আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাত্বহ।
প্রিয় দ্বীনী ভাই ও বোনেরা--
গত দুইটি পর্বে আমরা অধিক লিখালিখির ফিতনা লেখকদের জ্ঞানের পরিধ নিয়ে আলোচনা করেছি !
আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি বই রচনার নামে সেসকল লেখকদের দৈনদশার চিত্র!
লেখার প্রতি আকর্ষণের কিছু কারণ :
লেখার প্রতি আকর্ষণের কিছু যৌক্তিক কারণ রয়েছে। যা বর্তমান বেশিরভাগ লেখক যারা আলেম নন, দ্বীনের সঠিক জ্ঞান সঠিক উৎস থেকে অর্জন করেন নি তাদের উৎসাহিত করে থাকে। যেমন :
১) এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় স্থায়ীত্ব পেতে চাইলে এমন কিছু করতে হবে যা আমাদের হায়াতের চেয়েও অধিক সময় এই দুনিয়ায় টিকে থাকবে। তার একটি মাধ্যম হলো লিখনী। ফলে লেখকেরা একটু স্থায়ীত্ব লাভের জন্য কলম হাতে তুলে নেন তথা কি-বোর্ড নামক অস্ত্র চালনা করেন।
২) আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আমাদেরকে দূর্বল করে সৃষ্টি করেছেন। আর শয়তান তার ওয়াসওয়াসা প্রদানে সদা ব্যস্ত। শয়তান অনেককেই নিজের একটু বড়ত্ব, একটু নাম, সম্মান পাওয়ার লোভ মনে জাগ্রত করে তোলে। ফলে মিকিমাউসও গরিলা হয়ে যায়। বিড়ালও নিজেকে বাঘ মনে করতে থাকে।
৩) যারা লেখার যোগ্য তাদের উদাসীনতাও অযোগ্যদের উৎসাহিত করে। যোগ্য ব্যক্তিগণ যে অন্য কাজে ব্যস্ত!!!??
৪) কতিপয় স্বার্থান্বেষী প্রকাশনা নতুন লেখক সামনে আনার নামে অযোগ্য লোকদের চয়ন করে। তারা এই ফিতনার জন্য অনেকাংশেই দায়ী।
৫)
বই রচনার নামে যা করা হয় :
লেখকগণ বই রচনার নামে নিজেদের অজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। সবচেয়ে বড় খারাপ কাজ হল তারা ‘ইলম চুরি ও খিয়ানাত করে থাকেন। যা ছাড়া তারা অহরহ বই রচনা করতেই পারতেন না। একটি বিষয়ে কতিপয় আলেম, তালেবে ‘ইলমদের লিখনী বাংলা বা ইংরেজী ভাষায় অধ্যয়ন করে সেখান থেকে কপি পেস্ট বা সেই আঙ্গিকে রচনা করে থাকেন। ‘ইলম চুরি ও খিয়ানাত হল যথাযথ রেফারেন্স না দেয়া। অন্যের 'ইলমকে নিজের 'ইলম হিসেবে জাহির করা। যা অত্যন্ত বড় মাপের প্রতারণা ও খিয়ানাত।
বই যাতে গ্রহনযোগ্যতা পায় সেজন্যও বিভিন্ন প্রতারণা করা হয়ে থাকে। যেমন : কোন আলেম বা তালেবে 'ইলমের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে, বা তাকে দিয়ে কোন একদিন বইটির দু'এক পাতা দেখিয়ে নিয়ে ব্যস "সম্পাদনা : শায়েখ অমুক", "অমুক শায়েখ শত ব্যস্ততার মাঝেও অধমের বইটি দেখে দিয়েছেন"। নিজের নামের পর "বিশিষ্ট গবেষক ও দাঈ" ইত্যাদি লকবও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
বইতে যা থাকে :
বইতে মূলত থাকে কোন নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের চর্বিতচর্বণ। লেখকভেদে বিষয় ও উপস্থাপনা আলাদা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেউ শুধু কতিপয় আয়াত ও হাদীছ উপস্থাপন করে নিজের বুঝমতো তাফসীর করে "ক্বুরআন সুন্নাহর" আলোকে অমুক বিধানের নামে "নিজের ভ্রান্ত বুঝের" আলোকে ফাতওয়া প্রদান করে থাকেন।
পরিশেষে, যাদের চোখে শুধু সমালোচনাই নজরে পরল তাদের বলছি, যেসব লেখক ক্বুরআন, সুন্নাহ ও সালাফে সালেহীনের সঠিক বুঝ অনুযায়ী কলম ধরেন এবং নির্ভরযোগ্য আলেমদের দিয়ে সম্পাদনা করান তাদের কর্ম নিঃসন্দেহে প্রশংসিত। তবে এমন লেখক কতজন আছেন তাও ভাববার বিষয়!!!???
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তৌফিক দাও। আমীন
আমাদের বুঝা উচিত কুরআন ও হাদীছের অনুবাদ পড়ে কেউ আলিম, গবেষক, দাঈ বা তালেবে ইলমও হয়ে যায় না।
একটি অনুবাদ কখনই শতভাগ সঠিক ও যথাযথ নয়। দাওয়াত প্রদানের যে সাধারণ জিম্মা প্রত্যেক মুসলিমের আছে তা আমরা পালন করবো।
ইখতিলাফী মাসআলায় অনুবাদ পড়ে ফায়সালা তো দূরে থাক, কথা বলাই যায় না।
তার উপর কিছু হাদীছ বা কয়েকটি হাদীছের কিতাবের বঙ্গানুবাদ পড়েই কোন বিষয়ে এর দলীল নেই বলা গোমরাহী। এমন হাদীছ গ্রন্থ আছে যেগুলোর নামও আমরা জানি না। অথচ তাতে সহীহ হাদীছ বিদ্যমান।
হাতে গোনা কয়েকটা হাদীছ গ্রন্থ পড়ে জ্ঞানী ভাবাটা বোকামী।
তার উপর একটি অনুবাদ দেখেই কোন বিষয়ে কথা বলা যায় না। একাধিক অনুবাদ দেখা উচিত।
শয়তান নানাভাবে আমাদের গোমরাহ করার চেষ্টা করে। অনূদিত ক্বুরআন ও হাদীছ যেমন হিদায়াতের কারণ অনুরূপ গোমরাহীরও। তাই প্রয়োজন সতর্কতা।
যে কোন মাসআলা শেয়ার করার ক্ষেত্রে যথাযথ রেফারেন্স তা কোন বই থেকে হোক বা কোন আলিমের বক্তব্যের হোক তা দেয়া জরুরী।
অনূদিত গ্রন্থসমূহ আমাদের আওয়ামদের দলীল খুঁজে পেতে, হালাল হারাম জানতে, মাসআলার ভিত্তি সম্পর্কে ধারণা দেয় মাত্র।
No comments:
Post a Comment