.
❒ এক,
পৃথিবীর বুকে কিছু মহিয়সী রমণীদের আবির্ভাব হয়েছে যাদের তুলনা কেবল তারাই। অসাধারণ তাদের জীবন, অনন্য তাদের আদর্শ, অতুলনীয় তাদের চরিত্র, ফাজায়েল ও মানাকিব তাদের আকাশচুম্বী! তাদের প্রশংসা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ও তার রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । তারা নিরংকুশ ভালবাসা, কঠোর পরিশ্রম ও দাসত্বের মাধ্যমে জয় করেছেন স্বীয় রবকে। তারা নিজের জীবনকে ইসলামের জন্য ব্যয় করে গেছেন। সর্বদা আল্লাহর ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থেকেছেন। সবর-শোকরের সাথে জীবন কাটিয়ে গেছেন। কুরআনুল কারীমকে সাথী বানিয়েছেন। হাদীস চর্চাকে জীবনের অনুষঙ্গ বানিয়েছেন! সব কিছুই করেছেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে!
.
আজকে আমরা তেমনি একজন মহিয়সী নারীকে নিয়ে আলোচনা করব যার নাম উম্মুল মুমিনীন (মুমিনগণের মা) খাদীজাতুল কুবরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা! যিনি জান-মাল দিয়ে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর পাশে থেকে ইসলামের ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছেন। ইসলামের সূচনালগ্নে অর্থ সম্পদ দিয়ে যিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে
সহায়তা করেছেন! তিনিই ছিলেন সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী নারী। রাসুল ﷺ যখন ইসলাম প্রচারের কারণে মক্কার মুশরিকদের থেকে নির্যাতিত অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়েছিলেন তখন তিনিই একমাত্র তার পাশে ছিলেন। তিনিই তাকে সাহস উৎসাহ প্রদান করেছিলেন।
.
রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন প্রচণ্ড দু:খ, কষ্ট ও দুর্দশার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছিলেন তখন তিনিই তার পাশে ছিলেন। প্রচন্ড দুর্ভিক্ষের সময় যখন জীবনধারণের জন্য গাছের পাতা ছাড়া আর অন্য কিছু ছিল না তখনও তিনি স্বামীর সাথে হাসি মুখে সকল কষ্ট সহ্য করে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ চারজন জান্নাতি রমণীর একজন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন -
عن ابن عباس رضى الله عنه قال خط رسول الله صلى الله عليه وسلّم فى الارض اربعة خطوط قال اتدرون ما هذا؟ فقالوا الله ورسوله اعلم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افضل نساء اهل الجنة خديجة بنت خويلد و فاطمة بن محمّد واسية بنت مزاحم امراة فرعون ومريم ابنه عمران رضى الله عنهن رواه احمد ابن حبّان و قال الحاكم وقال الحاكم هذا خديث صحيح الاسناد
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন যমীনের উপর চারটি রেখা অংকন করলেন এবং বললেন, এটা কি তোমরা জানো? সাহাবায়ে কেরাম জবাব দিলেন, আল্লাহ্ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন, জান্নাতি রমণীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন খাদীজাহ বিনতে খুয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ, আছিয়া বিনতে মাযাহেম (ফেরাউনের স্ত্রী) এবং মরিয়াম বিনতে ইমরান (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুন্না)।
--- [আহমদ, ইবনে হিব্বান ]
.
পবিত্র কুরআন নাযিলের সময় রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যখন হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানে মগ্ন ছিলেন, তখনকার সময়ে প্রতিদিন খাবার তৈরী করে পর্বতের চূড়ায় পৌঁছে দিতেন এই মহিয়সী নারী। জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম অনেক সময় উনাকে অভিবাধন জানাতেন।
আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদিন জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর
দরবারে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! খাদীজাহ আপনার জন্য তরকারী, খাবার এবং পানীয় ভর্তি একটি পাত্র নিয়ে আসছে। যখনই আপনার নিকট এসে পৌঁছবে তখনই তার রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার এবং আমার পক্ষ হতে সালাম পেশ করবেন এবং সুসংবাদ দিবেন যে, তার জন্যে রয়েছে জান্নাতে মনিমুক্তা খচিত মহল, যাতে থাকবেনা কোন শোরগোল, আর না থাকবে কোন দুঃখ-কষ্ট।
--- [বুখারী- ৩০৬০, মুসলিম- ২৪৩২]
ভাবা যায়!? স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা উনাকে সালাম পাঠিয়েছেন!
.
❒ দুই,
আম্মাজান আই'শা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুা) ছিলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর একমাত্র কুমারী স্ত্রী! রূপ, গুন, মেধা, প্রজ্ঞায় ছিলেন পরিপূর্ণ। একদা আমর ইবনে আস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার কাছে সবার চেয়ে প্রিয় কে?'
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন : আ'ইশা।
আমর বললেন : পুরুষদের মধ্যে?
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন : আই'শার পিতা!
--- [ বুখারী : ৩৬৬২]
খেয়াল করূন রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- কে প্রশ্ন করা হল পুরুষদের মধ্যে আপনি কাকে বেশি ভালোবাসেন? উত্তরে তিনি বললেন, আইশার পিতাকে। অথচ তিনি চাইলেই বলতে পারতেন আমার সাথী আবু বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) -কে। কিন্তু তিনি বললেন আইশার পিতাকে। এখানেও আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) প্রতি উনার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
.
এবার আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র গল্প শুনুন! যিনি মারা যাওয়ার পরও আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) উনাকে ঈর্ষা করতেন।
.
উম্মুল মু’মিনীন ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, ‘‘আমি নাবী (ﷺ)-এর কোনো স্ত্রীর প্রতি এতো ঈর্ষা করিনি যতটা খাদীজাহ’র প্রতি করেছি (অথচ) তিনি (রাসূল ﷺ) আমাকে বিবাহ করার আগেই ইন্তিকাল করেছেন। কেননা, আমি তাঁকে (রাসূল ﷺ) বারবার তাঁর কথা বলতে শুনেছি, এবং তাঁকে (খাদীজাহ) এই খুশির সংবাদ দেয়ার জন্য আল্লাহ তাঁকে (রাসূল ﷺ) বলেছেন যে, তাঁর জন্য একটি ক্বাসাবের প্রাসাদ থাকবে। এবং যখনই তিনি (রাসূল ﷺ) একটি বকরি যবেহ করতেন, এর একটি অংশ তিনি তাঁর (খাদীজাহ) বান্ধবীদের নিকট পাঠিয়ে দিতেন।’’
--- [ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬১৭৭ ]
.
একদা আইশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বসে আছেন রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- এর সাথে। এমন সময় কেউ একজন দরজায় কড়াঘাত অতপর ভিতরে প্রবেশের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করল। আওয়াজ শুনেই রাসুলুল্লাহ (ﷺ) চমকে উঠলেন! এটা কার কন্ঠস্বর? মুহুর্তেই খাদীজার কথা মনে পড়ে গেল! আগন্তুক ঘরে প্রবেশ করলেন। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে দেখে বললেন, হায় আল্লাহ! এ তো হা'লা!'
উল্লেখ্য যে, হা'লা ছিলেন খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র বোন এবং উভয়ের কন্ঠস্বর একই রকম ছিল!
এই দৃশ্য দেখে আইশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র খুব ইর্ষা হলো। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মৃত স্ত্রীকে এতটা ভালোবাসেন! স্ত্রীর জীবন ফুরিয়ে গেছে, কিন্তু স্ত্রীর জন্য স্বামীর ভালোবাসা ফুরায়নি। মৃত্যুর পরও তিনি তাকে ভুলতে পারছেন না!
--- [ বুখারী : ৩৮১০, মুসলিম : ২৪৩৭]
.
ইমাম আহ্মাদ ও তিরমিযী (রাহিমাহুমুল্লাহ) থেকে সংকলিত একটি হাদীসে রয়েছে ,
আম্মাজান আ'ইশা ( রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,
এমন অনেক দিন হয়েছে যে, খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) প্রশংসা না করে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ঘর থেকে বের হন নি! একদিন এভাবে তিনি খাদীজার প্রশংসা করছিলেন! আমি আর সহ্য করতে না পেরে বলে উঠলাম, তিনি কী এমন ছিলেন? তাঁর চেয়েও উত্তম নারী দিয়ে কি আল্লাহ্ তাআলা আপনার স্ত্রীর স্থান পূরণ করে দেননি?
একথা শোনামাত্র রাসুলুল্লাহ (ﷺ) রাগত স্বরে বলেন,
'না, আল্লাহ্র শপথ, তিনি খাদীজার চাইতে উত্তম আর কাউকেই আমার জীবনে আনেননি। যখন সবাই আমাকে অস্বীকার করেছে, তখন সে আমার ওপর আস্থা রেখেছে। যখন সবাই আমাকে মিথ্যুক ডেকেছে, তখন সে আমাকে বিশ্বাস করেছে। যখন সবাই আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তখন সে, তাঁর সবকিছু দিয়ে আমাকে স্বস্তি দিয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর মাধ্যমে আমার ওপর রহ্মত দিয়েছেন, আমাকে তাঁর থেকে সন্তান দান করেছেন।'
গৃহীত :
--- [আল্লামাহ সফিউর রাহমান মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) বি'রচিত সীরাহ্গ্রন্থ আর্-রাহীকুল মাখতুম থেকে]
.
আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর দরবারে কোন হাদিয়া আসলে তিনি বলতেন, তোমরা এই হাদিয়া উমুক মহিলার ঘরে নিয়ে যাও কারণ তিনি আমার খাদীজার বান্ধবী। আবার কখনো বলতেন, তোমরা এই হাদিয়া উমুকের ঘরে নিয়ে যাও, কারণ তিনি আমার খাদীজাকে ভালবাসেন।
আবদুল্লাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আম্মাজান আইশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
"যখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আম্মাজান খাদীজাতুল কুবরার প্রশংসামূলক আলোচনা শুরু করতেন, তখন বিরতিহীনভাবে করতেন, তিনি ক্লান্ত হতেন না।
--- [তাবরানী , হাদীস নং : ২১]
.
সুপ্রিয় পাঠক, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে, কি পরিমাণ ভালোবাসতেন তা নিশ্চয়ই আমরা সকলেই জানি। এবার ভেবে দেখুন তো, আম্মাজান খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে কতটা ভালোবাসতেন যার কারণে আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) পর্যন্ত ঈর্ষা করতেন।
.
❒ তিন,
এই পর্যায়ে আমরা একটি বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের পর্যালোচনা করবো। [ ওয়া বিল্লাহীত তাওফীক্ব ]।
সুরেলা কণ্ঠের জামাতী বক্তা মিজানুর রাহমান আল আযহারী (হাদাহুল্লাহ) নামক এক ব্যক্তির একটি আপত্তিকর ভিডিয়ো প্রকাশ পেয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়! ঐ ভিডিয়োতে তিনি আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র সম্পর্কে কয়েকটি বেফাঁস মন্তব্য করেন! উক্ত ভিডিয়ো'তে আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা' ও রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বৈবাহিক অবস্থার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন -
ক. খাদীজাহ তালাক খাইছে!
খ. খাদীজাহ পৌঢ়া ছিলেন!
গ. খাদীজাহ ইনট্যাক্ট ছিলেন না!
ঘ. খাদীজাহ ৪০ বছরের বুড়ি ছিলেন!
আল ইয়াযু বিল্লাহ!
[ কমেন্টবক্সে লিংক ]
.
❒ পর্যালোচনা :
🔸প্রথমত,
আমাদের সমাজে "উমুক মেয়ে তালাক খাইছে" বলা হয় তাচ্ছিল্যঅর্থে! সাধারণত গ্রাম্য মহিলারা একজন আরেকজনকে খোটা দিয়ে এসব কথা বলে থাকে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য করা হয়, তালাকপ্রাপ্তা মহিলার মধ্যে হয় স্বভাবগত, আর না হয় অভ্যাসগত কোনো খারাবী ছিল যার কারণে স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দিয়েছে!
সুপ্রিয় পাঠক, আমি যদি আপনার মায়ের ব্যাপারে এমন মন্তব্য করি যে," আপনার বাপের সাথে বিয়ের পূর্বে আপনার মা দু'দুইবার তালাক খাইছে অথবা আপনার মা ইনট্যাক্ট নন"
আল্লাহর কসম করে বলুনতো - আপনার অনুভূতি তখন কেমন হবে!? যদি এমন কুরুচিপূর্ণ শব্দচয়ন আপনার মায়ের ক্ষেত্রে যুতসই না হয় তাহলে ইসলামের প্রাথমিক যুগের নিবেদিত প্রাণ , শ্রেষ্ঠ জান্নাতি নারী, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- এর প্রিয়তমা স্ত্রী, মুমিনগণের মায়ের ক্ষেত্রে কি করে তা শোভনীয় হতে পারে?
.
এবার মুল কথায় আসি, আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন মক্কার শ্রেষ্ঠ ধনী ও সম্ভ্রান্ত মহিলা এবং সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারিণী হিসাবে সেযুগের কাফির,মুশরিকদের কর্তৃক ‘ত্বাহেরা’ (পবিত্রা) নামে খ্যাত। আল্লাহর রাসুল (ﷺ)-এর সাথে বিবাহের পূর্বে উনার দু’দুজন স্বামী মৃত্যুবরণ করেন এবং তাদের সাথে মাত্র কয়েক বছরের সংসার জীবন অতিবাহিত করেন! স্বামীদ্বয়ের মৃত্যুর পরে তিনি তাদের প্রভূত সম্পদের মালিক হন। তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী হলে নিশ্চয়ই তিনি স্বামীর সম্পদ পেতেন না। সুতরাং বক্তার উক্ত দাবী মিথ্যা, বানোয়াট এবং মনগড়া।
তাছাড়া প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ইবনু হিশাম ও আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া-তে আম্মাজান খাদীজাহ ও রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিবাহের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে -
"রাসুলুল্লাহ ﷺ মিষ্টভাষিতা, সত্যবাদিতা, আমানতদারী এবং উন্নত চিন্তা-চেতনার কথা শুনে আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়েন। ইতিপূর্বে পরপর দু’জন স্বামী মৃত্যুবরণ করায় মক্কার সেরা নেতৃবৃন্দ তাঁর নিকটে বিয়ের পয়গাম পাঠান। কিন্তু তিনি কোনটাই গ্রহণ করেননি। অত:পর তিনি নিজেই বান্ধবী নাফীসার মাধ্যমে নিজের বিয়ের পয়গাম পাঠালেন যুবক মুহাম্মাদ ﷺ-এর কাছে। তখন উভয় পক্ষের মুরব্বীদের সম্মতিক্রমে শাম থেকে ফিরে আসার মাত্র দু’মাসের মাথায় সমাজনেতাদের উপস্থিতিতে ধুমধামের সাথে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। রাসুলুল্লাহ ﷺ স্বীয় বিবাহের মোহরানা স্বরূপ ২০টি উট প্রদান করেন। উল্লেখ্য যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ ছিলেন খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার তৃতীয় স্বামী। অন্যদিকে খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রথমা স্ত্রী"।
[ ইবনু হিশাম ১/১৮৭-৮৯; আল-বিদায়াহ ২/২৯৩-৯৪ ]
.
অতএব, আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা "তালাক খাইছে" এমন তাচ্ছিল্যমুলক শব্দচয়ন করা
নবী পরিবারের শানে চরম বে'আদবী ও অসম্মানজনক।
.
🔸দ্বিতীয়ত,
বক্তা সাহেব তার উক্ত বক্তব্যে আরও দাবী করেছেন "আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ৪০ বছরের বুড়ি ছিলেন"!
জবাব :
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর সময় আরবে মানুষের বয়স সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো বিভ্রান্তিকর এবং অনির্দিষ্ট ছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সাধারণ ধারণা হচ্ছে, খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিয়ের সময় রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- এর বয়স ছিল ২৫ অন্যদিকে খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর বয়স ছিল ৪০। ইবনে হিশাম রচিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সিরাত গ্রন্থে এরকম উল্লেখ থাকলেও সে সময়
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বয়স সম্পর্কে আরো দু’টি ভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে বিয়ের সময়
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বয়স ছিল ৩০, অন্যটিতে বলা হয়েছে ২৯। সে সময় খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) বয়স কত ছিল সে সম্পর্কেও বর্ণনার বিভিন্নতা আছে - কোথাও বলা হয়েছে সে সময় তার বয়স ছিল ৩৫ কোথাও বলা হয়েছে ২৫। কোথাও বলা হয়েছে ২৭!
এদত্বস্বত্তেও আমাদের বক্তা ও লিখকগন শুধুমাত্র ৪০ বছরের বর্ণনাটি উল্লেখ করে আম্মাজান খাদিজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে "বুড়ি" প্রমাণে মরিয়া হয়ে যান! আল ইয়াযু বিল্লাহ।
.
🔸প্রথম দলিলের খন্ডন :
ইবনে হিশাম রচিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সিরাত গ্রন্থে আম্মাজান খাদীজাহ' রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র বিবাহকালের বয়স উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে -
"বিয়ের সময় আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র বয়স ছিল ৪০ এবং রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ছিল ২৫।
--- [ ইবনু হিশাম ১/১৮৭ ]
.
ইবনু হিশামে উল্লিখিত আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার বয়স যে ৪০ ছিল, তা অনেকেই মানতে রাজী হননি। কেবল এতটুকুই স্বীকার করেছেন যে, খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র বয়স রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- চেয়ে কিছুটা বেশী ছিল।
--- [ নবীজীবনী পৃঃ ৬৬; দ্রঃ মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মোস্তফা চরিত ২৯০-৯১ পৃঃ ]
.
🔸দ্বিতীয় দলিলের খন্ডন :
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- এবং আম্মাজান খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) বিবাহের সময় বয়সের ব্যাপারে অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বয়স ২৫ এবং খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এর বয়স ৪০ সম্বলিত 'তারীখে তাবারী' গ্রন্থে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা জাল, অগ্রহণযোগ্য!'
ইমাম ইবনে জারীর আত তাবারী [ রাহিমাহুল্লাহ ] তার 'তারীখ' গ্রন্থে 'ذكر تزويج النبي ص خديجة رضي الله عنها'
অধ্যায়ে এই বর্ণনাটি এনেছেন।
বর্ণনা:
قال هشام بن محمد: نكح رسول الله ص خديجة، وهو ابن خمس وعشرين سنة، وخديجة يومئذ ابنة أربعين سنة.
[ তারীখে তাবারী : ২/২৮০ ]
.
🔸তাহক্বীক্বঃ
উক্ত বর্ণনা দুইজন রাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। একজন হলেন মুহাম্মদ বিন উমার আল-ওয়াক্বেদী, যিনি জামহূর মুহাদ্দেসীনের নিকট যঈফ এবং মাতরূক রাবী।
-
ক) হাফেয যাহাবী (রাহঃ) বলেনঃ তার যঈফ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা' রয়েছে।
খ) সে ছিল রাফেযী শিয়া।
গ) ইমাম শাফেঈ (রাহঃ) বলেনঃ ওয়াক্বেদীর সবগুলো কিতাব মিথ্যা।
ঘ) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাহঃ) তার জাল রিওয়ায়েত সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
-
আরেকজন রাবী হচ্ছেন 'هشام بن محمد' যার পুরো নাম হচ্ছে '(هشام بن محمد بن السائب الكلبي') হিশাম বিন মুহাম্মদ বিন ছাইব আল কালবী। ইনিও জামহূর মুহাদ্দেসীনের নিকট যঈফ, মাতরূক এবং শিয়া, রাফেযী।
জারাহ ওয়াত ত্বাদীলের ইমাম শামসুদ্দীন আয যাহাবী [ রাহিমাহুল্লাহ ] এই রাবীর ব্যাপারে বলেন :
هشام بن محمد بن السائب الكلبي، أبو المنذر الاخباري النسابة العلامة.
روى عن أبيه أبي النضر الكلبي المفسر، وعن مجاهد، وحدث عنه جماعة.
قال أحمد بن حنبل: إنما كان صاحب سمر ونسب، ما ظننت أن أحدا يحدث عنه.
وقال الدارقطني وغيره: متروك.
وقال ابن عساكر: رافضي، ليس بثقة.
--- [ মিযানুল ই'তিদাল,রাবী নং ৯২৩৭ দ্র: ]
সুতরাং বর্ণনাটি জাল।
.
জ্ঞাতব্য যে, হাদীস, মাগাযী এবং তারীখের কিতাবগুলোতে যেসব রিওয়ায়াত সংকলন করা হয়েছে, সেখানে সানাদ সহ সংকলন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল কারো ব্যাপারে যতগুলো বর্ণনা পাওয়া যায় সেগুলো উল্লেখ করা। আর তারা অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো্র সানাদ তাহক্বীক্ব করে দিয়ে যান নি। কাজেই যে ব্যক্তি সেগুলো থেকে দলীল নিতে চায়, তার দায়িত্ব হল সেগুলো সহীহ সাবিত করে গ্রহণ করা।
-
❒ উপসংহার:
পরিশেষে আবারও বলছি, ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম চরিত্রের অধিকারিনী উম্মুল মু’মিনীন [ মুমিনগণের মা ] তথা নবী পত্নীদের ব্যাপারে কটু কথা বলা, তাচ্ছিল্য করা, উপহাস করা, তাদের নামে মিথ্যাচার করা, তাদের সম্মানহানি করা,তাদের শানে অসম্মানজনক শব্দচয়ন করা, তাদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় এমন মন্তব্য করা নিশ্চয়ই বদ-বখতির কারণ৷ এটা এমন এক দরজা যেখানে বে'আদবী করার কারণে আল্লাহপ্রদত্ত কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবেই তা সুনিশ্চিত। ঐ শুনুন,প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ﷺ এর হুশিয়ারি -“নিশ্চয়ই মানুষ এমন কথাও বলে, যাতে সে কোন ক্ষতি আছে বলে মনে করেনা; অথচ এর জন্যই সে ৭০ বছরের পথ জাহান্নামে অধঃপতিত হয়।”
--- [তিরমিযী, হা/২৩১৪]
.
অতএব বক্তা সাহেবকে বলব - "জবানে লাগাম দিন"।
.
হে আল্লাহ, আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে সালাফী মানহাজ অনুসরণ করার তাওফীক্ব দিন এবং অসাধু বক্তাদের বক্তব্যের ফিতনাহ থেকে আমাদের হিফাযত করুন। আমীন, ইয়া রব্বাল ‘আলামীন।
.
আপনাদের দ্বীনীভাই,
আখতার বিন আমীর।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
❒ এক,
পৃথিবীর বুকে কিছু মহিয়সী রমণীদের আবির্ভাব হয়েছে যাদের তুলনা কেবল তারাই। অসাধারণ তাদের জীবন, অনন্য তাদের আদর্শ, অতুলনীয় তাদের চরিত্র, ফাজায়েল ও মানাকিব তাদের আকাশচুম্বী! তাদের প্রশংসা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ও তার রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । তারা নিরংকুশ ভালবাসা, কঠোর পরিশ্রম ও দাসত্বের মাধ্যমে জয় করেছেন স্বীয় রবকে। তারা নিজের জীবনকে ইসলামের জন্য ব্যয় করে গেছেন। সর্বদা আল্লাহর ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থেকেছেন। সবর-শোকরের সাথে জীবন কাটিয়ে গেছেন। কুরআনুল কারীমকে সাথী বানিয়েছেন। হাদীস চর্চাকে জীবনের অনুষঙ্গ বানিয়েছেন! সব কিছুই করেছেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে!
.
আজকে আমরা তেমনি একজন মহিয়সী নারীকে নিয়ে আলোচনা করব যার নাম উম্মুল মুমিনীন (মুমিনগণের মা) খাদীজাতুল কুবরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা! যিনি জান-মাল দিয়ে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর পাশে থেকে ইসলামের ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছেন। ইসলামের সূচনালগ্নে অর্থ সম্পদ দিয়ে যিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে
সহায়তা করেছেন! তিনিই ছিলেন সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী নারী। রাসুল ﷺ যখন ইসলাম প্রচারের কারণে মক্কার মুশরিকদের থেকে নির্যাতিত অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়েছিলেন তখন তিনিই একমাত্র তার পাশে ছিলেন। তিনিই তাকে সাহস উৎসাহ প্রদান করেছিলেন।
.
রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন প্রচণ্ড দু:খ, কষ্ট ও দুর্দশার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছিলেন তখন তিনিই তার পাশে ছিলেন। প্রচন্ড দুর্ভিক্ষের সময় যখন জীবনধারণের জন্য গাছের পাতা ছাড়া আর অন্য কিছু ছিল না তখনও তিনি স্বামীর সাথে হাসি মুখে সকল কষ্ট সহ্য করে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ চারজন জান্নাতি রমণীর একজন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন -
عن ابن عباس رضى الله عنه قال خط رسول الله صلى الله عليه وسلّم فى الارض اربعة خطوط قال اتدرون ما هذا؟ فقالوا الله ورسوله اعلم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افضل نساء اهل الجنة خديجة بنت خويلد و فاطمة بن محمّد واسية بنت مزاحم امراة فرعون ومريم ابنه عمران رضى الله عنهن رواه احمد ابن حبّان و قال الحاكم وقال الحاكم هذا خديث صحيح الاسناد
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন যমীনের উপর চারটি রেখা অংকন করলেন এবং বললেন, এটা কি তোমরা জানো? সাহাবায়ে কেরাম জবাব দিলেন, আল্লাহ্ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন, জান্নাতি রমণীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন খাদীজাহ বিনতে খুয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ, আছিয়া বিনতে মাযাহেম (ফেরাউনের স্ত্রী) এবং মরিয়াম বিনতে ইমরান (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুন্না)।
--- [আহমদ, ইবনে হিব্বান ]
.
পবিত্র কুরআন নাযিলের সময় রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যখন হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানে মগ্ন ছিলেন, তখনকার সময়ে প্রতিদিন খাবার তৈরী করে পর্বতের চূড়ায় পৌঁছে দিতেন এই মহিয়সী নারী। জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম অনেক সময় উনাকে অভিবাধন জানাতেন।
আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদিন জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর
দরবারে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! খাদীজাহ আপনার জন্য তরকারী, খাবার এবং পানীয় ভর্তি একটি পাত্র নিয়ে আসছে। যখনই আপনার নিকট এসে পৌঁছবে তখনই তার রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার এবং আমার পক্ষ হতে সালাম পেশ করবেন এবং সুসংবাদ দিবেন যে, তার জন্যে রয়েছে জান্নাতে মনিমুক্তা খচিত মহল, যাতে থাকবেনা কোন শোরগোল, আর না থাকবে কোন দুঃখ-কষ্ট।
--- [বুখারী- ৩০৬০, মুসলিম- ২৪৩২]
ভাবা যায়!? স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা উনাকে সালাম পাঠিয়েছেন!
.
❒ দুই,
আম্মাজান আই'শা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুা) ছিলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর একমাত্র কুমারী স্ত্রী! রূপ, গুন, মেধা, প্রজ্ঞায় ছিলেন পরিপূর্ণ। একদা আমর ইবনে আস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার কাছে সবার চেয়ে প্রিয় কে?'
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন : আ'ইশা।
আমর বললেন : পুরুষদের মধ্যে?
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন : আই'শার পিতা!
--- [ বুখারী : ৩৬৬২]
খেয়াল করূন রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- কে প্রশ্ন করা হল পুরুষদের মধ্যে আপনি কাকে বেশি ভালোবাসেন? উত্তরে তিনি বললেন, আইশার পিতাকে। অথচ তিনি চাইলেই বলতে পারতেন আমার সাথী আবু বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) -কে। কিন্তু তিনি বললেন আইশার পিতাকে। এখানেও আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) প্রতি উনার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
.
এবার আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র গল্প শুনুন! যিনি মারা যাওয়ার পরও আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) উনাকে ঈর্ষা করতেন।
.
উম্মুল মু’মিনীন ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, ‘‘আমি নাবী (ﷺ)-এর কোনো স্ত্রীর প্রতি এতো ঈর্ষা করিনি যতটা খাদীজাহ’র প্রতি করেছি (অথচ) তিনি (রাসূল ﷺ) আমাকে বিবাহ করার আগেই ইন্তিকাল করেছেন। কেননা, আমি তাঁকে (রাসূল ﷺ) বারবার তাঁর কথা বলতে শুনেছি, এবং তাঁকে (খাদীজাহ) এই খুশির সংবাদ দেয়ার জন্য আল্লাহ তাঁকে (রাসূল ﷺ) বলেছেন যে, তাঁর জন্য একটি ক্বাসাবের প্রাসাদ থাকবে। এবং যখনই তিনি (রাসূল ﷺ) একটি বকরি যবেহ করতেন, এর একটি অংশ তিনি তাঁর (খাদীজাহ) বান্ধবীদের নিকট পাঠিয়ে দিতেন।’’
--- [ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬১৭৭ ]
.
একদা আইশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বসে আছেন রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- এর সাথে। এমন সময় কেউ একজন দরজায় কড়াঘাত অতপর ভিতরে প্রবেশের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করল। আওয়াজ শুনেই রাসুলুল্লাহ (ﷺ) চমকে উঠলেন! এটা কার কন্ঠস্বর? মুহুর্তেই খাদীজার কথা মনে পড়ে গেল! আগন্তুক ঘরে প্রবেশ করলেন। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে দেখে বললেন, হায় আল্লাহ! এ তো হা'লা!'
উল্লেখ্য যে, হা'লা ছিলেন খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র বোন এবং উভয়ের কন্ঠস্বর একই রকম ছিল!
এই দৃশ্য দেখে আইশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র খুব ইর্ষা হলো। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মৃত স্ত্রীকে এতটা ভালোবাসেন! স্ত্রীর জীবন ফুরিয়ে গেছে, কিন্তু স্ত্রীর জন্য স্বামীর ভালোবাসা ফুরায়নি। মৃত্যুর পরও তিনি তাকে ভুলতে পারছেন না!
--- [ বুখারী : ৩৮১০, মুসলিম : ২৪৩৭]
.
ইমাম আহ্মাদ ও তিরমিযী (রাহিমাহুমুল্লাহ) থেকে সংকলিত একটি হাদীসে রয়েছে ,
আম্মাজান আ'ইশা ( রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,
এমন অনেক দিন হয়েছে যে, খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) প্রশংসা না করে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ঘর থেকে বের হন নি! একদিন এভাবে তিনি খাদীজার প্রশংসা করছিলেন! আমি আর সহ্য করতে না পেরে বলে উঠলাম, তিনি কী এমন ছিলেন? তাঁর চেয়েও উত্তম নারী দিয়ে কি আল্লাহ্ তাআলা আপনার স্ত্রীর স্থান পূরণ করে দেননি?
একথা শোনামাত্র রাসুলুল্লাহ (ﷺ) রাগত স্বরে বলেন,
'না, আল্লাহ্র শপথ, তিনি খাদীজার চাইতে উত্তম আর কাউকেই আমার জীবনে আনেননি। যখন সবাই আমাকে অস্বীকার করেছে, তখন সে আমার ওপর আস্থা রেখেছে। যখন সবাই আমাকে মিথ্যুক ডেকেছে, তখন সে আমাকে বিশ্বাস করেছে। যখন সবাই আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তখন সে, তাঁর সবকিছু দিয়ে আমাকে স্বস্তি দিয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর মাধ্যমে আমার ওপর রহ্মত দিয়েছেন, আমাকে তাঁর থেকে সন্তান দান করেছেন।'
গৃহীত :
--- [আল্লামাহ সফিউর রাহমান মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) বি'রচিত সীরাহ্গ্রন্থ আর্-রাহীকুল মাখতুম থেকে]
.
আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর দরবারে কোন হাদিয়া আসলে তিনি বলতেন, তোমরা এই হাদিয়া উমুক মহিলার ঘরে নিয়ে যাও কারণ তিনি আমার খাদীজার বান্ধবী। আবার কখনো বলতেন, তোমরা এই হাদিয়া উমুকের ঘরে নিয়ে যাও, কারণ তিনি আমার খাদীজাকে ভালবাসেন।
আবদুল্লাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আম্মাজান আইশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
"যখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আম্মাজান খাদীজাতুল কুবরার প্রশংসামূলক আলোচনা শুরু করতেন, তখন বিরতিহীনভাবে করতেন, তিনি ক্লান্ত হতেন না।
--- [তাবরানী , হাদীস নং : ২১]
.
সুপ্রিয় পাঠক, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে, কি পরিমাণ ভালোবাসতেন তা নিশ্চয়ই আমরা সকলেই জানি। এবার ভেবে দেখুন তো, আম্মাজান খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে কতটা ভালোবাসতেন যার কারণে আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) পর্যন্ত ঈর্ষা করতেন।
.
❒ তিন,
এই পর্যায়ে আমরা একটি বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের পর্যালোচনা করবো। [ ওয়া বিল্লাহীত তাওফীক্ব ]।
সুরেলা কণ্ঠের জামাতী বক্তা মিজানুর রাহমান আল আযহারী (হাদাহুল্লাহ) নামক এক ব্যক্তির একটি আপত্তিকর ভিডিয়ো প্রকাশ পেয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়! ঐ ভিডিয়োতে তিনি আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র সম্পর্কে কয়েকটি বেফাঁস মন্তব্য করেন! উক্ত ভিডিয়ো'তে আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা' ও রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বৈবাহিক অবস্থার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন -
ক. খাদীজাহ তালাক খাইছে!
খ. খাদীজাহ পৌঢ়া ছিলেন!
গ. খাদীজাহ ইনট্যাক্ট ছিলেন না!
ঘ. খাদীজাহ ৪০ বছরের বুড়ি ছিলেন!
আল ইয়াযু বিল্লাহ!
[ কমেন্টবক্সে লিংক ]
.
❒ পর্যালোচনা :
🔸প্রথমত,
আমাদের সমাজে "উমুক মেয়ে তালাক খাইছে" বলা হয় তাচ্ছিল্যঅর্থে! সাধারণত গ্রাম্য মহিলারা একজন আরেকজনকে খোটা দিয়ে এসব কথা বলে থাকে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য করা হয়, তালাকপ্রাপ্তা মহিলার মধ্যে হয় স্বভাবগত, আর না হয় অভ্যাসগত কোনো খারাবী ছিল যার কারণে স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দিয়েছে!
সুপ্রিয় পাঠক, আমি যদি আপনার মায়ের ব্যাপারে এমন মন্তব্য করি যে," আপনার বাপের সাথে বিয়ের পূর্বে আপনার মা দু'দুইবার তালাক খাইছে অথবা আপনার মা ইনট্যাক্ট নন"
আল্লাহর কসম করে বলুনতো - আপনার অনুভূতি তখন কেমন হবে!? যদি এমন কুরুচিপূর্ণ শব্দচয়ন আপনার মায়ের ক্ষেত্রে যুতসই না হয় তাহলে ইসলামের প্রাথমিক যুগের নিবেদিত প্রাণ , শ্রেষ্ঠ জান্নাতি নারী, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- এর প্রিয়তমা স্ত্রী, মুমিনগণের মায়ের ক্ষেত্রে কি করে তা শোভনীয় হতে পারে?
.
এবার মুল কথায় আসি, আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন মক্কার শ্রেষ্ঠ ধনী ও সম্ভ্রান্ত মহিলা এবং সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারিণী হিসাবে সেযুগের কাফির,মুশরিকদের কর্তৃক ‘ত্বাহেরা’ (পবিত্রা) নামে খ্যাত। আল্লাহর রাসুল (ﷺ)-এর সাথে বিবাহের পূর্বে উনার দু’দুজন স্বামী মৃত্যুবরণ করেন এবং তাদের সাথে মাত্র কয়েক বছরের সংসার জীবন অতিবাহিত করেন! স্বামীদ্বয়ের মৃত্যুর পরে তিনি তাদের প্রভূত সম্পদের মালিক হন। তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী হলে নিশ্চয়ই তিনি স্বামীর সম্পদ পেতেন না। সুতরাং বক্তার উক্ত দাবী মিথ্যা, বানোয়াট এবং মনগড়া।
তাছাড়া প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ইবনু হিশাম ও আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া-তে আম্মাজান খাদীজাহ ও রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিবাহের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে -
"রাসুলুল্লাহ ﷺ মিষ্টভাষিতা, সত্যবাদিতা, আমানতদারী এবং উন্নত চিন্তা-চেতনার কথা শুনে আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়েন। ইতিপূর্বে পরপর দু’জন স্বামী মৃত্যুবরণ করায় মক্কার সেরা নেতৃবৃন্দ তাঁর নিকটে বিয়ের পয়গাম পাঠান। কিন্তু তিনি কোনটাই গ্রহণ করেননি। অত:পর তিনি নিজেই বান্ধবী নাফীসার মাধ্যমে নিজের বিয়ের পয়গাম পাঠালেন যুবক মুহাম্মাদ ﷺ-এর কাছে। তখন উভয় পক্ষের মুরব্বীদের সম্মতিক্রমে শাম থেকে ফিরে আসার মাত্র দু’মাসের মাথায় সমাজনেতাদের উপস্থিতিতে ধুমধামের সাথে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। রাসুলুল্লাহ ﷺ স্বীয় বিবাহের মোহরানা স্বরূপ ২০টি উট প্রদান করেন। উল্লেখ্য যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ ছিলেন খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার তৃতীয় স্বামী। অন্যদিকে খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রথমা স্ত্রী"।
[ ইবনু হিশাম ১/১৮৭-৮৯; আল-বিদায়াহ ২/২৯৩-৯৪ ]
.
অতএব, আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা "তালাক খাইছে" এমন তাচ্ছিল্যমুলক শব্দচয়ন করা
নবী পরিবারের শানে চরম বে'আদবী ও অসম্মানজনক।
.
🔸দ্বিতীয়ত,
বক্তা সাহেব তার উক্ত বক্তব্যে আরও দাবী করেছেন "আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ৪০ বছরের বুড়ি ছিলেন"!
জবাব :
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর সময় আরবে মানুষের বয়স সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো বিভ্রান্তিকর এবং অনির্দিষ্ট ছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সাধারণ ধারণা হচ্ছে, খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিয়ের সময় রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- এর বয়স ছিল ২৫ অন্যদিকে খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর বয়স ছিল ৪০। ইবনে হিশাম রচিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সিরাত গ্রন্থে এরকম উল্লেখ থাকলেও সে সময়
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বয়স সম্পর্কে আরো দু’টি ভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে বিয়ের সময়
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বয়স ছিল ৩০, অন্যটিতে বলা হয়েছে ২৯। সে সময় খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) বয়স কত ছিল সে সম্পর্কেও বর্ণনার বিভিন্নতা আছে - কোথাও বলা হয়েছে সে সময় তার বয়স ছিল ৩৫ কোথাও বলা হয়েছে ২৫। কোথাও বলা হয়েছে ২৭!
এদত্বস্বত্তেও আমাদের বক্তা ও লিখকগন শুধুমাত্র ৪০ বছরের বর্ণনাটি উল্লেখ করে আম্মাজান খাদিজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে "বুড়ি" প্রমাণে মরিয়া হয়ে যান! আল ইয়াযু বিল্লাহ।
.
🔸প্রথম দলিলের খন্ডন :
ইবনে হিশাম রচিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সিরাত গ্রন্থে আম্মাজান খাদীজাহ' রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র বিবাহকালের বয়স উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে -
"বিয়ের সময় আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র বয়স ছিল ৪০ এবং রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ছিল ২৫।
--- [ ইবনু হিশাম ১/১৮৭ ]
.
ইবনু হিশামে উল্লিখিত আম্মাজান খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার বয়স যে ৪০ ছিল, তা অনেকেই মানতে রাজী হননি। কেবল এতটুকুই স্বীকার করেছেন যে, খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র বয়স রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- চেয়ে কিছুটা বেশী ছিল।
--- [ নবীজীবনী পৃঃ ৬৬; দ্রঃ মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মোস্তফা চরিত ২৯০-৯১ পৃঃ ]
.
🔸দ্বিতীয় দলিলের খন্ডন :
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- এবং আম্মাজান খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) বিবাহের সময় বয়সের ব্যাপারে অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বয়স ২৫ এবং খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এর বয়স ৪০ সম্বলিত 'তারীখে তাবারী' গ্রন্থে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা জাল, অগ্রহণযোগ্য!'
ইমাম ইবনে জারীর আত তাবারী [ রাহিমাহুল্লাহ ] তার 'তারীখ' গ্রন্থে 'ذكر تزويج النبي ص خديجة رضي الله عنها'
অধ্যায়ে এই বর্ণনাটি এনেছেন।
বর্ণনা:
قال هشام بن محمد: نكح رسول الله ص خديجة، وهو ابن خمس وعشرين سنة، وخديجة يومئذ ابنة أربعين سنة.
[ তারীখে তাবারী : ২/২৮০ ]
.
🔸তাহক্বীক্বঃ
উক্ত বর্ণনা দুইজন রাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। একজন হলেন মুহাম্মদ বিন উমার আল-ওয়াক্বেদী, যিনি জামহূর মুহাদ্দেসীনের নিকট যঈফ এবং মাতরূক রাবী।
-
ক) হাফেয যাহাবী (রাহঃ) বলেনঃ তার যঈফ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা' রয়েছে।
খ) সে ছিল রাফেযী শিয়া।
গ) ইমাম শাফেঈ (রাহঃ) বলেনঃ ওয়াক্বেদীর সবগুলো কিতাব মিথ্যা।
ঘ) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাহঃ) তার জাল রিওয়ায়েত সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
-
আরেকজন রাবী হচ্ছেন 'هشام بن محمد' যার পুরো নাম হচ্ছে '(هشام بن محمد بن السائب الكلبي') হিশাম বিন মুহাম্মদ বিন ছাইব আল কালবী। ইনিও জামহূর মুহাদ্দেসীনের নিকট যঈফ, মাতরূক এবং শিয়া, রাফেযী।
জারাহ ওয়াত ত্বাদীলের ইমাম শামসুদ্দীন আয যাহাবী [ রাহিমাহুল্লাহ ] এই রাবীর ব্যাপারে বলেন :
هشام بن محمد بن السائب الكلبي، أبو المنذر الاخباري النسابة العلامة.
روى عن أبيه أبي النضر الكلبي المفسر، وعن مجاهد، وحدث عنه جماعة.
قال أحمد بن حنبل: إنما كان صاحب سمر ونسب، ما ظننت أن أحدا يحدث عنه.
وقال الدارقطني وغيره: متروك.
وقال ابن عساكر: رافضي، ليس بثقة.
--- [ মিযানুল ই'তিদাল,রাবী নং ৯২৩৭ দ্র: ]
সুতরাং বর্ণনাটি জাল।
.
জ্ঞাতব্য যে, হাদীস, মাগাযী এবং তারীখের কিতাবগুলোতে যেসব রিওয়ায়াত সংকলন করা হয়েছে, সেখানে সানাদ সহ সংকলন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল কারো ব্যাপারে যতগুলো বর্ণনা পাওয়া যায় সেগুলো উল্লেখ করা। আর তারা অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো্র সানাদ তাহক্বীক্ব করে দিয়ে যান নি। কাজেই যে ব্যক্তি সেগুলো থেকে দলীল নিতে চায়, তার দায়িত্ব হল সেগুলো সহীহ সাবিত করে গ্রহণ করা।
-
❒ উপসংহার:
পরিশেষে আবারও বলছি, ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম চরিত্রের অধিকারিনী উম্মুল মু’মিনীন [ মুমিনগণের মা ] তথা নবী পত্নীদের ব্যাপারে কটু কথা বলা, তাচ্ছিল্য করা, উপহাস করা, তাদের নামে মিথ্যাচার করা, তাদের সম্মানহানি করা,তাদের শানে অসম্মানজনক শব্দচয়ন করা, তাদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় এমন মন্তব্য করা নিশ্চয়ই বদ-বখতির কারণ৷ এটা এমন এক দরজা যেখানে বে'আদবী করার কারণে আল্লাহপ্রদত্ত কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবেই তা সুনিশ্চিত। ঐ শুনুন,প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ﷺ এর হুশিয়ারি -“নিশ্চয়ই মানুষ এমন কথাও বলে, যাতে সে কোন ক্ষতি আছে বলে মনে করেনা; অথচ এর জন্যই সে ৭০ বছরের পথ জাহান্নামে অধঃপতিত হয়।”
--- [তিরমিযী, হা/২৩১৪]
.
অতএব বক্তা সাহেবকে বলব - "জবানে লাগাম দিন"।
.
হে আল্লাহ, আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে সালাফী মানহাজ অনুসরণ করার তাওফীক্ব দিন এবং অসাধু বক্তাদের বক্তব্যের ফিতনাহ থেকে আমাদের হিফাযত করুন। আমীন, ইয়া রব্বাল ‘আলামীন।
.
আপনাদের দ্বীনীভাই,
আখতার বিন আমীর।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
No comments:
Post a Comment