবিশিষ্ট এক ব্যক্তি একটি ভগ্ন দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। তখন সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার বর্শা দ্বারা তার উপর আঘাত করলাম এবং তার বুকের উপর এমনভাবে বসিয়ে দিলাম যে, তা তার দু’ কাঁধের মাঝ দিয়ে বেরিয়ে গেল। এরপর আনসারী এক সহাবী এসে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং তলোয়ার দিয়ে তার মাথার খুলিতে প্রচন্ড আঘাত করলেন।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ফাযল (রহ.) বর্ণনা করেছেন যে, সুলাইমান ইবনু ইয়াসির (রহ.) আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা.)-কে বলতে শুনেছেন যে, ঘরের ছাদে একটি বালিকা বলছিল, হায়, হায়, আমীরুল মু’মিনীন (মুসাইলামাহ)-কে এক কৃষ্ণকায় গোলাম হত্যা করল। (সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ ৬৪/ মাগাযী [যুদ্ধ], হাদিস নম্বরঃ ৪০৭২)

[1] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইনতিকালের পর কতিপয় লোক নুবুওয়াতের মিথ্যা দাবী করেছিল যাদের মধ্যে মুসাইলামাহ কাযযাব ছিল অন্যতম। আবূ বাকর তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং এই যুদ্ধেই ওয়াহশী মুসাইলামাহকে হত্যা করেন এবং হামযাহ (রা.)-কে হত্যার কাফফারা আদায় করেন।

অতএব, সমাজে প্রচলিত এ ঘটনা ভিত্তিহীন।

সংকলনঃ
আব্দুল্লাহ মাহমুদ

প্রচারেঃ

সুন্নাহর পথযাত্রী ব্লগ 

❒ সাইয়িদুল ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ :



রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।


ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻰْ ﻵ ﺇِﻟﻪَ ﺇﻻَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻰْ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ، ﺃَﻋُﻮْﺫُﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ، ﺃﺑُﻮْﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻰَّ ﻭَﺃَﺑُﻮْﺀُ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻰْ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْﻟِﻰْ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻻَﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮْﺏَ ﺇِﻻَّ ﺃَﻧْﺖَ -


উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রববী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউলাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।


অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’।

----------------------------------------


❒ রেফারেন্সঃ 

বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪।

❒ ডা.মতিয়ার রাহমান (মুতাজিলা) ফিতনা ও সতর্কতা!

আসসালা-মু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু।

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা-র জন্য এবং অসংখ্য সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি।

প্রিয় দ্বীনী ভাই ও বোনেরা -

চারদিকে হ্যামিলনের বাশিওয়ালাদের উৎপাতে যুব সমাজ দিকভ্রান্ত! শত কষ্টে এক গর্ত থেকে  দ্বীনের পথে উঠে আসা সেই দূঢ় প্রত্যয়ী  যুবকই আবার আরেক গর্তে পড়ে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে প্রতিনিয়ত! 

কারো তুখোড় লেখনি অথবা সুমধুর  লেকচার হয়ত আপনার মন কেড়ে নিতে পারে কিন্তু সেইসাথে আপনাকে পথভ্রষ্টও করে দিতে পারে!

এইজন্যই একজন সালাফ বলেছিলেন-"দ্বীনের ব্যপারে “প্রকৃত আলেম” ছাড়া অপরিচিত, অজ্ঞ লোকদেরকে আলেম মনে করে তাদের কথা বিশ্বাস করবেনা। যদি করো, তাহলে যেন তুমি তোমার দ্বীনকেই ধ্বংস করলে"! 

ঠিক তেমনি একজন  বাতিল আক্বীদার ধারক ও বাহক এবং প্রচারকারী হলেন মতিয়ার রহমান নামের একজন বাংলাদেশী "ডাক্তার"! 


❒ প্রথমেই জেনে নিন, কে এই ডা.মতিয়ার?  

----------------------------------------------------------

প্রফেসর ডা.মতিয়ার রহমান  খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার আরজি-ডুমুরিয়া গ্রামের জন্মগ্রহন করেন!পেশাগত জীবনে তিনি  একজন চিকিৎসক ও সমাজসেবক হিসেবেই পরিচিত!তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান, এছাড়া ইনসাফ বারাকাহ কিডনী এন্ড জেনারেল হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান!


 ১৯৭৯ সালের দিকে তিনি ইরাকে চলে যান এবং ইরাকের জেনারেল হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে চার বছর চাকরি করেন। মুলত সেখানে গিয়ে ইরাকিদের ভাষা (আঞ্চলিক আরবি) শুনে তিনি অবাক হন এবং তার কাছে তখন ই কোরআনের ভাষাটা শিখার আগ্রহ জাগে! কোরআন পড়া শেষ করার পরপর ই তিনি  হাদীস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন!

কোন স্বনামধন্য স্কলারের সহবত ছাড়াই তিনি দ্বীনের জ্ঞান অর্জন অত:পর তা বিলিকরণে দেশে প্রতিষ্ঠা করেন "কোরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশন" (কিউ আর এফ) যার চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেই দায়িত্ব পালন করছেন!

(তার বইয়ে লিখক পরিচিতি দ্রষ্টব্য) 


এখন প্রশ্ন হচ্ছে,

উপরোক্ত  এই যোগ্যতাগুলোই কি কারো “আলেম” হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ অথবা এমন ব্যক্তি থেকে দ্বীনের ইলম নেওয়া বৈধ কিনা? ইসলাম কি আমাদের অধো এই শিক্ষা দেয় যে, এই গুণগুলো কারো মাঝে থাকলেই সে আলেম হয়ে যাবে? অথবা তার কাছ থেকে দ্বীনের জ্ঞান নেওয়া বৈধ হয়ে যাবে? আমাদের পূর্ব যুগের মুসলমানেরা কি এইভাবে মানুষকে দ্বায়ী,আলেম হিসেবে গ্রহণ করতো অথবা দ্বীনের জ্ঞান নেওয়া বৈধ মনে করতো?  


যাকে সম-সাময়িক কোন আলেমরা চিনেন না, বা যিনি  আলেমদের কাছ থেকে দ্বীন শিখেনি, তাঁদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখেনা, তাদের সহবতে থাকেন নি, এমন ব্যক্তি থেকে আপনি অন্ধের মত কি করে দ্বীনের জ্ঞান নিচ্ছেন?  অথচ বাজার থেকে দুই টাকার একটা চকলেট কিনতে গেলেও আপনি হাজারবার যাচাই বাচাই করেন!তাছাড়া একাধিক আলেমের সতর্কীকরণ স্বত্ত্বেওশুধুমাত্র - ওমুকের লেকচার আমার ভালো লাগে, ওমুকের বই পড়ে বা ওয়াজ শুনে আমার কাছে বড় আলেম/জ্ঞানী ব্যক্তি মনে হয়, ওমুক ব্যক্তি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়েও এই এই খেদমত করছেন ইত্যাদির অযুহাতে শরয়ী ইল্ম নেওয়া কি কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ নয়?

❒ মুতাজিলা ফিতনাঃ-

--------------------------------

শীয়া ও কাদিয়ানী ফেতনার পর এই উম্মাহর সবচেয়ে বড় ফিতনা হল বর্তমান খারিজি, মুতাজিলা ফিতনা! মুতাজিলাদের ফিতনা এতটাই মারাত্মক যে এই ফিত্নায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দ্বীনের পথে আসা কলেজ ইউনিভার্সিটির নতুন ছাত্র ছাত্রীরা। আপনি যদি ভিবিন্ন দল,মতবাদ,ফিরকা সম্পর্কে যথোপযুক্ত জ্ঞান না রাখেন তাহলে এই ফিত্নায় পড়ে যেতে পারেন যেকোন সময়!কারণ,এরা উপরে আয়নাবাজি করে দেখায় যে, এরাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত কিন্তু অন্তরে  নিকৃষ্ট মুতাজিলা, মুর্জিয়া, আশারিয়াহ, কাদরিয়া সংমিশ্রণের সংকরজাত আকীদা লালন করে! তবে এইদের প্রধান আকীদা হল "মুতাজিলা"।


এদেশীয় মুতাজিলা আকিদার লালনকারী ও প্রচার প্রসারে ডা.মতিয়ার রাহমান ও তার কিউ. আর. এফ বেশ জোড়ালো ভুমিকা পালন করছে! সেই সাথে তিনি নিজের বিষাক্ত মতাদর্শকে আওয়ামের মাঝে ছড়িয়ে দিতে বেশ কিছু সেবাও চালু রেখেছেন, তার মধ্যে একটি হল ফ্রি চিকিৎসা, অপরটি হল পানির দরে নিজের লিখিত বই বিক্রয় করা!তাছাড়া আলেমদেরকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে ফটোসেশনের নামে আই ওয়াশও করছেন হামেশাহ!

এই লোকটা একে একে  ইসলামের নানান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর প্রায়  ৪০ এর কাছাকাছি  গ্রন্থ প্রকাশ করেন! যা একজন মুসলিমকে অন্ধকারে তরান্বিত করতে যথেষ্ট! 

তন্মধ্যে কিছু বই হল--

 

✍ Common sense -এর গুরুত্ব কতটুকু এবং কেন’, 


✍  সবচেয়ে বড় গুনাহ শিরিক করা নাকি কোরআনের জ্ঞান না থাকা"?


✍ শাফায়াত দ্বারা কবিরা গুনাহ বা দোযখ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কি"?


✍ "মৃত্যুর সময় ও কারণ প্রচলিত তথ্যটির প্রকৃত ব্যাখ্যা"!


❒ আমাদের আপত্তিঃ-

--------------------------------

কুরআন-হাদীসের পর পরই শরীয়তের তৃতীয় দলীল হিসেবে তিনি  নিজের আক্বল বা বিবেককে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন! কমনসেন্সের গুরুত্ব নিয়ে লিখা বইতে বিস্তারিত পাবেন!

তার স্লোগান টা হল-“কুরআন, হাদীস, আকল”! 

অর্থাৎ  কুরআন  হাদীসের পাশাপাশি নিজের আক্বল দিয়েও বিচার,বিবেচনা করতে হবে! 

তারমানে আওয়ামের হাতে অস্র তুলে দিচ্ছেন আক্বল দিয়ে  হাদীস নির্ণয় করতে!এই কারণেই আক্বলকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে মুতাজিলারা বুখারি,মুসলিমের হাদিসকেও ইনকার করতে দ্বিধাবোধ করেন না!


আহলে সুন্নাহ ওয়া জামায়াতের সকল ইমামের মতে ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সা: এর সুন্নাহ, মানুষের বিবেক-বুদ্ধি নয়। মানুষের বিবেক ও বুদ্ধি যদি কুরআন ও হাদীসের  অনুকুলে হয় এবং কোন তথ্য ও রহস্য বুঝতে সক্ষম হয় তাহলে সেটা গ্রহণীয়। আর যদি কোন বিষয়ের বা হুকুমের রহস্য বিবেক দ্বারা বুঝতে না পারলেও তার উপর বিশ্বাস রাখা জরুরী। এমন কি কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত কোন মাসআলা আপাতদৃস্টিতে মানুষের বিবেকের বিরোধী মনে হলেও বিবেকপ্রসুত কথা বাদ দিয়ে কুরআন ও হাদীসের কথাই মেনে নিতে হবে। কারণ কুরআন ও হাদীসের বাণী ভুলের উর্ধে, আর মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধি ভুলের উর্ধে নয়। 

মুলত,বিবেককে কুরআন ও হাদীছের দলীলের উপর প্রাধান্য দেওয়ার কারণেই  মুতাযেলা সম্প্রদায় দ্বীনের অনেক বিষয় অস্বীকার করেছেন যা কুফুরি পর্যায়ের!

-

 ডা.মতিয়ারের মতে কবিরা গুনাগার ব্যক্তি শাফা"আত পাবেনা!এমনকি সাধারণ কবীরাগুনাহগার মুমিনকেও তিনি চিরস্থায়ী জাহান্নামী মনে করেন! তার লিখিত  "শাফা'আত দ্বারা কবিরা গুনাহ বা দোযখ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কি" বইয়ের দালিলিক জবাব দিয়েছেন  শ্রদ্ধেয় কামাল আহমাদ ভাই তার "কবিরা গুনাগার মুমিনের নাজাত ও সাফা'আত"নামক বইতে!

বই দুইটি পড়ে নিতে পারেন!

-

ডা.মতিয়ারের কাছে শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ নয় বরং সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো কুরআনের জ্ঞান না থাকা। তিনি এই থিউরি টি পেশ করেছেন তার লিখিত বই "সবচেয়ে বড় গুনাহ শিরিক করা নাকি কোরআনের জ্ঞান না থাকা"!!!


প্রশ্ন হল -

বিগত ১৪ শ বছরের মধ্যে কোন "আহলুল ইল্ম" কি এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, শিরিকের চাইতেও বড় গুনাহ, এমনকি সবচেয়ে বড় গুনাহ হল কোরআন না বুঝা ? অথচ তারাই ছিলেন এই উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান!

যেখানে আল্লাহতালা নিজেই বলেছেন শিরিক হচ্ছে সবচেয়ে বড় জুলুম, আল্লাহতালা চাইলে শিরিক ছাড়া সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন অথচ ডা.সাহেবের 

থিউরি অনুযায়ী প্রতিটি মানুষেরই কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জ্ঞান থাকা ফরজ  এবং এই ফরজ তরককারী মুশরিকের চাইতেও বড় গুনাহগার (ইন্নানিল্লাহ...)


একজন আওয়াম কি কোরআনের পরিপূর্ণ (A to Z) জ্ঞান হাসিল করতে সক্ষম অথবা প্রতিটি মানুষকেই কি  মুফাসসির হওয়া জরুরী? 

মুলত আল্লাহর কিতাব তথা আল কুরআনের জ্ঞান সকলেরই থাকা ফরজ তবে তা সমগ্র দ্বীনের কিছু অংশ সম্বলিত আর বাকি জ্ঞানগুলো সকলের থাকা আবশ্যক নয়, তাছাড়া সকলের দ্বারা তা সম্ববও নয় তাই ওলামাদের সেই জ্ঞান থাকলেই আম-জনতার শূন্যস্থান পূরণ হয়ে যায়! অথচ ডাক্তার সাহেব প্রত্যেক মানুষকেই মুফাসসির বানিয়ে দিচ্ছেন! আর যদি আপনি তা না হতে পারেন তবে শিরিকের চাইতেও বড় গুনাহ তে লিপ্ত রয়েছেন! যা একেবারেই নতুন মতবাদ বৈ কিছুই নয়!!


✍ আল্লামাহ ফাওজান হাফিজাহুল্লাহর একটা কথা বারবার মনে পড়েঃ
শাইখ হাফিয্বাহুল্লাহ বলেছেন -
“বর্তমানে অন্য অনেক ফেতনার সাথে এই উম্মত সবচাইতে বড় যে ফেতনার সম্মুখীন সেটা হচ্ছে, অনেক দ্বায়ী আছে যারা ইলম ছাড়া মানুষকে দ্বীনের দিকে আহবান করছে।”

✍ তাইতো বহুদিন পূর্বে শাইখুল ইসলাম ঈমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেন -

“দুনিয়াকে সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে আধা বক্তা, আধা ফকীহ, আধা ডাক্তার এবং আধা ভাষাবিদ। এদের একজন (আধা বক্তা) দ্বীনকে ধ্বংস করে, অপরজন (আধা ফকীহ) দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করে। আধা ডাক্তার মানুষের শরীরকে নিঃশেষ করে। আর আধা ভাষাবিদ ভাষাকে বিনষ্ট করে।”

[মাজমাউল ফাতাওয়াঃ খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-১১৮]

এখন হয়ত পাঠকগন প্রশ্ন করতে পারেন,তারমানে আমরা কি ডা.মতিয়ারকে পুরোপুরি বয়কট করব?

তাদের উদ্দেশ্যে এতটুকুই বলবো - যদি আপনার শারিরিক সমস্যা দেখা দেয় এবং ভাল সার্জন্ট খুঁজে না পান  অথবা  যদি পিত্ত থলিতে অপারেশন করানো জরুরী মনে করেন সেই ক্ষেত্রে আপনি তার পরামর্শ, সেবা, সাজেশন্স নিতে পারেন যেহেতু তিনি একজন বড় মাপের ডাক্তার আর বিষয়টা দুনিয়ার সাথে রিলেটেড! 

 কিন্তু ভুলেও তার লেকচার, বই  বা  লিখনি থেকে দ্বীনের জ্ঞান হাসিল করতে যাবেন না। কেননা তা দ্বীনের সাথে সম্পর্কিত!


✍ এ প্রসঙ্গে ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সিরিন (রহঃ)র একটি সতর্কবাণী উল্লেখ করছি!তিনি বলেছেন,

‎إنَّ هذا العلم دين ؛ فانظروا عمَّن تأخذون دينكم

নিশ্চয় এই ইলম দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং লক্ষ্য রেখো! কার নিকট থেকে তুমি তোমার দ্বীন গ্রহণ করছো।

সর্বশেষ,

❒বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আলেমেদ্বীন ও ফক্বিহ আল্লামাহ মুহাম্মাদ ছলেহ আল উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ'র' একটি তৎপর্যপূর্ণ  বচন দিয়েই শেষ করছি! 

✍শায়খ রাহিমাহুল্লাহ বলেন -
"অনেক মানুষকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, কিন্তু অর্জিত সেই জ্ঞান অনুধাবন করার মতো ক্ষমতা তাদেরকে দেওয়া হয়নি। না বুঝে শুধু কুর'আন মাজীদ ও হাদীস মুখস্থ করাই যথেষ্ট নয়। বরং অবশ্য-ই আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসের মর্মার্থ আপনাকে বুঝতে হবে। 

ঐ লোকদের দ্বারা কতইনা ত্রুটি-বিচ্যুতি সংঘটিত হয়েছে, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসের মর্মবাণী না বুঝেই সেটাকে দলীল হিসেবে পেশ করছে, যার ফলে তাদের অনুসারীদের মাঝে অনেকেই পথভ্রষ্ট হয়েছে।”
আল্লাহু মুস্তা'আন।

❒রেফারেন্সঃ
(ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম, ঈমান অধ্যায়)



নিশ্চয় আল্লাহই পারেন পথভ্রষ্টদের পথ দেখাতে। এই আলোচনায় কারো যদি কোনো উপকার হয়ে থাকে, নিশ্চয় তার সকল প্রশংসা আল্লাহর!  আর যদি এই আলোচনায় কোনো ভ্রান্তি থাকে তা নিশ্চয়ই আমার সীমাবদ্ধতা!

আল্লাহ সুবহানু ওয়া তাআলা আমাদের সকলকে ' আল্লাহর কিতাব তথা "আল কুর'আন" ও "রাসুলের হাদীস' কে সালফে সালেহীনদের মতো করে বুঝে,
এবং  সে-অনুযায়ী বেশী-বেশী নেক আমল করার তাওফিক দান করুন,  আমিন।

❒ সংকলনঃ

আখতার বিন আমীর

(সহযোগীতায় -- একজন দ্বীনীভাই)


❒ প্রচারেঃ

সুন্নাহর পথযাত্রী ব্লগ

Tuesday, August 28, 2018

বর্মা ইস্যুঃ আমার পারসোনাল অবজারভেশন!

বার্মা ইস্যু ও আমার উপলব্ধিঃ
-----------------------------------------

#চিত্র_০১

দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর চলছে ব্যাপক  নির্যাতন! এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রায় সময়ই এক শ্রেণীর অতি আবেগী স্বার্থন্বেষী মহল বিনোদনমুলক, মুখোরোচক কিছু প্রোপাগান্ডা চালায়!  ঘটনাকে তুলে ধরতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে কিছু ভুয়া ছবি। এসব ছবির বহুল অপব্যবহারের কারণে "রোহিঙ্গা ইস্যু" নিয়ে গুগলে সার্চ দিলে সঠিক তথ্য বা ছবি না এসে ভুয়া ছবিগুলো ই বেশি আসে। ফলে এমন একটি সংবেদনশীল ঘটনা সত্য হওয়ার পরেও এটি তার গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। মুসলিম হয়েও একশ্রেণীর আবেগী পাব্লিক  অজ্ঞতার কারনে পরোক্ষভাবে ওই ন্যাড়াদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে, যা নির্যাতিতদের রক্তের সাথে এক ধরনের মশকারার শামিল।

#চিত্র_০২

ফিরে দেখা:
হয়ত অনেকেরই মনে আছে গতবছর যখন বার্মার মুসলিমদের উপর চরম নির্যাতন শুরু হয়েছিল তখন একদল অতিউৎসাহি লোক প্রোপাগান্ডা চালিয়েছিল যে, তাদের তথাকথিত খলিফা নাকি মিয়ানমারে যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছেন! যদিও আজ অবধী তা মিয়ানমারে পৌছায় নি(!) হয়ত কোনদিন পৌছবেও না!

এই প্রসঙ্গে আমি গতকালকে আমার পরিচিত একজন তুর্কি ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞাসা করেছি এর সত্যতা কতটুকু এবং জাহাজটা কবে পৌছবে?
উনার বক্তব্য হচ্ছে -
" মায়ানমারে তুরস্কের নৌবাহিনী/যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে  এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচার। না এরকম কিছুই ঘটেনি। তা ছাড়া আপনি একটু চিন্তা করেই দেখুন, একটি স্বাধীন দেশের উপরে অন্য একটি দেশ কি চাইলেই হামলা করতে পারে? অবশ্যই না।
এমনকি আমেরিকাও পারেনা।
তুরস্ক যদি রহিঙ্গাদের বাঁচাবার জন্য মায়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই চায় তবে এরদোগানকে প্রথমে সেই দেশের সংসদ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সেই সাথে আরও কয়েকটি দেশেকে নিয়ে একটি সাময়িক জোট করতে হবে যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এটা অনেক ব্যায়বহুল এবং ভয়াবহ হতে পারে!কেননা এতে বার্মার পক্ষে চীন,রাশিয়া,কোরিয়া,ইন্ডিয়া দাড়িয়ে যেতে পারে, যার ফলে বিশ্ব যুদ্বও বেধে  যেতে পারে!
সুতরাং জেনেবুজে এমন রিস্ক কেউ নিতে চাইবে না"!

#চিত্র_০৩

মায়ানমার- আরাকানে গত কিছুদিন ধরে মোটামুটি শান্তি বিরাজ করছিল , পরিস্থিতিও আগের  তুলনায় মোটামুটি স্বাভাবিক ছিলো।
হঠাৎ কোথায় থেকে একদল জিহাদি ভাবধারার লোকের আবির্ভাব হলো ,  তারা নিজেদের মুক্তিকামী দাবি করলো! এরা সামান্য শক্তি সঞ্চয় করেই কয়েকটি পুলিশ আস্তানায় হামলা চালালো! কয়েকজন পুলিশ নিহত হলো , এরপর শুরু হলো মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর জান্তার দমন অভিযান!
হয়ত ওরা নিজেরাই খতম হয়ে গেছে কিন্তু ফের বিপদে ফেলে দিয়েছে পুরা আরাকানবাসীকে!
এইভাবে চোরাগুপ্তা হামলা করে কি ফয়দা হল?
শক্তি সামার্থ ছাড়া একটা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সাথে লড়াই করে খামাখা নিরিহ মানুষজনকে হত্যা করার আরেকটা ইস্যু তাদের হাতে তুলে দেওয়া হল।
এখন তারা জংগী দমনের নাম করে যখন তখন হত্যার খেলায় মেতে উঠবে!
শুধু  গত কয়েকদিনে অসংখ্য সাধারণ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে , ঘরছাড়া হয়েছে হাজার হাজার !
পরিস্থিতি আগের যে কোন সময়ের চেয়েও মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে!

#চিত্র_০৪

প্রতিবারের ন্যায় সাউদির বিরুদ্ধে আবার ও চলছে ইখুয়ানি,শিয়া,খারিজিদের তুমুল প্রোপাগান্ডা!
অথচ সৌদিআরবই হল দুনিয়ার একমাত্র দেশ যারা কিনা এই পর্যন্ত প্রায় ৫ লক্ষাধিক বার্মিজদের সরকারীভাবে ফ্রি আকামা দিয়েছে! সাথে চাকুরি এবং
তাদের সন্তানদের স্কুলে  যাওয়ারও ফ্রি ব্যবস্থা করেছে!
সৌদি সরকারের ব্যর্থতা হচ্ছে তারা সারাক্ষণ মিডিয়ার সামনে চাপাবাজি, গলাবাজি এবং ফেইক মায়াকান্না দেখাতে পারেনা!
এইদিক দিয়ে ওদের(বিদ্বেষীদের) তথাকথিত খলিফাগন সফল! কোন সহযোগীতা করুক আর না করুক চাপার জোর থাকলেই হল!ভাবখানা এমন যেন সৌদিআরবই রহিংগাদের হত্যা করছে!
অথচ এশিয়ার এত গুলা মুসলিম দেশ "হা" করে তাকিয়ে রয়েছে কিন্তু আমরা সেইদিকে না তাকিয়ে সৌদি আরবের দিকে তীর ছুড়ছি!!
রহিংগাদের যেকোন সহযোগীতা করা কাদের জন্য সহজ ছিল? আরব নাকি আমাদের?

#চিত্র_০৫
এবার বলি ছবি প্রসঙ্গঃ
হ্যা এমন সব ছবি প্রকাশ পাচ্ছে যার সবগুলই রহিঙ্গাদের না। বিশ্বাস না হলে গুগলে পিক আপলোডে গিয়ে সার্চ করে দেখতে পারেন।
তবে রহিঙ্গাদের উপরে ঠিক ঐ নির্যাতনই হচ্ছে যা আপনারা প্রকাশিত ফটো/ভিডিও গুলোতে দেখছেন।
আর যারা রহিঙ্গা নির্যাতনের প্রসঙ্গটাকে পুরাপুরি ভুয়া আর অপপ্রচার বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন তাদের জন্য আমার পরামর্শ হচ্ছে,, "আপনারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে যান""

#সতর্কীকরণঃ মায়ানমারে মুসলিম নির্যাতন হচ্ছে তাই নিজ দেশের বৌদ্ধদের উপরে হামলা করার জন্য যারা উস্কানি দিচ্ছেন তারা এবার থামেন।
ইসলাম আপনাকে সেই অধিকার দেয়নি। আপনার উস্কানিতে কেও যদি বৌদ্ধদের উপরে হামলা করেই বসে তবে মনে রাখবেন এর জবাব আপনাকে দিতেই হবে, মৃত্যুর আগে অথবা পরে।

আখতার বিন আমীর।

আহ্লুস সুন্নাহ

▌বিবাহ : কিছু পরামর্শ - [ করনীয় ও বর্জনীয় ]

❒ প্রারাম্ভিকা, বর্তমানে যুবক যুবতীদের অবস্থা হল, তারা পাপাচার করেও পরিতৃপ্ত হচ্ছে না বরং পাপাচারের নিত্য-নতুন পদ্ধতি খুঁজে বেড়াচ্ছে।...