আসসালা-মু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা-র জন্য,
যিনি বলেছেন “যে ব্যক্তি আমার কোন অলীর (খাঁটি বান্দা) সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করব।”
[সহীহ বুখারী, হা/৬৫০২]
তিনি আরও বলেছেন “ধ্বংস প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের জন্য।”
[সূরাহ জাছিয়াহ: ৭]
এবং অসংখ্য সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি, যিনি বলেছেন,
,مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِىَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِىَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ يَصْرِفَ بِهِ وُجُوهَ النَّاسِ إِلَيْهِ أَدْخَلَهُ اللهُ النَّارَ
যে ব্যক্তি ইলম শিখে এজন্য যে, তার দ্বারা সে আলেমদের সাথে বিতর্ক করবে ও মূর্খদের সঙ্গে ঝগড়া করবে কিংবা মানুষকে তার দিকে আকৃষ্ট করাবে,
তাহলে আল্লাহতালা তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
📚[তিরমিযী হা/২৬৫৪, সনদ হাসান; মিশকাত হা/২২৫]
তিনি আরও বলেছেন “ আবেদের ওপর আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব সকল তারকার ওপর চাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের মতো। নিশ্চয় আলেমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ দিনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী বানান না। তাঁরা কেবল ইলমের ওয়ারিশ বানান। অতএব যে তা গ্রহণ করে সে পূর্ণ অংশই পায়।”
📚[সুনানে তিরমিযী : ২৬৮২]
❒ প্রারম্ভিকা,
এ যুগের মুসলমানরা একের পর এক মহাবিপদে পতিত হচ্ছে! তাদেরকে চতুর্দিক দিয়ে ফিতনা ফাসাদে ঘিরে রেখেছে এবং অনেক মুসলমানই সে ফিতনার সহজ শিকার হয়ে যাচ্ছে। তাদের গুনাহ ও অসৎকাজগুলো প্রকাশ পাচ্ছে এবং তারা মানুষকে নির্ভয়ে নির্লজ্জভাবে গুনাহের দিকে আহ্বান করছে। তেমনি একটি গুপ্ত পাপ "পর্নোগ্রাফি" নামে এক বিষাক্ত নেশা আজ আমাদের পুরো সমাজকে ছেয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশের মত এক মুসলিম অধ্যুষিত দেশে আজ শিশু, যুবক, বৃদ্ধ নির্বিশেষে এই বিষাক্ত নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে।
যার ফলে সমাজের মধ্যে ধর্ষনের মতো জঘন্য কাজগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বর্তমানে পর্ণগ্রাফির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে কম্পিউটার ,মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে! বলা যেতে পারে, এটা শয়তানের একটা মারাত্নক ও অব্যার্থ অস্ত্র । শয়তান এই অস্ত্র দ্বারা মানুষের মনে খুব সূক্ষভাবে আস্তে আস্তে স্রষ্টা বিষয়ে সন্দেহ তৈরী করে এবং মানুষের ঈমান ছিনিয়ে নেয় ।
.
আমাদের মন নামক পাত্র প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো কিছুতে ভরাট থাকবেই। ঘুম ছাড়া এই পাত্রকে খালি রাখা যায় না। তবে পাত্রে থাকা বস্তুকে পরিবর্তন করে দেয়ার শক্তি আমাদের দেয়া হয়েছে। খারাপ চিন্তা মনে জাগ্রত হওয়াটা দোষ নয়, দোষ তো তখন হবে যখন তাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়। আপনি যদি মনে উদয় হওয়া কুচিন্তাকে তাৎক্ষণিক প্রতিহত না করেন, সে আপনাকে কাজ করিয়ে ছাড়বে। আজ হোক কাল হোক, আপনার একটি কুচিন্তার খারাপ প্রভাব আপনার কাজে প্রকাশ পাবেই। শুধু পর্ন নয়, যে কোনো নেশার বিষয়টাই এমন।
যাইহোক, পর্নোগ্রাফি কিংবা মাস্টারবেশনের মত ভয়াবহ গুপ্ত পাপগুলি খুব বেশি আকারে হওয়ার কারণ হলো আল্লাহর দীনকে অবজ্ঞা, তাঁর নির্ধারিত সীমারেখা ও শরি‘আতের প্রতি অসম্মান এবং আল্লাহর শরি‘আত বাস্তবায়নে বহু মুসলমানের অবহেলা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ থেকে বিরত থাকা, সর্বপরি অন্তরে আল্লাহর ভয় হ্রাস পাওয়া!
আল্লাহর দরবারে খাস তাওবা, তাঁর আদেশ-নিষেধকে সম্মান প্রদর্শনসহ অজ্ঞলোকদেরকে এসব ফিতনা ও মসিবত থেকে ফিরিয়ে আনা ও সঠিক অবকাঠামোতে নিয়ে আসা এবং এসব পাপাচার রোধে করনীয় সম্পর্কে সালাফী উলামাগণ সুবিন্যাস্ত দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন যা আজ অব্দি চলমান রয়েছে!
❒ এবার মুল প্রসংগে আসা যাক,
গত কয়েকদিন আগে " পর্নোগ্রাফিঃ মানবতার জন্য হুমকি "নামক একটি পেজে যুবকদের পর্নাসক্তির উপর একটি আর্টিকেল পড়লাম, যেখানে এ্যাডমিন সাহেব
জাহলাতের কারনে বা ফিরাসাতের অভাবে বেশ কিছু খেয়ানত এবং তোহমত (অপবাদ) দিয়েছেন সত্যবাদী উলামায়ে ক্বেরামের উপর! যথাঃ
১. সহীহ আক্বীদাহ’ নিয়ে কটাক্ষ!
২. আলেমগন বাস্তবতা বিবর্জিত জনবিচ্ছিন্ন!
৩. যুবকরা ফিত্নায় ডুবে আছে কিন্তু উলামাগন বেখবর!
৪. আলেমগন জিম্মাদারী আদায় করছেন না!
৫. বিদাতিদের সাথে একই পাল্লায় সালাফী উলামাদের ওজন করা!
[কমেন্ট বক্সে স্কিন শট দ্রঃ]
■ জবাবঃ
আমাদের আলেমগণ আক্বীদাহ ও তাওহীদের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ ক্বুরআন ও সুন্নাহয় যে এর উপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সবার আগে কিসের দা‘ওয়াত দিতে হবে? ইসলাম কী বলছে দেখেছেন? দেখুন ভালো করে -
✍ যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয ইবনু জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-কে ইয়েমেন পাঠালেন, তখন তিনি তাঁকে বললেন,
«إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَى أَنْ يُوَحِّدُوا اللهَ تَعَالَى فَإِذَا عَرَفُوا ذ‘لِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ فَإِذَا صَلَّوْا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةً فِي أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ غَنِيِّهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فَقِيرِهِمْ فَإِذَا أَقَرُّوا بِذَلِكَ فَخُذْ مِنْهُمْ وَتَوَقَّ كَرَائِمَ أَمْوَالِ النَّاسِ».
“তুমি আহলে কিতাবদের একটি কাওমের কাছে যাচ্ছ। অতএব, তাদের প্রতি তোমার প্রথম আহবান হবে- তারা যেন আল্লাহর একত্ববাদকে (তাওহীদকে) মেনে নেয়। তারা তা জেনে নিলে তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ্ দিনে রাতে তাদের প্রতি পাঁচ বার সালাত ফরজ করে দিয়েছেন। যখন তারা সালাত আদায় করবে, তখন তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের ধন-সম্পদে আল্লাহ্ তাদের প্রতি যাকাত ফরজ করেছেন। তা তাদেরই ধনশালীদের থেকে গ্রহণ করা হবে। আবার তাদের ফকীরদেরকে তা দেয়া হবে। যখন তারা স্বীকার করে নেবে, তখন তাদের থেকে গ্রহণ কর। তবে লোকজনের ধন-সম্পদের উত্তম অংশ গ্রহণ করা থেকে বেঁচে থাক।”
📚[সহীহ বুখারী, হা/৭৩৭২]
নাবী (ﷺ) সবার আগে কিসের দাওয়াত দিতে বললেন? নামাযের? রোযার? যাকাতের? পর্নোগ্রাফি নিধনের? নাকি আক্বীদাহ ও তাওহীদের?
নিশ্চয়ই আক্বীদাহ ও তাওহীদের।
আমাদের আলেমগণ এজন্যই আক্বীদাহর গুরুত্ব দেন সবচেয়ে বেশি। যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) এ ব্যাপারে একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। গ্রন্থটির নাম— আত-তাওহীদ আওয়্যালান ইয়া দু‘আতাল ইসলাম (হে ইসলামের দা‘ঈগণ, আগে তাওহীদ থেকে শুরু করো)। বইটি বাংলাতেও অনূদিত হয়েছে। আগ্রহী পাঠকরা পড়ে দেখতে পারেন।
আচ্ছা, আপনি এটা জানেন তো যে, সালাফদের মানহাজ অনুসরণ করার বিধান কী? আসুন, দেখি আল্লাহর কিতাব কী বলছে।
✍ মহান আল্লাহ বলেছেন,
«وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ».
“যে আমার অভিমুখী হয়, তুমি তার পথ অনুসরণ করবে।” [লুক্বমান: ১৫]
✍ ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
«كل الصحابة منيب إلى الله تعالى؛ فيجب اتباع سبيله، وأقواله و أفعاله واعتقاداته».
“প্রত্যেক সাহাবীই আল্লাহর অভিমুখী হয়েছেন। সুতরাং তাঁর (সাহাবীর) পথ, কথাবার্তা, কাজকর্ম এবং আক্বীদাহ-বিশ্বাস অনুসরণ করা ওয়াজিব।”
📚[ই‘লামুল মুওয়াক্বক্বি‘ঈন, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৩০]
.
আসুন দেখি, দারস ও তাদরীসে সাহাবীদের মানহাজ কী ছিল।
✍ জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
َ«كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ـ صلى الله عليه وسلم ـ وَنَحْنُ فِتْيَانٌ حَزَاوِرَةٌ فَتَعَلَّمْنَا الإِيمَانَ قَبْلَ أَنْ نَتَعَلَّمَ الْقُرْآنَ ثُمَّ تَعَلَّمْنَا الْقُرْآنَ فَازْدَدْنَا بِهِ إِيمَانًا».
“আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম। আমরা ছিলাম শক্তিশালী এবং সক্ষম যুবক। আমরা কুরআন শেখার পূর্বে ঈমান শিখেছি, অতঃপর কুরআন শিখেছি এবং তার দ্বারা আমাদের ঈমান বেড়ে যায়।”
📚[ইবনু মাজাহ, হা/৬১; সনদ: সহীহ]
সাহাবীগণ সবার আগে কী শিখেছেন? আক্বীদাহ শিখেছেন। এইজন্যই আমাদের আলেমগণ আক্বীদাহর প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন।
আমাদের আলেমগণ জানেন, মহান আল্লাহ বলেছেন,
«وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا».
“যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের (সালাফদের) পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব; কতই না মন্দ সে আবাস!” [সূরা নিসা: ১১৫]
সালাফদের মানহাজের বিরোধিতাকারী আমাদের আলেমদের কাছে বিদআতী হিসেবে পরিগণিত।
✍ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
«ومذهب أهل السنة والجماعة مذهب قديم معروف قبل أن يخلق الله أبا حنيفة ومالكا والشافعي وأحمد؛ فإنه مذهب الصحابة الذين تلقوه عن نبيهم، ومن خالف ذالك كان مبتدعا عند أهل السنة».
“আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব একটি সুপরিচিত প্রাচীনতম মাযহাব। আল্লাহ্ তা‘আলা আবূ হানীফাহ, মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদকে সৃষ্টি করার পূর্ব থেকেই এই মাযহাবের অস্তিত্ব ছিল। নিশ্চয়ই এটা স্বহাবীদের মাযহাব, যারা এই মাযহাব স্বয়ং তাঁদের নাবীর কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন। যে ব্যক্তি এই মাযহাবের বিরোধিতা করবে, সে আহলুস সুন্নাহর নিকট বিদ‘আতী হিসেবে পরিগণিত হবে।”
📚[ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ), মিনহাজুস সুন্নাহ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৬০১]
যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থই বুঝেনি, যে কিনা অন্যান্য ধর্মকেও সঠিক মনে করে, যে কিনা ইসলাম ভঙ্গকারী কাজে লিপ্ত; তার আবার নামায কী, রোযা কী, আর পর্নোগ্রাফি নিধনই বা কী!! সে পর্নোগ্রাফি না দেখে, মাস্টারবেট না করে, নিয়মিত নামায-রোযা করে নিপাট ভদ্রলোক হওয়ার পরেও তো আক্বীদাহভ্রষ্ট হওয়ার কারণে তার সমস্ত আমল নিস্ফল হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন।
আফসোস হয়, কিছু লোক পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে যেয়ে চরমপন্থায় লিপ্ত হয়েছে। আলেমদের বিরুদ্ধে তাদের নোংরা জিভ লম্বা করেছে। ‘সহীহ আক্বীদাহ’ নিয়ে কটাক্ষ করেছে। পর্নোগ্রাফি আর মাস্টারবেশনের বিরুদ্ধে দাওয়াতী কাজ করাকে আক্বীদাহ ও তাওহীদের দাওয়াতের চেয়ে উঁচুতে স্থান দিয়েছে! আমরা পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে নিষেধ করছি না, কিন্তু ‘সহীহ আক্বীদাহ’ নিয়ে কটাক্ষ কেন, আমাদের আলেমদেরকে নিয়ে কটাক্ষ কেন?!
আক্বীদাহর গুরুত্ব বোধহয় এখনও উপলব্ধি করতে পারেননি। একটা দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করছি। মনোযোগ দিয়ে হাদীসটা পড়বেন—
✍ ইবনুুদ দাইলামী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মনে এই তাকদীর সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ দানা বাঁধে। তাই আমি এই ভেবে শংকিত হই যে, তা আমার দ্বীন ও অন্যান্য কার্যক্রম নষ্ট করে দেয় কিনা। তাই আমি উবাই ইবনু কাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আবূল মুনযির! আমার মনে এই তাকদীর সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ দানা বেঁধেছে, তাই আমি এই ভেবে শংকিত হই যে, তা আমার দ্বীন ও অন্যান্য কার্যক্রমকে নষ্ট করে দেয় কিনা। অতএব এ সম্পর্কে আমাকে কিছু বলুন। আশা করি আল্লাহ তার দ্বারা আমার উপকার করবেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা ঊর্ধ্বলোকের ও ইহলোকের সকলকে শাস্তি দিতে চাইলে তিনি অবশ্যই তাদের শাস্তি দিতে পারেন। তথাপি তিনি তাদের প্রতি জুলুমকারী নন। আর তিনি তাদেরকে দয়া করতে চাইলে তাঁর দয়া তাদের জন্য তাদের কাজকর্মের চেয়ে কল্যাণময়।
যদি তোমাদের নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ বা উহূদ পাহাড়ের মত সোনা থাকতো এবং তুমি তা আল্লাহ্র রাস্তায় খরচ করতে থাকো, তবে তোমার সেই দান কবূল করা হবে না, যাবৎ না তুমি তাকদীরের উপর ঈমান আনো। অতএব তুমি জেনে রেখো! যা কিছু তোমার উপর আপতিত হয়েছে, তা তোমার উপর আপতিত হতে কখনো ভুল হতো না এবং যা তোমার উপর আপতিত হওয়ার ছিল না তা ভুলেও কখনো তোমার উপর আপতিত হবে না।
তুমি যদি এর বিপরীত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাও, তাহলে তুমি জাহান্নামে যাবে। আমি মনে করি, তুমি আমার ভাই আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তোমার কোন ক্ষতি হবে না। (ইবনুুদ দাইলামী বলেন), অতঃপর আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ -এর নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও উবাই (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর অনুরূপ বললেন। তিনি আরো বললেন, তুমি হুযাইফাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তোমার ক্ষতি নেই। অতঃপর আমি হুযাইফাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও তাদের দুজনের অনুরূপ বলেন। তিনি আরও বলেন, তুমি যায়দ ইবনু সাবিত (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট গিয়ে তাকেও জিজ্ঞেস করো।
অতএব আমি যায়দ ইবনু সাবিত (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ তাআলা ঊর্ধ্বলোক ও ইহলোকের সকল অধিবাসীকে শাস্তি দিতে চাইলে অবশ্যই তাদের শাস্তি দিতে পারবেন এবং তিনি তাদের প্রতি জুলুমকারী নন। আর তিনি তাদের প্রতি দয়া করতে চাইলে তাঁর দয়া তাদের সমস্ত সৎ কাজের চাইতেও তাদের জন্য অধিক কল্যাণকর। তোমার নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ সোনা থাকলেও এবং তুমি তা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করলেও তিনি তা কবূল করবেন না, যাবৎ না তুমি সম্পূর্ণরূপে তাকদীরের উপর ঈমান আনো। অতএব তুমি জেনে রাখো! তোমার উপর যা কিছু আপতিত হওয়ার আছে তা তোমার উপর আপতিত হয়েছে, তা কখনো ভুলেও এড়িয়ে যেত না এবং যা তোমার উপর আপতিত হওয়ার ছিল না, তা তোমার উপর ভুলেও কখনো আপতিত হত না। তুমি যদি এর বিপরীত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাও তাহলে তুমি জাহান্নামে যাবে।”
📚[ইবনু মাজাহ, হা/৭১; সনদ: সহীহ]
একজন তাবেঈ কিভাবে তাঁর আক্বীদাহ বিশুদ্ধ করার জন্য সাহাবীদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন। তিনি আক্বীদাহর একটি মাসআলাহ পূর্ণরূপে হৃদয়ঙ্গম করার জন্য চার চারজন সাহাবীর কাছে গিয়েছেন। একেই বলে আক্বীদাহ শিক্ষার গুরুত্ব। আর গুরুত্ব হবে নাই বা কেন? নাবীজী (ﷺ) কী বলেছেন, দেখেছেন? অন্তর কেঁপে উঠার মত কথা! তিনি বলেছেন, “তোমার নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ সোনা থাকলেও এবং তুমি তা আল্লাহর পথে ব্যয় করলেও তিনি তা কবুল করবেন না, যতক্ষণ না তুমি সম্পূর্ণরূপে তাকদীরের উপর ঈমান আনো।” [প্রাগুক্ত]
✍ আর তাইতো বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ সামাহাতুল ওয়ালিদ ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
«معلومٌ بالأدلة الشرعية من الكتاب والسنة أن الأعمال والأقوال إنما تصح وتقبل إذا صدرت عن عقيدة صحيحة فإن كانت العقيدة غير صحيحة بطل ما يتفرع عنها من أعمال وأقوال».
“কিতাব ও সুন্নাহর শার‘ঈ দলিলসমূহের মাধ্যমে এটা সুবিদিত যে, যাবতীয় আমল এবং কথা কেবল তখনই বিশুদ্ধ ও গ্রহনীয় হয়, যখন তা সহীহ (বিশুদ্ধ) আক্বীদাহ থেকে উদ্ভূত হয়। কিন্তু আক্বীদাহ যদি অশুদ্ধ হয়, তাহলে যাবতীয় আমল ও কথা বাত্বিল হয়ে যায়।”
📚[মাজমূউ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যাআহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৩]
যে আলেমগণ কষ্ট করে বছরের পর বছর উস্তাযের দারসে বসে ‘ইলম অর্জন করেছেন, তারপর উস্তায সার্টিফাই করার পর দাওয়াতের ময়দানে এসেছেন, লোকদেরকে আল্লাহর তাওহীদের দিকে ডেকেছেন, আক্বীদাহর দাওয়াত দিয়েছেন, কষ্ট করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দা‘ঈ তৈরি করেছেন, সেই আলেমদের প্রতি কেন এই আক্রমণ? সহীহ আক্বীদাহর দাওয়াত দেওয়ার কারণে তাদেরকে ‘সহীহ আক্বীদাহ, সহীহ আক্বীদাহ’ বলে উপহাস করার হেতু কী?! যারা আমাদের আলেমদের প্রতি বিষ উদগীরণ করেছে, আক্বীদাহর দাওয়াতের ক্ষেত্রে তাদের কী অবদান রয়েছে? অবদান তো নেই-ই, বরং তাদের দাওয়াতে যুবকরা জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত হয়েছে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এরাই জাহান্নামের কুকুর হওয়ার দিকে আহ্বান করেছে। কারণ তারা যে খারিজী!
আমাদের আলেমগণের প্রতি এরা মিথ্যাচার করেছে। বলতে চেয়েছে আমাদের আলেমগণ পর্নোগ্রাফি, আর মাস্টারবেশনের বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি। জনগণকে সতর্ক করেননি এসব থেকে। ওরা হয় জাহেল কূপমণ্ডূক, আর নাহয় শতাব্দীর সেরা মিথ্যুক! আসুন, দেখি, আমাদের আলেমগণ কী অবদান রেখেছেন পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশন থেকে সতর্ক করার ব্যাপারে।
.
❒ পর্নোগ্রাফি থেকে আলেমদের সতর্কীকরণ:
পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশন থেকে আমাদের আলেমগণ যথেষ্ট সতর্ক করেছেন। তাঁদের কিতাব এবং লেকচার ক্লিপস এর জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ।
পর্নোগ্রাফি তো দূরের কথা আমাদের আলেমগণ টিভির সাধারণ প্রোগ্রাম থেকেও সতর্ক করেছেন। টিভি সিরিয়াল, নাটক ও মুভি দেখা থেকে সতর্ক করেছেন। এমনকি ইমাম আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) বলতেন, “টিভি হল শাইত্বানুন রজীম তথা অভিশপ্ত শয়তান।”
ইয়েমেনের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আশ-শাইখ আল-আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব আল-ওয়াসাবী (রহিমাহুল্লাহ) ১৪৩০ হিজরীতেই “মাফাসিদুত তিলফাযি ওয়াদ দিশ (টিভি ও ডিশের ভয়াবহতা)” শিরোনামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি এই গ্রন্থে টিভির ২০১ টি অপকারিতা এবং ডিশের ৫৬ টি অপকারিতা উল্লেখ করেছেন। এমনকি সে সময় ইয়েমেনে সম্প্রচারিত জনপ্রিয় মুভি, কার্টুন ও অনুষ্ঠানের নাম ধরে ধরে সমালোচনা করেছেন। ডিশের অপকারিতা উল্লেখ করতে গিয়ে পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশনের কথা সরাসরি উল্লেখ করে জনগণকে সতর্ক করেছেন।
✍ ফাদ্বীলাতুশ শাইখ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ) পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করতে গিয়ে বলেছেন—
“তোমার প্রতি আমার নসিহত হল, তুমি ওই অসিলা বা মাধ্যমকে ধ্বংস কর, যা তোমাকে (অশ্লীল) স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো দর্শনের দিকে ঠেলে দেয়। যে চ্যানেলগুলো তোমাকে আল্লাহর স্মরণ এবং সালাত থেকে বিচ্যুত করে দেয়। তুমি আল্লাহর জন্য এই মাধ্যমকে ধ্বংস কর। আল্লাহর কসম, তুমি তোমার অন্তরে ঈমানের এমন স্বাদ এবং মিষ্টতা পাবে, যা সবকিছুর চেয়ে কাংঙ্ক্ষিত ও ইপ্সিত। যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কিছু পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে বিনিময়ে তার চেয়ে উত্তম বস্তু দান করেন। তুমি রাতে এই পদ্ধতি পরখ করে দেখ, আর আমার কাছে এক সপ্তাহ পরে এসো এবং দেখো তোমার অন্তরের কী পরিবর্তন ঘটেছে। শীঘ্রই তোমার পরিবর্তন ঘটবে, যদি তুমি মহান আল্লাহর জন্য কাজটি করো।”
► [দ্র: http://binothaimeen.net/content/1535]
✍ ফাদ্বীলাতুশ শাইখ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করেছেন। তিনি বলেছেন, “কেন সে নোংরা ফিল্মের অনিষ্ট এবং এর পাপ সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও তা দেখবে? হ্যাঁ, তাওবাহর দরজা উন্মুক্ত। আমরা তাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করছি না। সে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে এবং এসব নোংরা ফিল্ম বর্জন করবে। সে এসব দেখবে না, বরং এ থেকে সতর্ক করবে।”
► [দ্র: https://m.youtube.com/watch?v=Q8KVUqpBXiU]
.
✍ মদিনা ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি মেম্বার আশ-শাইখ আল-আল্লামাহ আব্দুর রাযযাক্ব বিন আব্দুল মুহসিন আল-বদর (হাফিযাহুল্লাহ) কে একজন পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ছাত্র প্রশ্ন করে বলে, শাইখ যেন তাকে নসিহত করেন। শাইখ সেই ছাত্রের জন্য দু‘আ করেন এবং তাকে নসিহত করতে গিয়ে বলেন, “হে আমার ভাই, আমি তোমাকে একটিই নসিহত করছি। তুমি সর্বদা নসিহতটি স্মরণ করবে। কেননা এতে তোমার মুক্তি রয়েছে। তুমি সর্বদা স্মরণ করবে যে, বিশ্বজগতের মহান প্রতিপালক তোমাকে দেখছেন। আর তিনি তোমার ব্যাপারে সম্যক অবগত। তুমি যখন কোনদিন নির্জনে থাক, তখন তুমি একথা বলো না যে, আমি নির্জনে রয়েছি। বরং বল, আমার উপর একজন প্রহরী রয়েছে। তুমি যখন নির্জনে ইন্টারনেট নিয়ে বসো এবং সেসব ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশ করতে শুরু করো, আর মনে করো যে কোন মানুষ তোমাকে দেখতে পাচ্ছে না, তখন তুমি মনে রেখ যে, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, “সে কি জানেনা যে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ দেখছেন?” [সূরা ‘আলাক্ব: ১৪] এই আয়াতে তোমার জন্য ধমক রয়েছে। তুমি এই আয়াত দিয়ে তোমার চিকিৎসা করো। তুমি ক্বুরআন দিয়ে নিজেকে তিরস্কার করো, ধমক দাও। আর এতে কোন নিষিদ্ধতা নেই যে, তুমি এই আয়াত তোমার রুমে তোমার দৃষ্টির সামনে রাখবে। যাতে করে আয়াতটি তোমাকে ধমক দেয় এবং এই বিষয় থেকে প্রতিহত করে।...”
► [দ্র: https://m.youtube.com/watch?v=MSSNBflrYmo]
.
✍ মদিনা ইউনিভার্সিটির ফিক্বহ ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর আশ-শাইখ আল-আল্লামাহ ড. সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করতে গিয়ে বলেছেন—
“আমার জন্য এবং আমার ভাইদের জন্য নসিহত হল, এটা জানা যে, দৃষ্টি আল্লাহর একটি নি‘আমত। আমাদের উপর আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নি‘আমতগুলোর একটি। প্রতিটি সেকেন্ডে এই নি‘আমত বারবার আসে। সুতরাং আমাদের উচিত এই নি‘আমতকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যবহার করা এবং আল্লাহর নাফরমানিতে ব্যবহার না করা। আর আমাদের এটা জানা উচিত যে, যে ব্যক্তি তার পাপকাজে আল্লাহর নি‘আমতকে ব্যবহার করে, আশংকা হয় যে, সে হয়ত নি‘আমতটি হারিয়ে ফেলবে।
দ্বিতীয় বিষয় হল: এই বিষয় স্মরণ করা যে, আমরা মহান আল্লাহর সামনে এই দৃষ্টির ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হব। যখন তুমি তোমার রুমে একাকী বসে দেখতে থাক, তখন তুমি স্মরণ কর যে, অচিরেই তোমাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। আর অচিরেই তিনি তোমাকে এই দৃষ্টি এবং তোমার দেখা এই দর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। “তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তার রব অতি সত্বর কথা বলবেন। তার ও আল্লাহর মাঝখানে কোন তর্জমাকারী থাকবে না। এরপর সে তাকাবে ডান দিকে, তখন তার আগের ‘আমাল ব্যতীত সে আর কিছু দেখবে না। আবার তাকাবে বাম দিকে, তখনো আগের ‘আমাল ব্যতীত আর কিছু সে দেখবে না। আর সামনে তাকাবে তখন সে জাহান্নাম ব্যতীত আর কিছুই দেখতে পাবে না। কাজেই জাহান্নামকে ভয় কর...।”
📚[সহীহ বুখারী, হা/৭৫১২; সহীহ মুসলিম, হা/১০১৬] সুতরাং সে এটা স্মরণ করবে।
তৃতীয় বিষয় হল: এটা স্মরণ করা যে, তার সাথে আল্লাহ রয়েছেন। আল্লাহ তাকে দেখছেন, শুনছেন এবং তিনি তার সম্পর্কে জানেন। আল্লাহ তাঁর শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং জ্ঞান সহকারে তার সাথে আছেন। সুতরাং তুমি যখন একাকী থাক এবং এসব ফিল্ম ও নোংরা জিনিস দর্শন করো, তখন তুমি স্মরণ করো যে, আল্লাহ তোমাকে এখন দেখছেন এবং আল্লাহ তোমার অবস্থা সম্পর্কে জানেন। তুমি বলো না যে, তুমি নির্জনে রয়েছ। বরং একথা স্মরণ করো যে, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।... (এভাবে দীর্ঘ নসিহত করেছেন শাইখ)”
► [দ্র: www.ajurry.com/vb/showthread.php?t=36833]
.
❒ মাস্টারবেশন থেকে আলেমদের সতর্কীকরণ:
এবার আসি মাস্টারবেশন তথা হস্তমৈথুনের আলোচনায়। এ ব্যাপারে আমাদের আলেমদের অসংখ্য ফাতওয়া রয়েছে। এমনকি ইয়েমেনের মুহাদ্দিছ ও ফাক্বীহ ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) ১৪১১ হিজরীতেই মাস্টারবেশনের উপর স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থটি ইমাম শাওকানীর লেখা “বুলূগুল মিনা ফী হুকমিল ইসতিমনা” গ্রন্থের সাথে একই মলাটে “তুহফাতুশ শাব্বির রব্বানী ফির রদ্দি আলাল ইমাম মুহাম্মাদ বিন আলী আশ-শাওকানী” শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। এই গ্রন্থের ৪৫ পৃষ্ঠা থেকে ৫৮ পৃষ্ঠা অবধি শাইখ মুক্ববিল শরিয়তের দলিল দিয়ে মাস্টারবেশনকে হারাম প্রমাণ করেছেন। এরপর ৫৯ পৃষ্ঠা থেকে ৭৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মাস্টারবেশনের অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আর ৭৫ পৃষ্ঠা থেকে ৮৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মাস্টারবেশন থেকে বাঁচার উপায় বর্ণনা করেছেন।
আমাদের আলেমগণ সতর্ক করেননি? এসব উঠতি যুবকরা পর্নোগ্রাফি আর মাস্টারবেশন সম্পর্কে কিছু আর্টিকেল লিখে এমন ভাব ধরেছে, যেন মস্তবড় দাওয়াতী কাজ করে ফেলেছে! আর এই অহংকারে সালাফী আলেমদের শানে নোংরা মন্তব্য করা থেকেও পিছপা হচ্ছে না। আর ‘সহীহ আক্বীদাহ’ বলে টিটকারি করছে। ওহে স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মূর্খ সম্প্রদায়, তোদের জন্মের আগে আমাদের আলেমগণ এসব বিষয়ে সতর্ক করে গেছেন!
✍ ইমাম ইবনু বায (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন -
“হস্তমৈথুনকে ‘আদাতে সির্রিয়্যাহ’ তথা ‘গুপ্তঅভ্যাস’ বলা হয়। এই কাজ নাজায়েয। বরং এথেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। যেহেতু এতে ভয়াবহ ক্ষতি রয়েছে, যা চিকিৎসকগণ উল্লেখ করেছেন।
হস্তমৈথুনে অনেক ক্ষতি রয়েছে এবং মহান আল্লাহর এই বাণীর বিরোধিতাও রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “(মু’মিনদের বৈশিষ্ট্য হল) যারা তাদের নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী। তবে তাদের স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীরা ছাড়া, নিশ্চয়ই এতে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।” [সূরা মুমিনূন: ৫-৭]
হস্তমৈথুন এদের (স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী) ছাড়া অন্য বিষয়। স্ত্রী ছাড়া অন্য বিষয়। স্ত্রীর মাধ্যমে পরিতৃপ্ত হওয়া হল সহবাস। এটা ছাড়া যা কিছু আছে তাই নাজায়েয। আর তা হল- ব্যভিচার, সমকামিতা, হস্তমৈথুন প্রভৃতি। এগুলো অন্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। হস্তমৈথুন করা নাজায়েয। আর এতে যে অসংখ্য অনিষ্টকর বিষয় রয়েছে, মু’মিনের উচিত তা থেকে সতর্ক থাকা।”
► [দ্র: https://tinyurl.com/yawta7pg (শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের আর্টিকেল লিংক)]
.
✍ শাইখ আব্দুল আযীয আর-রাজিহী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন হস্তমৈথুন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে এর কারণে আসা শারীরিক ক্ষতির কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন—
“শারীরিক ক্ষতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত হল:—
১. হস্তমৈথুন দৃষ্টিশক্তি দুর্বল করে।
২. প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৩. আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বজভঙ্গ তৈরি করে।
৪. বিশেষ অঙ্গগুলোর বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়, যেমন: মূত্রনালি, অণ্ডকোষ প্রভৃতি।
৫. অণ্ডকোষে প্রদাহ সৃষ্টি করে, ফলে ব্যক্তির দ্রুতপতন হয়ে যায়।
৬. মেরুদণ্ডের হাড়ে ব্যথা হয়, যেখান থেকে স্পার্ম নির্গত হয়।
৭. কিছু অঙ্গে কাঁপুনি শুরু হয়, যেমন: দুই পা।
এছাড়াও এর ফলে বোধশক্তি লোপ পায়। যা ব্যক্তিকে নির্বুদ্ধিতা ও মানসিক বিকৃতির দিকে ঠেলে দেয়।...”
► [দ্র: www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=89345]
.
✍ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) মাস্টারবেশনে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করে বলেছেন—
“গুপ্তঅভ্যাস তথা হস্তমৈথুন হারাম। অধিকাংশ আলেমগণের মতে এটা কোন অবস্থাতেই বৈধ নয়। সুতরাং তোমার উপর আবশ্যক, আল্লাহর কাছে তাওবাহ করা, এই কাজের দিকে আর ফিরে না যাওয়া এবং ওইসব বিষয় থেকে দূরে থাকা, যা তোমার যৌন উত্তেজনা উসকে দেয়। যেমনটি তুমি উল্লেখ করেছ যে, তুমি টিভি দেখ, ভিডিও দেখ, এবং উত্তেজক দৃশ্য দর্শন করো। তোমার উপর আবশ্যক হল এসব দৃশ্য থেকে দূরে থাকা এবং এসব উত্তেজক দৃশ্যের উপর ভিডিও বা টিভি অন না করা। কেননা এটা অনিষ্টের উপকরণ। মুসলিম নিজে থেকে অনিষ্টের দরজা বন্ধ করে দিবে এবং কল্যাণের দরজা উন্মুক্ত করবে। তোমার কাছে যে বিষয়েই কোন অনিষ্ট ও ফিতনাহ আসুক না কেন, তুমি তা থেকে দূরে থাকবে। আর ফিতনাহ ও অকল্যাণের সবচেয়ে বড় মাধ্যমগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল এ সমস্ত ফিল্ম এবং সিরিয়াল, যেসব সিরিয়ালে সম্মোহনকারী নারীদের আবির্ভাব ঘটে এবং বিভিন্ন উত্তেজক বিষয়ের আবির্ভাব ঘটে। সুতরাং তোমার উপর আবশ্যক হল এসব থেকে দূরে থাকা এবং এগুলোর রাস্তা বন্ধ করা।”
► [দ্র: https://tinyurl.com/yclcqx7j (ইসলামওয়ে ডট নেটের আর্টিকেল লিংক)]
.
✍ ইমাম ইবনু বায (রহিমাহুল্লাহ) একজন মাস্টারবেশনে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করতে গিয়ে সুন্দর কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে আমার ভাই, তুমি যদি বিবাহে সক্ষম হও, তাহলে সত্বর বিবাহ কর। তুমি দ্রুত বিবাহের দিকে ধাবিত হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর। এ ব্যাপারে কিছু ধার-দেনা করে হলেও তুমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং দ্রুত বিবাহ কর। তুমি তোমার সুস্থতাকে গনিমত হিসেবে গ্রহণ কর। বিপদ থেকে দূরে থাকাকে গনিমত হিসেবে গ্রহণ কর। তুমি যদি বিবাহ করতে অসমর্থ হও, তাহলে তুমি এই উত্তেজনা প্রশমনকারী উপকরণের দ্বারস্থ হও। সেটা রোযার মাধ্যমে হতে পারে। কেননা রোযা শয়তানের ক্ষেত্রকে সংকুচিত করে। অথবা তা অষুধের মাধ্যমে হতে পারে, যেসব অষুধ এই বিষয়কে প্রশমন করে। তুমি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাও।...”
► [দ্র: https://binbaz.org.sa/old/29429]
এগুলো অতি সামান্য নমুনা দেওয়া হল। এসব ছাড়াও এ ব্যাপারে আমাদের আলেমগণের আরও অনেক লেখনী ও লেকচার ক্লিপস আছে।
❒ বাংলাভাষী দা'ঈগণঃ
⦁ বাংলাভাষী দা‘ঈগণের মধ্যে উস্তায আব্দুল হামীদ ফাইযী তাঁর “যু্ব-সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান” গ্রন্থের (১ম সংস্করণ: ২০১০ খ্রি.) ২৪৫-২৫০ পৃষ্ঠায় মাস্টারবেশনের অপকারিতা এবং এথেকে বাঁচার জন্য ১৭ টি উপদেশ বর্ণনা করেছেন।
⦁ এতদ্ব্যতীত আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব তাঁর “কে বড় ক্ষতিগ্রস্ত” গ্রন্থের (২য় প্রকাশ: ২০০৪ খ্রি.) ৫৮-৬০ পৃষ্ঠায় মাস্টারবেশনের বিধান এবং এর অপকারিতা বর্ণনা করেছেন।
এছাড়া আমাদের বাংলাভাষী এক ঝাক দা'ঈ র লেকচার রয়েছে পর্ণোগ্রাফি ও মাস্টারবেশনের ক্ষতি এবং তার থেকে বাঁচার উপায় সম্বলিত!
⦁ উস্তায আব্দুল্লাহ হামিদ ফাইজি হাফিয্বাহুল্লাহ
► লিংকঃ https://youtu.be/hp-cpsG49ak
⦁ উস্তায শহিদুল্লাহ খান মাদানী হাফিয্বাহুল্লাহ -
► লিংকঃ https://youtu.be/yodzYHUgpNU
⦁ উস্তায মতিউর রাহমান মাদানী হাফিয্বাহুল্লাহ -
► লিংকঃ https://youtu.be/Fr7UA2Mx__w
► লিংকঃ https://youtu.be/Ktnermp9BE0
► লিংকঃ https://youtu.be/YV0IqiKF1এয়া
⦁ উস্তায নাসিল শাহরুখ হাফিয্বাহুল্লাহ -
► https://youtu.be/iEMVBnmm7তস
⦁ ড.আবু বক্কর মুহাম্মাদ যাকারিয়া হাফিয্বাহুল্লাহ -
► লিংকঃ https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2274872959467949&id=1787338651554718
নিশ্চয়ই আল্লাহই পারেন পথভ্রষ্টদের পথ দেখাতে। এই দীর্ঘ আলোচনায় কারো যদি কোনো উপকার হয়ে থাকে, নিশ্চয়ই তার সকল প্রশংসা আল্লাহর! আর যদি এই আলোচনায় কোনো ভ্রান্তি থাকে তা নিশ্চয়ই আমাদের সীমাবদ্ধতা!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা- আমাদের সবাইকে উপরিউক্ত গুপ্ত পাপ থেকে হিফাযত করূন, আমাদের অন্তরসমুহকে ফিতনাকে ফিতনা হিসেবে গন্য করার তাক্বওয়াটুকু দান করূন, ,আমাদের অন্তরসমুহ শয়তানের জিম্মায় ছেড়ে না দিয়ে বরং দ্বীনের সাথে আমাদের অন্তরকে বেঁধে রাখার শক্তি ও ঈমান দান করুন, সর্বপরি, আহলুস সুল্লাহ-র উলামায়ে ক্বেরামের ইত্তেবাহ এবং তাদের উপর বাতিলপন্থীদের আরোপিত ভিবিন্ন মিথ্যা অভিযোগ খন্ডনের তাওফ্বীক দান করূন।
[আ - মীন ]
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
❒ আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী
আখতার বিন আমীর।
■ সহযোগিতায়ঃ [এক দ্বীনী ভাই]
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা-র জন্য,
যিনি বলেছেন “যে ব্যক্তি আমার কোন অলীর (খাঁটি বান্দা) সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করব।”
[সহীহ বুখারী, হা/৬৫০২]
তিনি আরও বলেছেন “ধ্বংস প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের জন্য।”
[সূরাহ জাছিয়াহ: ৭]
এবং অসংখ্য সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি, যিনি বলেছেন,
,مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِىَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِىَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ يَصْرِفَ بِهِ وُجُوهَ النَّاسِ إِلَيْهِ أَدْخَلَهُ اللهُ النَّارَ
যে ব্যক্তি ইলম শিখে এজন্য যে, তার দ্বারা সে আলেমদের সাথে বিতর্ক করবে ও মূর্খদের সঙ্গে ঝগড়া করবে কিংবা মানুষকে তার দিকে আকৃষ্ট করাবে,
তাহলে আল্লাহতালা তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
📚[তিরমিযী হা/২৬৫৪, সনদ হাসান; মিশকাত হা/২২৫]
তিনি আরও বলেছেন “ আবেদের ওপর আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব সকল তারকার ওপর চাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের মতো। নিশ্চয় আলেমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ দিনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী বানান না। তাঁরা কেবল ইলমের ওয়ারিশ বানান। অতএব যে তা গ্রহণ করে সে পূর্ণ অংশই পায়।”
📚[সুনানে তিরমিযী : ২৬৮২]
❒ প্রারম্ভিকা,
এ যুগের মুসলমানরা একের পর এক মহাবিপদে পতিত হচ্ছে! তাদেরকে চতুর্দিক দিয়ে ফিতনা ফাসাদে ঘিরে রেখেছে এবং অনেক মুসলমানই সে ফিতনার সহজ শিকার হয়ে যাচ্ছে। তাদের গুনাহ ও অসৎকাজগুলো প্রকাশ পাচ্ছে এবং তারা মানুষকে নির্ভয়ে নির্লজ্জভাবে গুনাহের দিকে আহ্বান করছে। তেমনি একটি গুপ্ত পাপ "পর্নোগ্রাফি" নামে এক বিষাক্ত নেশা আজ আমাদের পুরো সমাজকে ছেয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশের মত এক মুসলিম অধ্যুষিত দেশে আজ শিশু, যুবক, বৃদ্ধ নির্বিশেষে এই বিষাক্ত নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে।
যার ফলে সমাজের মধ্যে ধর্ষনের মতো জঘন্য কাজগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বর্তমানে পর্ণগ্রাফির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে কম্পিউটার ,মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে! বলা যেতে পারে, এটা শয়তানের একটা মারাত্নক ও অব্যার্থ অস্ত্র । শয়তান এই অস্ত্র দ্বারা মানুষের মনে খুব সূক্ষভাবে আস্তে আস্তে স্রষ্টা বিষয়ে সন্দেহ তৈরী করে এবং মানুষের ঈমান ছিনিয়ে নেয় ।
.
আমাদের মন নামক পাত্র প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো কিছুতে ভরাট থাকবেই। ঘুম ছাড়া এই পাত্রকে খালি রাখা যায় না। তবে পাত্রে থাকা বস্তুকে পরিবর্তন করে দেয়ার শক্তি আমাদের দেয়া হয়েছে। খারাপ চিন্তা মনে জাগ্রত হওয়াটা দোষ নয়, দোষ তো তখন হবে যখন তাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়। আপনি যদি মনে উদয় হওয়া কুচিন্তাকে তাৎক্ষণিক প্রতিহত না করেন, সে আপনাকে কাজ করিয়ে ছাড়বে। আজ হোক কাল হোক, আপনার একটি কুচিন্তার খারাপ প্রভাব আপনার কাজে প্রকাশ পাবেই। শুধু পর্ন নয়, যে কোনো নেশার বিষয়টাই এমন।
যাইহোক, পর্নোগ্রাফি কিংবা মাস্টারবেশনের মত ভয়াবহ গুপ্ত পাপগুলি খুব বেশি আকারে হওয়ার কারণ হলো আল্লাহর দীনকে অবজ্ঞা, তাঁর নির্ধারিত সীমারেখা ও শরি‘আতের প্রতি অসম্মান এবং আল্লাহর শরি‘আত বাস্তবায়নে বহু মুসলমানের অবহেলা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ থেকে বিরত থাকা, সর্বপরি অন্তরে আল্লাহর ভয় হ্রাস পাওয়া!
আল্লাহর দরবারে খাস তাওবা, তাঁর আদেশ-নিষেধকে সম্মান প্রদর্শনসহ অজ্ঞলোকদেরকে এসব ফিতনা ও মসিবত থেকে ফিরিয়ে আনা ও সঠিক অবকাঠামোতে নিয়ে আসা এবং এসব পাপাচার রোধে করনীয় সম্পর্কে সালাফী উলামাগণ সুবিন্যাস্ত দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন যা আজ অব্দি চলমান রয়েছে!
❒ এবার মুল প্রসংগে আসা যাক,
গত কয়েকদিন আগে " পর্নোগ্রাফিঃ মানবতার জন্য হুমকি "নামক একটি পেজে যুবকদের পর্নাসক্তির উপর একটি আর্টিকেল পড়লাম, যেখানে এ্যাডমিন সাহেব
জাহলাতের কারনে বা ফিরাসাতের অভাবে বেশ কিছু খেয়ানত এবং তোহমত (অপবাদ) দিয়েছেন সত্যবাদী উলামায়ে ক্বেরামের উপর! যথাঃ
১. সহীহ আক্বীদাহ’ নিয়ে কটাক্ষ!
২. আলেমগন বাস্তবতা বিবর্জিত জনবিচ্ছিন্ন!
৩. যুবকরা ফিত্নায় ডুবে আছে কিন্তু উলামাগন বেখবর!
৪. আলেমগন জিম্মাদারী আদায় করছেন না!
৫. বিদাতিদের সাথে একই পাল্লায় সালাফী উলামাদের ওজন করা!
[কমেন্ট বক্সে স্কিন শট দ্রঃ]
■ জবাবঃ
আমাদের আলেমগণ আক্বীদাহ ও তাওহীদের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ ক্বুরআন ও সুন্নাহয় যে এর উপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সবার আগে কিসের দা‘ওয়াত দিতে হবে? ইসলাম কী বলছে দেখেছেন? দেখুন ভালো করে -
✍ যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয ইবনু জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-কে ইয়েমেন পাঠালেন, তখন তিনি তাঁকে বললেন,
«إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَى أَنْ يُوَحِّدُوا اللهَ تَعَالَى فَإِذَا عَرَفُوا ذ‘لِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ فَإِذَا صَلَّوْا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةً فِي أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ غَنِيِّهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فَقِيرِهِمْ فَإِذَا أَقَرُّوا بِذَلِكَ فَخُذْ مِنْهُمْ وَتَوَقَّ كَرَائِمَ أَمْوَالِ النَّاسِ».
“তুমি আহলে কিতাবদের একটি কাওমের কাছে যাচ্ছ। অতএব, তাদের প্রতি তোমার প্রথম আহবান হবে- তারা যেন আল্লাহর একত্ববাদকে (তাওহীদকে) মেনে নেয়। তারা তা জেনে নিলে তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ্ দিনে রাতে তাদের প্রতি পাঁচ বার সালাত ফরজ করে দিয়েছেন। যখন তারা সালাত আদায় করবে, তখন তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের ধন-সম্পদে আল্লাহ্ তাদের প্রতি যাকাত ফরজ করেছেন। তা তাদেরই ধনশালীদের থেকে গ্রহণ করা হবে। আবার তাদের ফকীরদেরকে তা দেয়া হবে। যখন তারা স্বীকার করে নেবে, তখন তাদের থেকে গ্রহণ কর। তবে লোকজনের ধন-সম্পদের উত্তম অংশ গ্রহণ করা থেকে বেঁচে থাক।”
📚[সহীহ বুখারী, হা/৭৩৭২]
নাবী (ﷺ) সবার আগে কিসের দাওয়াত দিতে বললেন? নামাযের? রোযার? যাকাতের? পর্নোগ্রাফি নিধনের? নাকি আক্বীদাহ ও তাওহীদের?
নিশ্চয়ই আক্বীদাহ ও তাওহীদের।
আমাদের আলেমগণ এজন্যই আক্বীদাহর গুরুত্ব দেন সবচেয়ে বেশি। যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) এ ব্যাপারে একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। গ্রন্থটির নাম— আত-তাওহীদ আওয়্যালান ইয়া দু‘আতাল ইসলাম (হে ইসলামের দা‘ঈগণ, আগে তাওহীদ থেকে শুরু করো)। বইটি বাংলাতেও অনূদিত হয়েছে। আগ্রহী পাঠকরা পড়ে দেখতে পারেন।
আচ্ছা, আপনি এটা জানেন তো যে, সালাফদের মানহাজ অনুসরণ করার বিধান কী? আসুন, দেখি আল্লাহর কিতাব কী বলছে।
✍ মহান আল্লাহ বলেছেন,
«وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ».
“যে আমার অভিমুখী হয়, তুমি তার পথ অনুসরণ করবে।” [লুক্বমান: ১৫]
✍ ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
«كل الصحابة منيب إلى الله تعالى؛ فيجب اتباع سبيله، وأقواله و أفعاله واعتقاداته».
“প্রত্যেক সাহাবীই আল্লাহর অভিমুখী হয়েছেন। সুতরাং তাঁর (সাহাবীর) পথ, কথাবার্তা, কাজকর্ম এবং আক্বীদাহ-বিশ্বাস অনুসরণ করা ওয়াজিব।”
📚[ই‘লামুল মুওয়াক্বক্বি‘ঈন, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৩০]
.
আসুন দেখি, দারস ও তাদরীসে সাহাবীদের মানহাজ কী ছিল।
✍ জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
َ«كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ـ صلى الله عليه وسلم ـ وَنَحْنُ فِتْيَانٌ حَزَاوِرَةٌ فَتَعَلَّمْنَا الإِيمَانَ قَبْلَ أَنْ نَتَعَلَّمَ الْقُرْآنَ ثُمَّ تَعَلَّمْنَا الْقُرْآنَ فَازْدَدْنَا بِهِ إِيمَانًا».
“আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম। আমরা ছিলাম শক্তিশালী এবং সক্ষম যুবক। আমরা কুরআন শেখার পূর্বে ঈমান শিখেছি, অতঃপর কুরআন শিখেছি এবং তার দ্বারা আমাদের ঈমান বেড়ে যায়।”
📚[ইবনু মাজাহ, হা/৬১; সনদ: সহীহ]
সাহাবীগণ সবার আগে কী শিখেছেন? আক্বীদাহ শিখেছেন। এইজন্যই আমাদের আলেমগণ আক্বীদাহর প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন।
আমাদের আলেমগণ জানেন, মহান আল্লাহ বলেছেন,
«وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا».
“যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের (সালাফদের) পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব; কতই না মন্দ সে আবাস!” [সূরা নিসা: ১১৫]
সালাফদের মানহাজের বিরোধিতাকারী আমাদের আলেমদের কাছে বিদআতী হিসেবে পরিগণিত।
✍ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
«ومذهب أهل السنة والجماعة مذهب قديم معروف قبل أن يخلق الله أبا حنيفة ومالكا والشافعي وأحمد؛ فإنه مذهب الصحابة الذين تلقوه عن نبيهم، ومن خالف ذالك كان مبتدعا عند أهل السنة».
“আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব একটি সুপরিচিত প্রাচীনতম মাযহাব। আল্লাহ্ তা‘আলা আবূ হানীফাহ, মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদকে সৃষ্টি করার পূর্ব থেকেই এই মাযহাবের অস্তিত্ব ছিল। নিশ্চয়ই এটা স্বহাবীদের মাযহাব, যারা এই মাযহাব স্বয়ং তাঁদের নাবীর কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন। যে ব্যক্তি এই মাযহাবের বিরোধিতা করবে, সে আহলুস সুন্নাহর নিকট বিদ‘আতী হিসেবে পরিগণিত হবে।”
📚[ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ), মিনহাজুস সুন্নাহ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৬০১]
যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থই বুঝেনি, যে কিনা অন্যান্য ধর্মকেও সঠিক মনে করে, যে কিনা ইসলাম ভঙ্গকারী কাজে লিপ্ত; তার আবার নামায কী, রোযা কী, আর পর্নোগ্রাফি নিধনই বা কী!! সে পর্নোগ্রাফি না দেখে, মাস্টারবেট না করে, নিয়মিত নামায-রোযা করে নিপাট ভদ্রলোক হওয়ার পরেও তো আক্বীদাহভ্রষ্ট হওয়ার কারণে তার সমস্ত আমল নিস্ফল হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন।
আফসোস হয়, কিছু লোক পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে যেয়ে চরমপন্থায় লিপ্ত হয়েছে। আলেমদের বিরুদ্ধে তাদের নোংরা জিভ লম্বা করেছে। ‘সহীহ আক্বীদাহ’ নিয়ে কটাক্ষ করেছে। পর্নোগ্রাফি আর মাস্টারবেশনের বিরুদ্ধে দাওয়াতী কাজ করাকে আক্বীদাহ ও তাওহীদের দাওয়াতের চেয়ে উঁচুতে স্থান দিয়েছে! আমরা পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে নিষেধ করছি না, কিন্তু ‘সহীহ আক্বীদাহ’ নিয়ে কটাক্ষ কেন, আমাদের আলেমদেরকে নিয়ে কটাক্ষ কেন?!
আক্বীদাহর গুরুত্ব বোধহয় এখনও উপলব্ধি করতে পারেননি। একটা দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করছি। মনোযোগ দিয়ে হাদীসটা পড়বেন—
✍ ইবনুুদ দাইলামী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মনে এই তাকদীর সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ দানা বাঁধে। তাই আমি এই ভেবে শংকিত হই যে, তা আমার দ্বীন ও অন্যান্য কার্যক্রম নষ্ট করে দেয় কিনা। তাই আমি উবাই ইবনু কাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আবূল মুনযির! আমার মনে এই তাকদীর সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ দানা বেঁধেছে, তাই আমি এই ভেবে শংকিত হই যে, তা আমার দ্বীন ও অন্যান্য কার্যক্রমকে নষ্ট করে দেয় কিনা। অতএব এ সম্পর্কে আমাকে কিছু বলুন। আশা করি আল্লাহ তার দ্বারা আমার উপকার করবেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা ঊর্ধ্বলোকের ও ইহলোকের সকলকে শাস্তি দিতে চাইলে তিনি অবশ্যই তাদের শাস্তি দিতে পারেন। তথাপি তিনি তাদের প্রতি জুলুমকারী নন। আর তিনি তাদেরকে দয়া করতে চাইলে তাঁর দয়া তাদের জন্য তাদের কাজকর্মের চেয়ে কল্যাণময়।
যদি তোমাদের নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ বা উহূদ পাহাড়ের মত সোনা থাকতো এবং তুমি তা আল্লাহ্র রাস্তায় খরচ করতে থাকো, তবে তোমার সেই দান কবূল করা হবে না, যাবৎ না তুমি তাকদীরের উপর ঈমান আনো। অতএব তুমি জেনে রেখো! যা কিছু তোমার উপর আপতিত হয়েছে, তা তোমার উপর আপতিত হতে কখনো ভুল হতো না এবং যা তোমার উপর আপতিত হওয়ার ছিল না তা ভুলেও কখনো তোমার উপর আপতিত হবে না।
তুমি যদি এর বিপরীত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাও, তাহলে তুমি জাহান্নামে যাবে। আমি মনে করি, তুমি আমার ভাই আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তোমার কোন ক্ষতি হবে না। (ইবনুুদ দাইলামী বলেন), অতঃপর আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ -এর নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও উবাই (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর অনুরূপ বললেন। তিনি আরো বললেন, তুমি হুযাইফাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তোমার ক্ষতি নেই। অতঃপর আমি হুযাইফাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও তাদের দুজনের অনুরূপ বলেন। তিনি আরও বলেন, তুমি যায়দ ইবনু সাবিত (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট গিয়ে তাকেও জিজ্ঞেস করো।
অতএব আমি যায়দ ইবনু সাবিত (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ তাআলা ঊর্ধ্বলোক ও ইহলোকের সকল অধিবাসীকে শাস্তি দিতে চাইলে অবশ্যই তাদের শাস্তি দিতে পারবেন এবং তিনি তাদের প্রতি জুলুমকারী নন। আর তিনি তাদের প্রতি দয়া করতে চাইলে তাঁর দয়া তাদের সমস্ত সৎ কাজের চাইতেও তাদের জন্য অধিক কল্যাণকর। তোমার নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ সোনা থাকলেও এবং তুমি তা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করলেও তিনি তা কবূল করবেন না, যাবৎ না তুমি সম্পূর্ণরূপে তাকদীরের উপর ঈমান আনো। অতএব তুমি জেনে রাখো! তোমার উপর যা কিছু আপতিত হওয়ার আছে তা তোমার উপর আপতিত হয়েছে, তা কখনো ভুলেও এড়িয়ে যেত না এবং যা তোমার উপর আপতিত হওয়ার ছিল না, তা তোমার উপর ভুলেও কখনো আপতিত হত না। তুমি যদি এর বিপরীত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাও তাহলে তুমি জাহান্নামে যাবে।”
📚[ইবনু মাজাহ, হা/৭১; সনদ: সহীহ]
একজন তাবেঈ কিভাবে তাঁর আক্বীদাহ বিশুদ্ধ করার জন্য সাহাবীদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন। তিনি আক্বীদাহর একটি মাসআলাহ পূর্ণরূপে হৃদয়ঙ্গম করার জন্য চার চারজন সাহাবীর কাছে গিয়েছেন। একেই বলে আক্বীদাহ শিক্ষার গুরুত্ব। আর গুরুত্ব হবে নাই বা কেন? নাবীজী (ﷺ) কী বলেছেন, দেখেছেন? অন্তর কেঁপে উঠার মত কথা! তিনি বলেছেন, “তোমার নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ সোনা থাকলেও এবং তুমি তা আল্লাহর পথে ব্যয় করলেও তিনি তা কবুল করবেন না, যতক্ষণ না তুমি সম্পূর্ণরূপে তাকদীরের উপর ঈমান আনো।” [প্রাগুক্ত]
✍ আর তাইতো বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ সামাহাতুল ওয়ালিদ ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
«معلومٌ بالأدلة الشرعية من الكتاب والسنة أن الأعمال والأقوال إنما تصح وتقبل إذا صدرت عن عقيدة صحيحة فإن كانت العقيدة غير صحيحة بطل ما يتفرع عنها من أعمال وأقوال».
“কিতাব ও সুন্নাহর শার‘ঈ দলিলসমূহের মাধ্যমে এটা সুবিদিত যে, যাবতীয় আমল এবং কথা কেবল তখনই বিশুদ্ধ ও গ্রহনীয় হয়, যখন তা সহীহ (বিশুদ্ধ) আক্বীদাহ থেকে উদ্ভূত হয়। কিন্তু আক্বীদাহ যদি অশুদ্ধ হয়, তাহলে যাবতীয় আমল ও কথা বাত্বিল হয়ে যায়।”
📚[মাজমূউ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যাআহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৩]
যে আলেমগণ কষ্ট করে বছরের পর বছর উস্তাযের দারসে বসে ‘ইলম অর্জন করেছেন, তারপর উস্তায সার্টিফাই করার পর দাওয়াতের ময়দানে এসেছেন, লোকদেরকে আল্লাহর তাওহীদের দিকে ডেকেছেন, আক্বীদাহর দাওয়াত দিয়েছেন, কষ্ট করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দা‘ঈ তৈরি করেছেন, সেই আলেমদের প্রতি কেন এই আক্রমণ? সহীহ আক্বীদাহর দাওয়াত দেওয়ার কারণে তাদেরকে ‘সহীহ আক্বীদাহ, সহীহ আক্বীদাহ’ বলে উপহাস করার হেতু কী?! যারা আমাদের আলেমদের প্রতি বিষ উদগীরণ করেছে, আক্বীদাহর দাওয়াতের ক্ষেত্রে তাদের কী অবদান রয়েছে? অবদান তো নেই-ই, বরং তাদের দাওয়াতে যুবকরা জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত হয়েছে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এরাই জাহান্নামের কুকুর হওয়ার দিকে আহ্বান করেছে। কারণ তারা যে খারিজী!
আমাদের আলেমগণের প্রতি এরা মিথ্যাচার করেছে। বলতে চেয়েছে আমাদের আলেমগণ পর্নোগ্রাফি, আর মাস্টারবেশনের বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি। জনগণকে সতর্ক করেননি এসব থেকে। ওরা হয় জাহেল কূপমণ্ডূক, আর নাহয় শতাব্দীর সেরা মিথ্যুক! আসুন, দেখি, আমাদের আলেমগণ কী অবদান রেখেছেন পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশন থেকে সতর্ক করার ব্যাপারে।
.
❒ পর্নোগ্রাফি থেকে আলেমদের সতর্কীকরণ:
পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশন থেকে আমাদের আলেমগণ যথেষ্ট সতর্ক করেছেন। তাঁদের কিতাব এবং লেকচার ক্লিপস এর জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ।
পর্নোগ্রাফি তো দূরের কথা আমাদের আলেমগণ টিভির সাধারণ প্রোগ্রাম থেকেও সতর্ক করেছেন। টিভি সিরিয়াল, নাটক ও মুভি দেখা থেকে সতর্ক করেছেন। এমনকি ইমাম আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) বলতেন, “টিভি হল শাইত্বানুন রজীম তথা অভিশপ্ত শয়তান।”
ইয়েমেনের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আশ-শাইখ আল-আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব আল-ওয়াসাবী (রহিমাহুল্লাহ) ১৪৩০ হিজরীতেই “মাফাসিদুত তিলফাযি ওয়াদ দিশ (টিভি ও ডিশের ভয়াবহতা)” শিরোনামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি এই গ্রন্থে টিভির ২০১ টি অপকারিতা এবং ডিশের ৫৬ টি অপকারিতা উল্লেখ করেছেন। এমনকি সে সময় ইয়েমেনে সম্প্রচারিত জনপ্রিয় মুভি, কার্টুন ও অনুষ্ঠানের নাম ধরে ধরে সমালোচনা করেছেন। ডিশের অপকারিতা উল্লেখ করতে গিয়ে পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশনের কথা সরাসরি উল্লেখ করে জনগণকে সতর্ক করেছেন।
✍ ফাদ্বীলাতুশ শাইখ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ) পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করতে গিয়ে বলেছেন—
“তোমার প্রতি আমার নসিহত হল, তুমি ওই অসিলা বা মাধ্যমকে ধ্বংস কর, যা তোমাকে (অশ্লীল) স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো দর্শনের দিকে ঠেলে দেয়। যে চ্যানেলগুলো তোমাকে আল্লাহর স্মরণ এবং সালাত থেকে বিচ্যুত করে দেয়। তুমি আল্লাহর জন্য এই মাধ্যমকে ধ্বংস কর। আল্লাহর কসম, তুমি তোমার অন্তরে ঈমানের এমন স্বাদ এবং মিষ্টতা পাবে, যা সবকিছুর চেয়ে কাংঙ্ক্ষিত ও ইপ্সিত। যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কিছু পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে বিনিময়ে তার চেয়ে উত্তম বস্তু দান করেন। তুমি রাতে এই পদ্ধতি পরখ করে দেখ, আর আমার কাছে এক সপ্তাহ পরে এসো এবং দেখো তোমার অন্তরের কী পরিবর্তন ঘটেছে। শীঘ্রই তোমার পরিবর্তন ঘটবে, যদি তুমি মহান আল্লাহর জন্য কাজটি করো।”
► [দ্র: http://binothaimeen.net/content/1535]
✍ ফাদ্বীলাতুশ শাইখ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করেছেন। তিনি বলেছেন, “কেন সে নোংরা ফিল্মের অনিষ্ট এবং এর পাপ সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও তা দেখবে? হ্যাঁ, তাওবাহর দরজা উন্মুক্ত। আমরা তাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করছি না। সে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে এবং এসব নোংরা ফিল্ম বর্জন করবে। সে এসব দেখবে না, বরং এ থেকে সতর্ক করবে।”
► [দ্র: https://m.youtube.com/watch?v=Q8KVUqpBXiU]
.
✍ মদিনা ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি মেম্বার আশ-শাইখ আল-আল্লামাহ আব্দুর রাযযাক্ব বিন আব্দুল মুহসিন আল-বদর (হাফিযাহুল্লাহ) কে একজন পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ছাত্র প্রশ্ন করে বলে, শাইখ যেন তাকে নসিহত করেন। শাইখ সেই ছাত্রের জন্য দু‘আ করেন এবং তাকে নসিহত করতে গিয়ে বলেন, “হে আমার ভাই, আমি তোমাকে একটিই নসিহত করছি। তুমি সর্বদা নসিহতটি স্মরণ করবে। কেননা এতে তোমার মুক্তি রয়েছে। তুমি সর্বদা স্মরণ করবে যে, বিশ্বজগতের মহান প্রতিপালক তোমাকে দেখছেন। আর তিনি তোমার ব্যাপারে সম্যক অবগত। তুমি যখন কোনদিন নির্জনে থাক, তখন তুমি একথা বলো না যে, আমি নির্জনে রয়েছি। বরং বল, আমার উপর একজন প্রহরী রয়েছে। তুমি যখন নির্জনে ইন্টারনেট নিয়ে বসো এবং সেসব ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশ করতে শুরু করো, আর মনে করো যে কোন মানুষ তোমাকে দেখতে পাচ্ছে না, তখন তুমি মনে রেখ যে, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, “সে কি জানেনা যে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ দেখছেন?” [সূরা ‘আলাক্ব: ১৪] এই আয়াতে তোমার জন্য ধমক রয়েছে। তুমি এই আয়াত দিয়ে তোমার চিকিৎসা করো। তুমি ক্বুরআন দিয়ে নিজেকে তিরস্কার করো, ধমক দাও। আর এতে কোন নিষিদ্ধতা নেই যে, তুমি এই আয়াত তোমার রুমে তোমার দৃষ্টির সামনে রাখবে। যাতে করে আয়াতটি তোমাকে ধমক দেয় এবং এই বিষয় থেকে প্রতিহত করে।...”
► [দ্র: https://m.youtube.com/watch?v=MSSNBflrYmo]
.
✍ মদিনা ইউনিভার্সিটির ফিক্বহ ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর আশ-শাইখ আল-আল্লামাহ ড. সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করতে গিয়ে বলেছেন—
“আমার জন্য এবং আমার ভাইদের জন্য নসিহত হল, এটা জানা যে, দৃষ্টি আল্লাহর একটি নি‘আমত। আমাদের উপর আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নি‘আমতগুলোর একটি। প্রতিটি সেকেন্ডে এই নি‘আমত বারবার আসে। সুতরাং আমাদের উচিত এই নি‘আমতকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যবহার করা এবং আল্লাহর নাফরমানিতে ব্যবহার না করা। আর আমাদের এটা জানা উচিত যে, যে ব্যক্তি তার পাপকাজে আল্লাহর নি‘আমতকে ব্যবহার করে, আশংকা হয় যে, সে হয়ত নি‘আমতটি হারিয়ে ফেলবে।
দ্বিতীয় বিষয় হল: এই বিষয় স্মরণ করা যে, আমরা মহান আল্লাহর সামনে এই দৃষ্টির ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হব। যখন তুমি তোমার রুমে একাকী বসে দেখতে থাক, তখন তুমি স্মরণ কর যে, অচিরেই তোমাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। আর অচিরেই তিনি তোমাকে এই দৃষ্টি এবং তোমার দেখা এই দর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। “তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তার রব অতি সত্বর কথা বলবেন। তার ও আল্লাহর মাঝখানে কোন তর্জমাকারী থাকবে না। এরপর সে তাকাবে ডান দিকে, তখন তার আগের ‘আমাল ব্যতীত সে আর কিছু দেখবে না। আবার তাকাবে বাম দিকে, তখনো আগের ‘আমাল ব্যতীত আর কিছু সে দেখবে না। আর সামনে তাকাবে তখন সে জাহান্নাম ব্যতীত আর কিছুই দেখতে পাবে না। কাজেই জাহান্নামকে ভয় কর...।”
📚[সহীহ বুখারী, হা/৭৫১২; সহীহ মুসলিম, হা/১০১৬] সুতরাং সে এটা স্মরণ করবে।
তৃতীয় বিষয় হল: এটা স্মরণ করা যে, তার সাথে আল্লাহ রয়েছেন। আল্লাহ তাকে দেখছেন, শুনছেন এবং তিনি তার সম্পর্কে জানেন। আল্লাহ তাঁর শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং জ্ঞান সহকারে তার সাথে আছেন। সুতরাং তুমি যখন একাকী থাক এবং এসব ফিল্ম ও নোংরা জিনিস দর্শন করো, তখন তুমি স্মরণ করো যে, আল্লাহ তোমাকে এখন দেখছেন এবং আল্লাহ তোমার অবস্থা সম্পর্কে জানেন। তুমি বলো না যে, তুমি নির্জনে রয়েছ। বরং একথা স্মরণ করো যে, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।... (এভাবে দীর্ঘ নসিহত করেছেন শাইখ)”
► [দ্র: www.ajurry.com/vb/showthread.php?t=36833]
.
❒ মাস্টারবেশন থেকে আলেমদের সতর্কীকরণ:
এবার আসি মাস্টারবেশন তথা হস্তমৈথুনের আলোচনায়। এ ব্যাপারে আমাদের আলেমদের অসংখ্য ফাতওয়া রয়েছে। এমনকি ইয়েমেনের মুহাদ্দিছ ও ফাক্বীহ ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) ১৪১১ হিজরীতেই মাস্টারবেশনের উপর স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থটি ইমাম শাওকানীর লেখা “বুলূগুল মিনা ফী হুকমিল ইসতিমনা” গ্রন্থের সাথে একই মলাটে “তুহফাতুশ শাব্বির রব্বানী ফির রদ্দি আলাল ইমাম মুহাম্মাদ বিন আলী আশ-শাওকানী” শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। এই গ্রন্থের ৪৫ পৃষ্ঠা থেকে ৫৮ পৃষ্ঠা অবধি শাইখ মুক্ববিল শরিয়তের দলিল দিয়ে মাস্টারবেশনকে হারাম প্রমাণ করেছেন। এরপর ৫৯ পৃষ্ঠা থেকে ৭৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মাস্টারবেশনের অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আর ৭৫ পৃষ্ঠা থেকে ৮৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মাস্টারবেশন থেকে বাঁচার উপায় বর্ণনা করেছেন।
আমাদের আলেমগণ সতর্ক করেননি? এসব উঠতি যুবকরা পর্নোগ্রাফি আর মাস্টারবেশন সম্পর্কে কিছু আর্টিকেল লিখে এমন ভাব ধরেছে, যেন মস্তবড় দাওয়াতী কাজ করে ফেলেছে! আর এই অহংকারে সালাফী আলেমদের শানে নোংরা মন্তব্য করা থেকেও পিছপা হচ্ছে না। আর ‘সহীহ আক্বীদাহ’ বলে টিটকারি করছে। ওহে স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মূর্খ সম্প্রদায়, তোদের জন্মের আগে আমাদের আলেমগণ এসব বিষয়ে সতর্ক করে গেছেন!
✍ ইমাম ইবনু বায (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন -
“হস্তমৈথুনকে ‘আদাতে সির্রিয়্যাহ’ তথা ‘গুপ্তঅভ্যাস’ বলা হয়। এই কাজ নাজায়েয। বরং এথেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। যেহেতু এতে ভয়াবহ ক্ষতি রয়েছে, যা চিকিৎসকগণ উল্লেখ করেছেন।
হস্তমৈথুনে অনেক ক্ষতি রয়েছে এবং মহান আল্লাহর এই বাণীর বিরোধিতাও রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “(মু’মিনদের বৈশিষ্ট্য হল) যারা তাদের নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী। তবে তাদের স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীরা ছাড়া, নিশ্চয়ই এতে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।” [সূরা মুমিনূন: ৫-৭]
হস্তমৈথুন এদের (স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী) ছাড়া অন্য বিষয়। স্ত্রী ছাড়া অন্য বিষয়। স্ত্রীর মাধ্যমে পরিতৃপ্ত হওয়া হল সহবাস। এটা ছাড়া যা কিছু আছে তাই নাজায়েয। আর তা হল- ব্যভিচার, সমকামিতা, হস্তমৈথুন প্রভৃতি। এগুলো অন্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। হস্তমৈথুন করা নাজায়েয। আর এতে যে অসংখ্য অনিষ্টকর বিষয় রয়েছে, মু’মিনের উচিত তা থেকে সতর্ক থাকা।”
► [দ্র: https://tinyurl.com/yawta7pg (শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের আর্টিকেল লিংক)]
.
✍ শাইখ আব্দুল আযীয আর-রাজিহী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন হস্তমৈথুন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে এর কারণে আসা শারীরিক ক্ষতির কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন—
“শারীরিক ক্ষতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত হল:—
১. হস্তমৈথুন দৃষ্টিশক্তি দুর্বল করে।
২. প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৩. আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বজভঙ্গ তৈরি করে।
৪. বিশেষ অঙ্গগুলোর বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়, যেমন: মূত্রনালি, অণ্ডকোষ প্রভৃতি।
৫. অণ্ডকোষে প্রদাহ সৃষ্টি করে, ফলে ব্যক্তির দ্রুতপতন হয়ে যায়।
৬. মেরুদণ্ডের হাড়ে ব্যথা হয়, যেখান থেকে স্পার্ম নির্গত হয়।
৭. কিছু অঙ্গে কাঁপুনি শুরু হয়, যেমন: দুই পা।
এছাড়াও এর ফলে বোধশক্তি লোপ পায়। যা ব্যক্তিকে নির্বুদ্ধিতা ও মানসিক বিকৃতির দিকে ঠেলে দেয়।...”
► [দ্র: www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=89345]
.
✍ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) মাস্টারবেশনে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করে বলেছেন—
“গুপ্তঅভ্যাস তথা হস্তমৈথুন হারাম। অধিকাংশ আলেমগণের মতে এটা কোন অবস্থাতেই বৈধ নয়। সুতরাং তোমার উপর আবশ্যক, আল্লাহর কাছে তাওবাহ করা, এই কাজের দিকে আর ফিরে না যাওয়া এবং ওইসব বিষয় থেকে দূরে থাকা, যা তোমার যৌন উত্তেজনা উসকে দেয়। যেমনটি তুমি উল্লেখ করেছ যে, তুমি টিভি দেখ, ভিডিও দেখ, এবং উত্তেজক দৃশ্য দর্শন করো। তোমার উপর আবশ্যক হল এসব দৃশ্য থেকে দূরে থাকা এবং এসব উত্তেজক দৃশ্যের উপর ভিডিও বা টিভি অন না করা। কেননা এটা অনিষ্টের উপকরণ। মুসলিম নিজে থেকে অনিষ্টের দরজা বন্ধ করে দিবে এবং কল্যাণের দরজা উন্মুক্ত করবে। তোমার কাছে যে বিষয়েই কোন অনিষ্ট ও ফিতনাহ আসুক না কেন, তুমি তা থেকে দূরে থাকবে। আর ফিতনাহ ও অকল্যাণের সবচেয়ে বড় মাধ্যমগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল এ সমস্ত ফিল্ম এবং সিরিয়াল, যেসব সিরিয়ালে সম্মোহনকারী নারীদের আবির্ভাব ঘটে এবং বিভিন্ন উত্তেজক বিষয়ের আবির্ভাব ঘটে। সুতরাং তোমার উপর আবশ্যক হল এসব থেকে দূরে থাকা এবং এগুলোর রাস্তা বন্ধ করা।”
► [দ্র: https://tinyurl.com/yclcqx7j (ইসলামওয়ে ডট নেটের আর্টিকেল লিংক)]
.
✍ ইমাম ইবনু বায (রহিমাহুল্লাহ) একজন মাস্টারবেশনে আসক্ত ব্যক্তিকে নসিহত করতে গিয়ে সুন্দর কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে আমার ভাই, তুমি যদি বিবাহে সক্ষম হও, তাহলে সত্বর বিবাহ কর। তুমি দ্রুত বিবাহের দিকে ধাবিত হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর। এ ব্যাপারে কিছু ধার-দেনা করে হলেও তুমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং দ্রুত বিবাহ কর। তুমি তোমার সুস্থতাকে গনিমত হিসেবে গ্রহণ কর। বিপদ থেকে দূরে থাকাকে গনিমত হিসেবে গ্রহণ কর। তুমি যদি বিবাহ করতে অসমর্থ হও, তাহলে তুমি এই উত্তেজনা প্রশমনকারী উপকরণের দ্বারস্থ হও। সেটা রোযার মাধ্যমে হতে পারে। কেননা রোযা শয়তানের ক্ষেত্রকে সংকুচিত করে। অথবা তা অষুধের মাধ্যমে হতে পারে, যেসব অষুধ এই বিষয়কে প্রশমন করে। তুমি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাও।...”
► [দ্র: https://binbaz.org.sa/old/29429]
এগুলো অতি সামান্য নমুনা দেওয়া হল। এসব ছাড়াও এ ব্যাপারে আমাদের আলেমগণের আরও অনেক লেখনী ও লেকচার ক্লিপস আছে।
❒ বাংলাভাষী দা'ঈগণঃ
⦁ বাংলাভাষী দা‘ঈগণের মধ্যে উস্তায আব্দুল হামীদ ফাইযী তাঁর “যু্ব-সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান” গ্রন্থের (১ম সংস্করণ: ২০১০ খ্রি.) ২৪৫-২৫০ পৃষ্ঠায় মাস্টারবেশনের অপকারিতা এবং এথেকে বাঁচার জন্য ১৭ টি উপদেশ বর্ণনা করেছেন।
⦁ এতদ্ব্যতীত আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব তাঁর “কে বড় ক্ষতিগ্রস্ত” গ্রন্থের (২য় প্রকাশ: ২০০৪ খ্রি.) ৫৮-৬০ পৃষ্ঠায় মাস্টারবেশনের বিধান এবং এর অপকারিতা বর্ণনা করেছেন।
এছাড়া আমাদের বাংলাভাষী এক ঝাক দা'ঈ র লেকচার রয়েছে পর্ণোগ্রাফি ও মাস্টারবেশনের ক্ষতি এবং তার থেকে বাঁচার উপায় সম্বলিত!
⦁ উস্তায আব্দুল্লাহ হামিদ ফাইজি হাফিয্বাহুল্লাহ
► লিংকঃ https://youtu.be/hp-cpsG49ak
⦁ উস্তায শহিদুল্লাহ খান মাদানী হাফিয্বাহুল্লাহ -
► লিংকঃ https://youtu.be/yodzYHUgpNU
⦁ উস্তায মতিউর রাহমান মাদানী হাফিয্বাহুল্লাহ -
► লিংকঃ https://youtu.be/Fr7UA2Mx__w
► লিংকঃ https://youtu.be/Ktnermp9BE0
► লিংকঃ https://youtu.be/YV0IqiKF1এয়া
⦁ উস্তায নাসিল শাহরুখ হাফিয্বাহুল্লাহ -
► https://youtu.be/iEMVBnmm7তস
⦁ ড.আবু বক্কর মুহাম্মাদ যাকারিয়া হাফিয্বাহুল্লাহ -
► লিংকঃ https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2274872959467949&id=1787338651554718
নিশ্চয়ই আল্লাহই পারেন পথভ্রষ্টদের পথ দেখাতে। এই দীর্ঘ আলোচনায় কারো যদি কোনো উপকার হয়ে থাকে, নিশ্চয়ই তার সকল প্রশংসা আল্লাহর! আর যদি এই আলোচনায় কোনো ভ্রান্তি থাকে তা নিশ্চয়ই আমাদের সীমাবদ্ধতা!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা- আমাদের সবাইকে উপরিউক্ত গুপ্ত পাপ থেকে হিফাযত করূন, আমাদের অন্তরসমুহকে ফিতনাকে ফিতনা হিসেবে গন্য করার তাক্বওয়াটুকু দান করূন, ,আমাদের অন্তরসমুহ শয়তানের জিম্মায় ছেড়ে না দিয়ে বরং দ্বীনের সাথে আমাদের অন্তরকে বেঁধে রাখার শক্তি ও ঈমান দান করুন, সর্বপরি, আহলুস সুল্লাহ-র উলামায়ে ক্বেরামের ইত্তেবাহ এবং তাদের উপর বাতিলপন্থীদের আরোপিত ভিবিন্ন মিথ্যা অভিযোগ খন্ডনের তাওফ্বীক দান করূন।
[আ - মীন ]
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
❒ আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী
আখতার বিন আমীর।
■ সহযোগিতায়ঃ [এক দ্বীনী ভাই]
No comments:
Post a Comment