বর্তমান ইসলামী লেখকদের হালচাল

আসসালা-মু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু।
প্রিয় দ্বীনী ভাই ও বোনেরা-----
---

নিঃসন্দেহে লিখনী হাক্ব প্রচারের এক শক্তিশালী ও উপকারী মাধ্যম। পবিত্র ক্বুরআন, হাদীছ, তাফসীরের কিতাবাদি, হাদীছগ্রন্থের ব্যাখ্যাগ্রন্থ সমূহ, উসূলে হাদীছ, আসমাউর রিজাল, ইতিহাস প্রভৃতি সকল কিছুই আমরা লিখিত আকারে পেয়েছি। লিখনীর মাধ্যমে হাক্ব প্রচার ও বাতিলকে রাদ্দ করা সালাফদের সুন্নাহ।
বর্তমান সময়ে লিখনী মানেই সালাফ ও খালাফদের কিতাব থেকে নকল বা সংকলন করা। কারণ তাদের মাধ্যমেই দ্বীন আমাদের নিকট পৌঁছেছে। স্বর্ণযুগের মানুষ যারা ছিলেন এবং তাদের নিকটবর্তী সময়ের মানুষগুলো নিঃসন্দেহে বর্তমান সময়ের মানুষের চেয়ে দ্বীন বেশি বুঝতেন এবং আমল করতেন।
তাই এখনকার সময়ের দাবীই হচ্ছে যথাযথ আমানত রক্ষা করে, হাওয়ালা বা রেফারেন্স প্রদান করে লেখা বা সংকলন করা। যেসব লেখকগণ যথাযথ আমানত রক্ষা এবং যাচাইয়ের মাধ্যমে বই/লিখনী প্রকাশ করেন তাদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যথাযথ প্রতিদান দিন। আমীন!

বর্তমান ইসলামী লেখকদের অবস্থা :

বর্তমানে সহীহ আক্বীদার বইয়ের বাজারে বইয়ের অভাব নেই। যেসব বিষয়ে বইয়ের প্রয়োজন সেসব বিষয় যেমন বিশুদ্ধ আক্বীদাহ, সঠিক মানহাজ, বাস্তব জীবনে ইসলাম চর্চা ইত্যাদি বিষয়ে বইয়ের বেশ অভাব রয়েছে। তবে সময়ের সাথে সাথে কিছু উপকারী বই বাজারে আসছে আলহামদুলিল্লাহ। অথচ কিছু নির্দিষ্ট ইবাদাতের উপর যেমন সালাত, সিয়াম, নির্দিষ্ট কিছু সুন্নাহর উপর আলেম-জাহেল পাল্লা দিয়ে বই প্রকাশ করছে।

লেখকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভরংও চমৎকার। যেমন : ইসলামের ইতিহাসে অনার্স, এমবিবিএস, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স, বুয়েট -কুয়েট -রুয়েটের শিক্ষানবীশ, অমুক বিষয়ে পিএইচডি ইত্যাদি। আলেমদের নজরে বাংলা হল 'ইলমের মরুভূমি। এই মরুভূমির বেদুইনরা কিছু বাংলা, ইংরেজী বই পড়ে, কিছু আরবী গ্রামার শিখে, দু'একটা বাংলা ইংলিশ বক্তব্য শুনে, অনলাইন থেকে প্রয়োজনীয় আয়াত হাদীছের আরবী ইবারাতের কপি নিয়ে নেমে পরেছেন 'বাল্লিগু আন্নি ওলাও আয়াহ' এর আমল করার জন্য। তারা খুব বড় গুরুদায়িত্ব স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বুঝতে পারছেন না যে ঘাড় মটকে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এরূপ স্বশিক্ষিত মুজতাহিদদের থেকে সাবধান হোন।
সম্মানিত লেখকগণ নিজেদের বইতে নিজেদের অপরিপক্ক বুঝের সমাবেশ ঘটান। অনেকের উপস্থাপনা যৌক্তিক ও চমকপ্রদ হয় বলে আমরা সাধারণ মানুষরা অনেক বড় কিছু মনে করে বসি। ফলে তাদেরকে মুজতাহিদের স্থানে বসিয়ে তাদের কাছ থেকে ফাতওয়া নিই। আর তারা 'এটা আমার মত', 'আমি এ বিষয়ে ইজতিহাদ/তাহক্বীক্ব করেছি' বলে মূলত ফিতনায় পতিত হচ্ছেন আমাদেরও ফিতনায় ফেলছেন।
সম্মানিত লেখকদের গবেষণাগার তাদের কুটির এবং সেইসব থিসিস তারা ফেসবুক, ব্লগ এবং সুযোগ সামর্থ্য হলে বই আকারে আমাদেরকে উপহার দিয়ে থাকেন।
আল্লাহই সাহায্যস্থল!

ক্বিয়ামাতের একটি আলামাত হল লেখালেখি বৃদ্ধি পাওয়া :

ইমাম আহমাদ رحمه الله “মুসনাদ” এ বর্ণনা করেন (হা/৩৮৭০),
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস'উদ رضى الله عنه বলেন, রাসূলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم বলেছেন : “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামাতের পূর্বে … وَظُهُورَ الْقَلَمِ - ক্বলম প্রকাশিত হবে।”
হাদীছটিকে শায়েখ শুআইব আরনাউত হাসান ও আহমাদ শাকের সহীহ বলেছেন।
ইমাম বুখারী رحمه الله “আদাবুল মুফরাদ” এ বর্ণনা করেন (হা/১০৬২), وَفُشُوُّ الْقَلَمِ، - “.....ক্বলম চর্চার বহুল প্রচলন ঘটবে।”
হাদীছটিকে শায়েখ আলবানী হাসান বলেছেন।

ড.আব্দুর রহমান আরিফী ﺣﻔﻈﮧ ﺍﻟﻠﮧ হাদীছটির আলোচনায় বলেন (মহাপ্রলয়, পৃঃ ৯১), “আগের যুগে লেখালেখি এবং প্রচার মাধ্যম এতো ব্যাপক ছিল না। একটি গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কত কষ্ট, কত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হত। কিন্তু এখন...! প্রেক্ষাপট কত বদলে গেছে। অধিক লেখালেখি, বই পুস্তক প্রকাশ এবং কলামিস্টদের আধিক্যকে নবী করীম صلى الله عليه وسلم ক্বিয়ামাতের  নিদর্শনরূপে চিহ্নিত করেছেন।
"ক্বলম প্রকাশ"- বলতে সম্ভবত লেখালেখি এবং অধিক হারে বই পুস্তক প্রকাশের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। প্রকাশনা এবং ছাপানোর জন্য অত্যাধুনিক মেশিন আবিষ্কার ও মাধ্যম সহজ হওয়ার ফলে যে কেউ চাইলেই পুস্তক প্রকাশ করতে পারবে। এতকিছুর পরও দ্বীনি এবং ইসলামী শিক্ষায় মানুষের মধ্যে মূর্খতা প্রকাশ পাবে।”

আমাদের আলোচ্য হাদীছ যে ব্যাপকভাবে লেখালেখি কে অন্তর্ভুক্ত করে তা শায়েখের আলোচনাতে স্পষ্ট। বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া, অনলাইন ব্লগ, পোর্টাল, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আজ লেখার ব্যাপক ছড়াছড়ি। যার মূল অস্ত্র হচ্ছে কি-বোর্ড আর কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিন। তবে আমাদের আলোচ্য লেখকগণ ধর্মীয় বিষয়ে লিখেন। আমাদের কাউকে কষ্ট দেওয়া মোটেও উদ্দেশ্য নয়। বরং সেইসব লেখক ও পাঠকদের সতর্ক করা ও সঠিক উৎস থেকে 'ইলম অর্জনের জন্য উৎসাহিত করা, পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরার আহবান।

কলাম-- মুহাম্মদ মাহিন আলম
®আগামীকাল থাকছে "বই রচনার নামে যা হচ্ছে"
গতকালের প্রথম পর্বটি পড়তে ক্লিক করুণ  ---https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1012096108951141&id=100004522838130