আব্দুল মালিক সাহেব অভিযোগ করেছিলেন আলবানী (রহঃ)- মুরসালের পরিভাষা বুঝতেন না তাই এমন এক হাদীসকে যঈফ বলেছেন যা সহীহ। সরাসরি আব্দুল মালেক সাহেবের ভাষা দেখুন! " ‘মুরসাল’এর পারিভাষিক ব্যবহার-সমূহের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারায় এমন একটি হাদীসকে মুরসাল আখ্যা দিয়ে তাকে ‘যয়ীফ’ সাব্যস্ত করেছেন যা ‘সহীহ’ ও ‘মামূলবিহী’ হওয়ার ব্যাপারে ‘খাইরুল কুরূন’ এবং পরবর্তী সময়ে সমগ্র উম্মাহর ইজমা রয়েছে।"
এর জবাবে আমরা বলেছিলাম আলবানী (রহঃ) এই হাদীসকে যঈফ বলেননি বরং সহীহ বলেছেন। আমাদের এই দাবীর জবাবে মাসুদ ভাই যে জবাব দিয়েছিলেন তা তার ভাষাতেই পেশ করি, , " পোস্টদাতা ইরওয়াউল গলীল খুলে আলোচনাটা ভালো করে দেখেন নি বোধহয়। মাত্র ছয় সাত লাইনের পুরো আলোচনাটা পড়লে তিনি ভুলটা করতেন না। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, ইরওয়ার ১২২ নং হাদিসটা মুত্তাসিল হবার কারণে সহিহ। তবে মেশকাতে বর্ণিত (৪৬৫ নং হাদিস) এই বিষয়ের হাদিসটি মুরসাল হবার কারণে যঈফ।"
আমরা তার এই কথার জবাব কয়েকভাবে দিব। ইনশাআল্লাহ।
প্রথমতঃ যদি মাসুদ ভাইয়ের কথা মেনেও নিই তবুও বলতে হয়, এই হাদীসের উপর সমষ্টিগত যে হুকুমটি আলবানী লাগিয়েছেন তা ‘সহীহ’। এই কথাটা আপনিও স্বীকার করেছেন। আমার কথা হচ্ছে মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব যখন ছয় সাত লাইন অতিক্রম করে যঈফ হুকুমটা বের করতে পেরেছেন তাহলে অবশ্যই তিনি আলাদা করে লেখা মূল হুকুম ‘সহীহ’ এটা অবশ্যই দেখেছেন। তাহলে কেন তিনি মূল হুকুম গোপন করে শুধু একটি লাইন থেকে যঈফ হুকুমটি উঠিয়ে দিলেন। তার কি উচিৎ ছিল না এই কথা বলা যে, ‘ আলবানী রহঃ এই হাদীসকে মুরসাল হিসেবে যঈফ বললেও সমষ্টিগত ভাবে সহীহ বলেছেন’। এটা কি ইলমী আমানাতের দাবী নয়? এখানে তো আর এই কথা বলে পার পাওয়া যাবেনা যে, এটা আলবানী (রহঃ)-এর মতপরিবর্তন এই জন্য আব্দুল মালেক সাহেব জানতে পারেননি। এটা তো নিঃসন্দেহে তথ্য গোপন করা যা একজন আলেমের শানে মানায়না।
দ্বিতীয়তঃ মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব মুরসালে পরিভাষাগত ব্যবহার বলতে কি বুঝাচ্ছেন? তিনি দু‘টি উদ্দেশ্যে নিতে পারেন। প্রথমত পারিভাষিক ভাবে মুরসাল কাকে বলে এটা আলবানী রহঃ জানেন না তাই এই হাদীসকে মুরসাল বলে যঈফ বলেছেন। এর জবাবে আমরা বলব,
মুরসালের পারিভাষিক সংগা দিতে গিয়ে মাওলানার উস্তাদের তাহক্বীক কৃত "কাওয়ায়েদ ফী উলূমিল হাদীস, পৃষ্ঠা ৩৯"তে বলা হয়েছে ও মাওলানার ছাত্র মাওলানা আলমগীর "শারহু নুখবাতিল ফিকর পৃষ্ঠা ১৫৫" তে বলেছেন, তাবেয়ী সাহাবীর নাম বাদ দিয়ে সরাসরি রাসূল স. থেকে বর্ণনা করবেন। উক্ত হাদীসটিও আব্দুল্লাহ বিন আবু বাকর বিন হাযম সরাসরি রাসূল (স:) থেকে বর্ণনা করেছেন।আর আব্দুল্লাহ বিন আবু বাকর বিন হাযমের ব্যাপারে আসকালানী বলেছেন, তিনি ছোট তাবেয়ীদের অন্তর্গত। (তাকরীব, রাবী নাম্বার ৩২৫৬) এখন বলুন, মাওলানার ছাত্র, শিক্ষকও কী মুরসাল বুঝতে ভুল করেছেন? আর তিনি শুধুমাত্র মুরসাল বুঝেছেন?
আলবানী (রহঃ) মুরসালের পারিভাষিক ব্যবহার বুঝেননা এই দাবীর দ্বারা দ্বিতীয় যে উদ্দেশ্য আব্দুল মালেক সাহেব নিতে পারেন তা হচ্ছে, আলবানী (রহঃ) এখানে যে হাদীসটিকে মুরসাল হিসেবে যঈফ বলছেন তা একটি প্রসিদ্ধ চিঠি বা সহীফার অংশ। দুনিয়ার অনেক মুহাদ্দিস এই সহীফা মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হওয়ার পরেও গ্রহণ করে নিয়েছেন। যেমনটা ইবনু আব্দিল বার বলেছেন যে, ‘এটাকে আলেমগণ গ্রহণ করেছেন’। তাহলে কিভাবে এই সহীফা বা চিঠির একটি হাদীসকে আলবানী (রহঃ) মুরসাল বলে যঈফ বলতে পারেন। এর জবাবে আমরা বলব,
এই হাদীস শুধুমাত্র আলবানী (রহ:) মুরসাল বলেননি। অন্যান্য মুহাদ্দিসও মুরসাল বলেছেন।যেমন: ক) ইমাম আবু দাঊদ 'কিতাবুল মারাসীল' এ উল্লেখ করেছেন। খ) ইমাম বাইহাকী।(আস-সুনানুল কুবরা, হা/১৫৩৪,১৬৩০৮) গ) ইবনুল মুলাক্কিন।(আল-বাদরুল মুনীর ৮/৩৮০) ঘ) ইবনে তুরকমানী। তিনি মুনকাতি' বলেছেন। আর মুনকাতি' দ্বারা মুরসাল বুঝিয়েছেন। (আল-জাওহারুন নাকী ১/৮৭) মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেবের কথা মতো এ সকল মুহাদ্দিসও কি মুরসালের পরিভাষা বুঝতে পারেননি? যেহেতু এই সকল মুহাদ্দিস মুরসাল আখ্যা দিয়েছেন, সেহেতু তাদের কাছেও এটি সানাদগতভাবে জঈফ। কেননা মুহাদ্দিসীনের কাছে মুরসাল হাদীস জঈফ। তাছাড়া আসকালানী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, এই চিঠিকে একদল মুহাদ্দিস সহীহ বলেছেন।সানাদের দিক থেকে নয়; বরং প্রসিদ্ধতার দিক থেকে।(আত-তালখীস ৪/৫৮)তার মানে সবার মতেই সানাদগতভাবে এই চিঠি জঈফ। ইবনে মুলাক্কিন বলেছেন: এই হাদীসকে মুরসালের কারণে ত্রুটিপূর্ণ করা হয়।(আল-বাদরুল মুনীর ৮/৩৮৪) ইমাম ইবনু হাযম বলেছেন:আমর বিন হাযমের চিঠি মুনকাতি'। দলীল যোগ্য নয়।(আল-বাদরুল মুনীর ৮/৩৮২) তাহলে বুঝা গেলো আলবানী (রহ:) একাই মুরসাল ও জঈফ বলেননি। তাঁর পূর্বেও মুরসাল ও জঈফ বলা হয়েছে।মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেবের বক্তব্য অনুযায়ী উল্লেখিত মুহাদ্দিসগণ মুরসালের পরিভাষা বুঝেননি।তাই জঈফ বলেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ)
এবার বলতে পারেন, মুহাদ্দিছগণ মুরসাল হিসেবে যঈফ বললেও তারা এই চিঠির হাদীসগুলো গ্রহণ করেছেন।
আমরা এর জবাবে বলব, আলবানী (রহঃ) মুহাদ্দিসগণের মত এই হাদীসকে মুরসাল হিসেবে যঈফ বললেও বিভিন্ন সানাদ থেকে আসার কারণে সমষ্টিগত ভাবে ‘সহীহ’ বলেছেন। যা আব্দুল মালেক সাহেব আলবানী (রহঃ)-কে ইচ্ছাকৃত ভাবে জাহেল প্রমাণ করার জন্য তার লেখায় গোপন করেছিলেন। সুতরাং আলবানী রহঃ –এর মন্তব্য সার্বিক দিক থেকে মুহাদ্দিসগণের মুরসালের পরিভাষাগত ব্যবহারের সাথে সংগতি পূর্ণ। হয় আব্দুল মালেক সাহেব নিজেই মুরসালের পরিভাষাগত ব্যবহার বুঝেননি। অথবা বুঝলেও প্রতিহিংসা বশত আলবানী রহঃ-এর বিরুদ্ধে লিখেছেন এবং তথ্য গোপন করেছেন।
No comments:
Post a Comment