Saturday, June 30, 2018

যেসকল শাসক মানব রচিত বিধান দ্বারা বিচার ফয়সালা করে তাদের হুকুম কি? আল্লামাহ আব্দুল আজিব বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহর ফতওয়া পড়ুন

প্রশ্নঃ যে ব্যক্তি ‘শরিয়াহ’ বা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে ‘মানব রচিত আইন’ দিয়ে বিচার-ফয়সালা করে তার ‘হুকুম’ কি?
উত্তরঃ সে ব্যক্তি তার আক্বীদাহ বা বিশ্বাস অনুযায়ী কখনো কাফের (অবিশ্বাসী) বা মুর্তাদ (ধর্ম ত্যাগী) আবার কখনো ফাসেক (পাপীষ্ঠ) ও জালেম (অত্যাচারী) মুসলিম হতে পারে।

মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার বা শাসন করেনা, তারা কাফের।” সুরা আল-মায়ি’দাহঃ আয়াত ৪৪।
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে অস্বীকার করল সে কুফরী করল। আর যে ব্যক্তি তা স্বীকার করল, কিন্তু সে অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করল না, সে যালিম ও ফাসিক।”
তাফসীর ইবনু জারীর, তাফসীর কুরতুবী, তাফসীর ইবনে কাসীর, সুরা মায়িদাহর ৪৪-নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য। তাহকীক দ্রষ্টব্যঃ খালেদ আল-আম্বারী, উসুলুত তাকফীর, পৃঃ ৬৪; ৭৫-৭৬ টীকাসমূহ।
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) আরো বলেছেন,
“তোমরা এ কুফরী দ্বারা যে অর্থ বুঝাতে চাচ্ছ, সেটা নয়। কেননা এটি ঐ কুফরী নয়, যা কোন মুসলমানকে ইসলামের সীমানা থেকে বের করে দেয়। বরং, এর দ্বারা বড় কুফরের চাইতে ছোট কুফুরীকে বুঝাচ্ছে, বড় যুলুমের চাইতে ছোট যুলুম রয়েছে এবং বড় ফিসকের (অবাধ্যতার) চাইতে ছোট ফিসক বুঝানো রয়েছে।”
হাকিমঃ ৩২১৯, ২/৩১৩, সনদ ছহীহ; সুনানে আত-তিরমিযীঃ ২৬৩।

প্র্যখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) ও তাবেয়ী বিদ্বান হাসান বাসরী (রহঃ) বলেছেন,
“এটা মুসলিম, ইয়াহুদী, কাফের সকল প্রকার লোকের জন্য সাধারণ হুকুম যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না। অর্থাৎ যারা বিশ্বাসগতভাবে (আল্লাহর বিধানকে) প্রত্যাখ্যান করে, এবং অন্য বিধান দ্বারা বিচার ও শাসন করাকে হালাল বা বৈধ মনে করে (তারা কাফের বলে গণ্য হবে)। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি উক্ত কাজ (মানব রচিত বা মনগড়া আইন দিয়ে বিচার-ফয়সালা) করে, অথচ বিশ্বাস করে যে সে হারাম কাজ করছে, সে ব্যক্তি মুসলিম কিন্তু ফাসেকদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তার বিষয়টি আল্লাহর উপর ন্যস্ত। তিনি চাইলে তাকে শাস্তি দিবেন, চাইলে তাকে ক্ষমা করবেন।”
তাফসীরে কুরতুবী, সুরা মায়েদাহর ৪৪ নং আয়াতের তাফসীর।

তাবেঈ বিদ্বান ইকরিমা, মুজাহিদ, আত্বা ও তাঊসসহ বিগত ও পরবর্তী যুগের আহলে সুন্নাত বিদ্বানগণের সকলে কাছাকাছি একই ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
সালাফ ও খালাফের ৩৯ জন বিদ্বানের ফৎওয়া দ্রষ্টব্য; উছূলুত তাকফীর ৬৪-৭৪ পৃঃ।

এটাই হল ছাহাবী ও তাবেঈগণের ব্যাখ্যা। যারা হলেন আল্লাহর কিতাব এবং ইসলাম ও কুফর সম্পর্কে উম্মতের সেরা বিদ্বান ও সেরা বিজ্ঞ ব্যক্তি।

সঊদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতী, শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন বা বিচার করেনা, সে ব্যক্তি চারটি বিষয় থেকে মুক্ত নয়ঃ
(১) তার বিশ্বাস মতে মানুষের মনগড়া আইন আল্লাহর আইনের চাইতে উত্তম। অথবা
(২) সেটি শারঈ বিধানের ন্যায়। অথবা
(৩) শারঈ বিধান উত্তম, তবে এটাও জায়েয। এরূপ বিশ্বাস থাকলে সে কাফির এবং মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে যাবে।
#কিন্তু,
(৪) সে যদি বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর বিধান ব্যতীত অন্য কোন বিধান বৈধ নয়। তবে সে অলসতা বা উদাসীনতা বশে বা পরিস্থিতির চাপে এটা করে, তাহলে সেটা ছোট কুফুরী হবে ও সে কবীরা গোনাহগার হবে। কিন্তু মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হবে না।”
খালেদ আল-আম্বারী, উসুলুত তাকফীর, রিয়াদঃ ৩য় সংস্করণ, ১৪১৭ হিঃ, ৭১-৭২।
যেমন হাবশার (ইথিওপিয়া) বাদশাহ নাজাশী ইসলাম কবুল করেছিলেন এবং সে মর্মে রাসূল (সাঃ)-এর প্রেরিত দূতের নিকট তিনি বায়আ’ত নিয়েছিলেন ও পত্র প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু দেশের নাগরিকগণ খ্রিষ্টান হওয়ায় তিনি নিজ দেশে ইসলামী বিধান চালু করতে পারেননি। এজন্য তিনি দায়ী ছিলেন না। বরং পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছিল। সেকারণ ৯ম হিজরীতে তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে রাসুল (সাঃ) সাহাবীগণকে নিয়ে তার গায়েবানা জানাযা পড়েন। কারণ অমুসলিম দেশে তাঁর জানাযা হয়নি।
আবু দাউদঃ ৩২০৪ ‘জানায়েয’ অধ্যায়, ৬২ অনুচ্ছেদ।

No comments:

Post a Comment

আহ্লুস সুন্নাহ

▌বিবাহ : কিছু পরামর্শ - [ করনীয় ও বর্জনীয় ]

❒ প্রারাম্ভিকা, বর্তমানে যুবক যুবতীদের অবস্থা হল, তারা পাপাচার করেও পরিতৃপ্ত হচ্ছে না বরং পাপাচারের নিত্য-নতুন পদ্ধতি খুঁজে বেড়াচ্ছে।...